অর্ণব আইচ: এ যেন এক রহস্য। এই রাজ্যে করোনা এখনও ছুঁতে পারেনি সিআরপিএফকে। ইতিমধ্যেই পুলিশ বাহিনীর অনেকে করোনা আক্রান্ত। বিএসএফের অন্তত ১০ জনের শরীরে পাওয়া গিয়েছে এই ভাইরাস। মৃত্যু হয়েছে দুই সিআইএসএফ অফিসারের। সেখানে সিআরপিএফের কর্তাদের মতে, তাঁদের প্রত্যেকটি ব্যারাকে জওয়ান ও অফিসারদের এমন ডায়েট দেওয়া হচ্ছে, যা থেকে শরীর প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম। আর প্রতিনিয়ত এই পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ফলেই আলাদা করে খেতে হচ্ছে না কোনও ওষুধ। এটাই রহস্যের মূল চাবিকাঠি। এছাড়াও যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, জওয়ানদের অন্তত ৩০ মিনিট টানা ব্যায়াম করে যেতে হবে। কর্তাদের নির্দেশ এমনই।
যদিও করোনার ব্যাপারে কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় এই কেন্দ্রীয় বাহিনী। কারণ ছুটি শেষ করে বিভিন্ন রাজ্য থেকে কলকাতায় কাজে যোগ দিতে আসবেন অফিসার ও জওয়ানরা। সেই সময়ও এসে গিয়েছে। এই রাজ্যের সিআরপিএফের আইজি বিবেক বৈদ জানান, এখনও পর্যন্ত এই রাজ্যে তাঁদের বাহিনীর কেউ করোনা আক্রান্ত হননি। তবু বাইরে থেকে যাঁরা ডিউটিতে যোগ দিতে আসবেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজারহাটে বাহিনীর একটি বাড়ি আছে, সেখানেই এখন তৈরি হচ্ছে সিআরপিএফের নিজস্ব একটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। সেখানে থাকছে দেড়শোটি বেড। বাইরে থেকে আসা জওয়ান ও অফিসারদের প্রথমে এই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকতে হবে। প্রয়োজনে তাঁদের লালারস পরীক্ষা করা হবে। চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত তাঁদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখবেন। কোয়ারেন্টাইনের শেষে চিকিৎসকদের অনুমতি পেলে তবেই তাঁরা কাজে যোগ দিতে পারবেন।
[আরও পড়ুন: মু্ম্বই-সহ মহারাষ্ট্রের হটস্পটে বাড়তে পারে লকডাউন, চলবে ৩১ মে পর্যন্ত]
সিআরপিএফের সূত্র জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত অন্তত হাজার তিনেক জওয়ান ও অফিসার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় ডিউটি করছেন। জঙ্গলমহলকে করোনা সেভাবে স্পর্শ করতে পারেনি। তাই মাওবাদী দমনে ওই অঞ্চলে ডিউটিরত সিআরপিএফ কর্মীরা সুস্থই রয়েছেন। এছাড়া জওয়ানদের একটি অংশ ভিআইপি ডিউটিতে রয়েছেন। লকডাউনের মধ্যে ভিআইপিরা বিশেষ বাইরে বের হচ্ছেন না। তাই তাঁদের নিরাপত্তারক্ষীদেরও বাইরে বের হতে হচ্ছে না। রাজভবনে যাঁরা
ডিউটি করছেন, তাঁদেরও একই অবস্থা। এছাড়া অন্য কর্মী ও অফিসাররা রয়েছেন সল্টলেকের দুটি ও পোস্তার ব্যারাকেও। সিআরপিএফের এক আধিকারিক জানান, যতটা সম্ভব তাঁরা ‘লক অ্যান্ড কি’-র মধ্যেই থাকছেন। মিশছেন না বাইরের কারও সঙ্গে। এভাবে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বাহিনীর এক কর্তা জানান, প্রত্যেককে বলা হয়েছে তাঁরা যেন সকাল ও বিকেলে যখনই সময় পাবেন, অন্তত ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করেন। সঙ্গে যোগাসন বা প্রাণায়াম। এছাড়া বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে ব্যারাকে জওয়ানদের খাদ্যাভ্যাসের উপর। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কমিয়ে দিয়ে প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা সম্পূর্ণ নিরামিষাশী, তাঁরা বেশি পরিমাণ ডাল ও সোয়াবিন খাচ্ছেন। বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ ও দই খাওয়ার উপর।
প্রত্যেকের মেনুতে বাড়ানো হয়েছে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার। মোসাম্বি ও পাতিলেবু খাওয়া আবশ্যিক করা হয়েছে। সঙ্গে থাকছে শুকনো ফলও। প্রত্যেকদিন বিকেলে নিয়ম করে দেওয়া শুরু হচ্ছে লেবুজল। সিআরপিএফের আইজির কথায়, প্রত্যেকদিন জওয়ান ও অফিসারদের মেনুতে এমন খাবার থাকছে, যা থেকে বাড়বে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা। আলাদা করে ওষুধ খাওয়ার চেয়ে এই ব্যবস্থা কম কার্যকর নয়। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে অস্ত্রধারী জওয়ানদের এই অস্ত্রগুলিই সম্বল বলে জানিয়েছে সিআরপিএফ।
[আরও পড়ুন: একদিনে সংক্রমিত প্রায় ৪ হাজার, আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে চিনকে ছোঁয়ার মুখে ভারত]
The post ডায়েটের প্রতিরোধ ক্ষমতায় লুকিয়ে রহস্যের চাবিকাঠি, এ রাজ্যে CRPF-কে ছুঁতে পারল না করোনা appeared first on Sangbad Pratidin.