স্টাফ রিপোর্টার : মাঝরাস্তায় থমকে গিয়েছে শীত। ঠান্ডা পড়তে পড়তেও আচমকাই বদল আবহাওয়ার। সোমবার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ডিগ্রি বেশি! কপালে জমছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। শীতের শুরুতে আকস্মিক গরমে ভাইরাসের পোয়াবারো। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন আবহাওয়ায় ফুসফুসের শত্রু ভাইরাসদের আক্রমণ ক্ষুরধার। আচমকাই বাড়ির খুদেটার গলা খুশখুশ। নাক দিয়ে জল পড়ছে। হাঁপানি রোগীদের দফারফা অবস্থা।
আদতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, রাইনোভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাসের আঘাতে ঘনঘন ফুসফুসে সংক্রমণ। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, ‘শিশু, প্রৌঢ়দের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এমন আবহাওয়ায় তাদেরই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আচমকা গরম পড়ায় চেম্বারে বাড়ছে রোগীর ভিড়। কারও জ্বর, কারও গলায় ব্যথা।’ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরির কথায়, ‘শীত আসবে আসবে করেও আসছে না। সেজন্য ডেঙ্গুও বিদায় নিচ্ছে না। নাতিশীতোষ্ণ এই আবহাওয়ায় ডেঙ্গুর মশার ডিম ফুটতে ও ডিম থেকে বেরনো শূককীটের তাড়াতাড়ি বাড়তে সুবিধা হয়। সেজন্য মশারির ব্যবহার করতে বলছেন চিকিৎসকরা।’
এদিকে সমস্যা হচ্ছে আরেক জায়গায়। শীত শুরুর মরশুমে শিশুদের গরম জামাকাপড় পরিয়ে রাখছেন অভিভাবকরা। মাথায় রাখতে হবে, বড়রা গরম লাগলে গায়ের সোয়েটার খুলে ফেলতে পারেন। কিন্তু দু’বছরের একরত্তির পক্ষে তা সম্ভব নয়। বঙ্গোপসাগরের উপর উচ্চচাপ থাকায় আকস্মিক গরম পড়েছে গোটা রাজ্যে। ঘাম বসে নানা অসুখ দেখা যাচ্ছে ছোটদের। ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরির পরামর্শ, রাতে ছোটদের খালি গায়ে শোয়ালেও সমস্যা। ভোরবেলার দিকে তাপমাত্রা হঠাৎ নেমে যাচ্ছে। সেসময় গরম জামা গায়ে না দিলে আবার ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে মুহূর্তে। তাপমাত্রা অনুযায়ী ছোটদের পরিধান বদলে দিন।
[আরও পড়ুন: Coronavirus: করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আশা দেখাচ্ছে ফাইজারের নতুন ট্যাবলেট, দামও সাধ্যের মধ্যে]
নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ব্যাকটিরিয়ার বাড়বাড়ন্তে ফুসফুসের উপরিভাগের সংক্রমণ অত্যন্ত গা—সওয়া। ধূমপায়ীদেরও তাই সাবধান করছেন চিকিৎসকরা। গলা খুশখুশ এড়াতে ঠান্ডা খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গরম খাবার খেলেই সর্বনাশ। দু’ধরনের তাপমাত্রা শরীর খারাপ হতে বাধ্য। আচমকা তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বেড়ে যায় শ্বাসকষ্টের সমস্যাও। ধুলোবালির হাত থেকে বাঁচতে রুমালে নাক ঢাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যদিও রাস্তায় সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে ধুলো অনেকটাই এড়ানো যাবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বয়স্কদের বিপদের হাত থেকে বাঁচতে আগেভাগেই সাবধান হতে বলেছেন বয়স্ক রোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক মজুমদার। জানিয়েছেন, যে সমস্ত প্রৌঢ়ের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদের সাবধানে রাখতে হবে। চিকিৎসকের কথায়, “ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলে এমনিতেই সোডিয়ামের তারতম্য হয়। আচমকা গরমে অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে গেলে শরীরে সোডিয়াম শূন্যতা তৈরি হতে পারে।” হাঁটতে বেরোলে তাই বয়স্কদের হাতে ছাতা অথবা টুপি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মজুমদার। আচমকা জলতেষ্টা পেলে রাস্তা থেকে জল না খাওয়াই শ্রেয়। তাতে পেট খারাপের সম্ভাবনা প্রবল। চিকিৎসকের পরামর্শ, “সঙ্গে রাখুন জলের বোতল। গরম লাগলেও রাস্তার বরফ-আইসক্রিম বা ঠান্ডা পানীয় খাবেন না”