চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ঘটনা এক, ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছিল মেয়েটার। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাড়ি ফিরে এসেছিল সে। ঘরকন্নার কাজটা ভালই জানত মুখচোরা মেয়েটা। বরের সঙ্গেই বনিবনাও ভাল ছিল। তাহলে কী এমন হল?
[বিজেপির কার্যালয় গড়তে বাড়ি দখল, ভিটেমাটি হারিয়ে ধরনায় অসমের পরিবার]
ঘটনা দুই, প্রেম করেই ভটচণ্ডি গ্রামে বিয়েটা করেছিল আদিবাসী পরিবারের মেয়ে বুঁদি। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। হাতে-পায়ে ধরেও ফেরানো যায়নি আর। কিন্তু সমস্যা কী ছিল? দু’টো প্রশ্নের উত্তরই এক। ঝুঁড়ি বুনতে না জানা। এটা কোনও গল্প বা সিনেমা নয়। বাস্তব। আসানসোল-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে আদিবাসী গ্রামগুলিতে ঝুড়ি বুনতে না জানাই বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণ। তাই আসানসোল-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের একরত্তি গ্রাম বোধবাঁধ বা কুলটির কুলতোড়ার মেয়েদের লক্ষ্মীর আলপনা দেওয়া বা রান্না করা না শিখলেও ঝুড়ি বাঁধার কাজটা শিখে ফেলতে হয়। তাদের মামলা আদালত পর্যন্ত গড়ায় না। নিজেদের আইনে বউকে তাড়িয়ে দেয় তাঁরা।
এলাকার কুটির শিল্প বলুন বা জীবিকা, স্থানীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি ঝুড়ি বোনা। নিজেদের পুঁজি নেই। পয়সা লাগান ব্যবসায়ীরা বা মহাজনরা। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ঝুড়ি বোনেন মেয়েরা। পুরুষদের কাজ বাঁশ কেটে আনা, ফালা করা। আদি সাঁওতাল পরগনার মাহালিরা পুরুষানুক্রমে এই কাজই করে আসছেন। অনেকেই পেটের দায়ে বা সচ্ছলতার টানে পুরানো পেশা ছাড়লেও মাহালিরা ব্যতিক্রম।
[ফুল বেচে সংসার চালানো, অভাব হারিয়ে সাফল্যের ফুল ফোটাচ্ছে প্রিয়াঙ্কা]
গ্রামের বাসিন্দা অমল মাহালি জানান, বিয়ের পর তাঁর বউকে ছাড়তে হয়েছিল ঝুড়ি না বুনতে পারার জন্য। তবে এক বছর পর সব ঠিক হয়ে যায়, তাঁর স্ত্রীও এখন সংসার করছেন আবার ঝুড়িও বুনছেন। হাতের কাজ করতে করতে নীলু মাহালি আঙুল তুলে মাথার চুলে জট, পরনে ময়লা কাপড়ের এক মহিলাকে দেখালেন। বললেন, “ওর নাম বুঁদি। পাশের ভটচন্ডি গ্রামে বুঁদির বিয়ে হয়েছিল বছর দশেক আগে। কিন্তু বাড়ির সব কাজ শেখা থাকলেও ঝুড়ি বোনাটা কিছুতেই শিখে উঠতে পারেনি। তাই সংসার আর তার করা হয়নি। স্বামী ওকে ছেড়ে দেয়। তারপর থেকেই মাথাটা একটু একটু করে খারাপ হয়ে গিয়েছে। এখন এর বাড়ি ওর বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। আর হাঁ করে অন্য মেয়ে-বউদের ঝুড়ি বোনা দেখে।
ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়
The post ঝুড়ি না বুনলেই ডিভোর্স! আজব গ্রামের আজব কাহিনি appeared first on Sangbad Pratidin.