বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: নামেই আদর। অথচ সেই আদরের মধ্যে নৃশংসতার স্পষ্ট ছাপ। আর তা দেখে নিজেদের আনন্দ উপভোগ করা। পথের একটি সারমেয়কে ‘আদর’ করার নামে ধরে ব্রিজ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল নদীর জলে। পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছিল তিন যুবক। যদিও শেষপর্যন্ত অবশ্য পুলিশের জালে ধরা পড়ল তিন অভিযুক্ত।
জানা গিয়েছে, সারমেয়টিকে ব্রিজের ওপর থেকে চূর্ণী নদীর জলে ফেলে দিয়ে নিজেরাই তার ভিডিও করেছিল। এরপর সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয় তারাই। যদিও পশুপ্রেমী মানুষেরা পথের একটি সারমেয়ের সঙ্গে এমন নৃশংসতার ভিডিও দেখে নিন্দার ঝড় তোলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিও নজরে পড়ে পুলিশেরও। এরপর নদিয়ার (Nadia) রানাঘাট (Ranaghat) থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করে। চিহ্নিত করা হয় তিন যুবককে। এরপর পশুদের ওপর নৃশংসতার আইনে অভিযুক্ত তিন যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রবিবার তাদের রানাঘাট মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
[আরও পড়ুন: নন্দীগ্রাম এখন থেকে মমতাময়ী নগর, নামবদলের সিদ্ধান্তে খুশি বাসিন্দারা]
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ওই তিন যুবকের নাম মনোজ সরকার, সোনা সাহানি ও সুমন সিংহ। তাদের বাড়ি রানাঘাট থানার আইশতলায়। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। ঘটনাটি ঘটেছিল মহালয়ার রাতে রানাঘাট পালচৌধুরী হাইস্কুলের সামনে চূর্ণী নদীর ফুট ব্রিজের ওপরে। মহালয়ার রাতে পিকনিক করে মদ্যপ অবস্থায় ছিল ওই তিন যুবক। এরপর তারা চলে গিয়েছিল চূর্ণী নদীর ফুট ব্রিজের ওপরে। সেই সময় তাদের নজর পড়ে পথের একটি সারমেয়ের ওপর। আদর করার নামে তারা ওই সারমেয়টিকে কোলে তুলে নেয়। এরপর ওই ফুট ব্রিজের ওপর থেকে সারমেয়টিকে চূর্ণী নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। যদিও নিজেদের পরিকল্পনামাফিক নৃশংস ওই ঘটনার ভিডিও করে নিজেরাই। এরপর সেই ভিডিও ছেড়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। নৃশংসতার মধ্যে থেকে তারা হয়তো খুঁজে পেয়েছিল নিজেদের আনন্দ। যদিও ভাগ্যক্রমে সারমেয়টি এ যাত্রায় প্রানে বেঁচে যায়।
ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, ‘ব্রিজ থেকে চূর্ণী নদীর জলে ফেলে দেওয়ার পর সারমেয়টি সাঁতরে পাড়ে উঠে গিয়েছিল। যদিও নদীর পাড়ে ছিল ঝোপঝাড়। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সারমেয়টিকে যথেষ্ট কসরত করতে হয়েছে।’ একটি যুবককে ওই সারমেয়টিকে কোলে তুলে জলে ফেলার সময় গালিগালাজ করতেও শোনা গিয়েছে। ভিডিওটি চারিদিকে ছড়িয়ে যাওয়ার পর নৃশংসতার ছবি দেখে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন পশুপ্রেমীরা। রানাঘাটের একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যা সম্প্রীতি রায়ের মতো আরও অনেকের দাবি, ‘এই কাজ যারা করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। ‘ এরপরেই শনিবার রাতে রানাঘাট থানার পুলিশ ওই তিন যুবককে ধরে। পুলিশের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘ক্রুয়েলিটি টু অ্যানিম্যাল অ্যাক্ট অনুযায়ী ধৃতদের গ্রেপ্তার করা হয়।’ যদিও জামিনযোগ্য ধারা হওয়ায় অভিযুক্ত ওই তিন যুবককে জামিন দিয়েছেন বিচারক। রানাঘাট থানার পুলিশের এই ভূমিকায় খুশি পশুপ্রেমীরা। যদিও তাদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘পশুদের ওপর এমন নৃশংস অপরাধের অপরাধীরা যাতে সহজে জামিন না পায়, এমন আইন হওয়া উচিত।’