অর্ণব আইচ: কালীপুজোর চাঁদা বাবদ ১০ হাজার টাকা আদায় করতে গাড়িচালকের বেতন লুটের ঘটনায় অভিযুক্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। তাদের আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে বিস্তারিত জেরার পরিকল্পনা হরিদেবপুর থানার (Haridevpur PS) পুলিশের। এই তিনজনই এক পুজো কমিটির সদস্য এবং লুটের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের।
ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন রাতে হরিদেবপুর থানা এলাকার মল্লিকপুরের রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পেশায় গাড়িচালক অজয় মিশ্র। সেদিন তিনি মাসের বেতন বাবদ ১৮,১৮০ টাকা হাতে পেয়েছিলেন। আচমকা জনা দশেক দুষ্কৃতী তাঁকে ঘিরে ধরে কালীপুজোর চাঁদা চায় বলে অভিযোগ। ২৫০ টাকা চাঁদা দেবেন বলে অজয় তাঁদের কথা দেন। কিন্তু পুজো কমিটির সদস্যদের দাবি, ২৫০ টাকা নয়, ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে অজয়কে। তিনি জানান যে এত টাকা চাঁদা দেওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। অভিযোগ, তা শুনেই ওই ক্লাব সদস্যরা তাঁকে মারধর শুরু করেন। তিনি প্রাথমিক ধাক্কা সামলে পকেট থেকে ২৫০ টাকা বের করে তাঁদের হাতে দিতে গেলে, কেউ একজন তাঁর মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে। অজয় জখম হয়ে মাটিতে পড়ে যান। জ্ঞান হারানোর ঠিক আগেই বুঝতে পারেন যে তাঁর পকেট থেকে বেতনের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ‘তৃণমূলের অবস্থা বাঁধাকপির মতো, পাতা ছাড়াতে ছাড়াতে দু’জন পড়ে থাকবে’, তোপ দিলীপের]
পরবর্তী সময়ে জ্ঞান ফিরে এলে অজয় পকেটে হাত দিয়ে বুঝতে পারেন যে তাঁর বেতনের মোট ১৮ হাজার ১৮০টাকাই উধাও। অর্থাৎ চাঁদার ১০ টাকার জন্য গোটা মাসের বেতনটাই লুট করে চম্পট দিয়েছে পুজো কমিটির সদস্যরা। তিনি পরেরদিন প্রতিবেশীদের গোটা ঘটনা জানিয়ে তাঁদের সাহায্যে হরিদেবপুর থানায় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, অজয়বাবুর থেকে টাকা লুটের ঘটনায় জড়িতরা সকলেই পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্তদের খোঁজ পায়নি পুলিশ। রবিবার তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
[আরও পড়ুন: সৌজন্যে হ্যাম রেডিও, ৭৩০ দিন পর ছেলের মুখ দেখতে পেলেন পঁচাত্তরের বৃদ্ধা]
এমনিতে কোনও পুজো বা উৎসব উপলক্ষে চাঁদা আদায়ের জন্য জুলুমবাজি অপরাধ। পুলিশের তরফে এ নিয়ে বারবার প্রচার হয়। জোর করে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিও হয়। কিন্তু সেসবেও যে জুলুমবাজি কমেনি, হরিদেবপুরের এই ঘটনাই তার প্রমাণ। যে অমানবিকভাবে গোটা মাসের বেতন লুট করে চাঁদা আদায় করা হয়েছে অজয় মিশ্র নামে এক সাধারণ নাগরিকের থেকে, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না প্রতিবেশীরা। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন তাঁরা।