সৈকত মাইতি, হলদিয়া: রাজনৈতিক সমীকরণে বড় বাঁক হলদি নদীর তীরে। একদা ভূমি আন্দোলনে শাসকদল বামেদের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠা নন্দীগ্রামে এবার কেন্দ্রীয় শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী বিজেপিরই একদা সেনাপতি ও সৈনিকরা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, এখানকার বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) ‘একনায়কতন্ত্রে’র অভিযোগ তুলে বিজেপি ছেড়ে তাঁরা যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে।
নভেম্বরের শুরুতে, রাত পোহালে শুক্রবার এখানকার গোকুলনগরের মহেশপুরে রাজ্যের শাসকদলের সভায় সেই জয়দেব দাস ও বটকৃষ্ণ দাস তো থাকছেনই, তৃণমূলে (TMC) যোগ দিচ্ছেন আরও কয়েকশো কর্মী। যাঁরা একসময় শুভেন্দুবাবুকে জেতাতে দিনরাত এক করেছিলেন। পরে ব্রাত্য হয়েছেন শুধু নয়, যাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে অধিকারী পরিবারের পাশে ছিলেন, তাঁদেরই নেতা হিসাবে মানতে বাধ্য হয়েছেন। বুধবার নন্দীগ্রামে (Nandigram) নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: চেন্নাইয়ে রাজ্যপাল লা গণেশনের পারিবারিক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী, কথা রজনীকান্তের সঙ্গে]
শুক্রবার গোকুলনগরের মহেশপুরের সভায় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেবেন প্রায় ১০০০ বিজেপি নেতা, কর্মী, সমর্থক। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলেও বিজেপি (BJP) বিদ্রোহী শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে। আর সেই যোগদান পর্ব ঘিরে নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস শিবিরে সাজ সাজ রব। বুধবার দফায় দফায় ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে মিটিং হয়েছে। নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ আলরাজি, সামসুল ইসলাম সহ বহু নেতা-কর্মী হাজির ছিলেন জরুরি সভায়। শুক্রবার থাকবেন স্থানীয় নেতা জেলার চেয়ারম্যান পীযূষ ভুঁইঞা, সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান। অর্থাৎ নয়া নেতৃত্ব কাজ করবে পুরনোদের পরামর্শ নিয়ে। বিজেপি দলত্যাগী জয়দেব দাস জানান, ‘‘এখন নন্দীগ্রামে বিজেপিতে ধস নেমেছে। ওদের কিছু করার নেই।’’
[আরও পড়ুন: ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে যুবক, পাশে সংজ্ঞাহীন লিভ ইন পার্টনার, সল্টলেকে তীব্র চাঞ্চল্য]
বিজেপি শিবিরে এই বিদ্রোহের আগুন কেবল গোকুলনগর মহেশপুরে সীমাবদ্ধ নেই। স্থানীয় হরিপুর, ভেকুটিয়া, সোনাচূড়া, গড়চক্রবেড়িয়া, কালীচরণপুর, বয়াল, আহমেদাবাদ, ঘোলপুকুরিয়া-সহ বহু জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিদ্রোহীদের একাংশ ক্ষোভ উগরে বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী এর জন্য দায়ী। আমরা অনেকবার নানা সমস্যার কথা জানিয়েও সাড়া পাইনি।’’ বিদ্রোহী শিবিরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নন্দীগ্রাম তৃণমূল কংগ্রেস কমিটি। কমিটির পক্ষে সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের মানুষ লড়াই জানেন। নেতাও চেনেন। শুভেন্দু অধিকারীর মিথ্যাচারের যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত নন্দীগ্রাম।’’ এককথায় বিজেপি ও শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এ যেন ‘নভেম্বর বিপ্লব’ জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে রক্ত ঝরানো মাটিতে।