কৃষ্ণকুমার দাস: বিধানসভার অধিবেশনে ভোটাভুটিতে অংশ না নেওয়া ‘দলবিরোধী কাজ’ বলে মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেসের পরিষদীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। বস্তুত সেই কারণে এবার থেকে অধিবেশন চলার সময় প্রতি সাতদিন অন্তর বিধায়কদের হাজিরা খাতা পরিষদীয় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে। গরহাজির বিধায়কদের নিয়ে ‘কড়া ব্যবস্থা’ নেবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই। বুধবার বিধানসভায় তৃণমূলের পরিষদীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রথম বৈঠকের পর একথা জানিয়েছেন কমিটির চেয়ারম্যান তথা পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বৈঠকে ছিলেন পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim), বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা।
বিধানসভার বাদল অধিবেশনে শাসকদলের বিধায়কদের হাজিরা কম হওয়া নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ডেবরার বিধায়ক তথা প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীর ও রেজিনগরের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের মতো বিধায়করা বিধানসভার অধিবেশনে এসেও প্রকাশ্যে কার্যত দল ও সরকার বিরোধী মন্তব্য করছিলেন। বস্তুত এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শৃঙ্খলারক্ষাকমিটি গঠন হয়। কিন্তু তারপরেও বাংলা দিবস নিয়ে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন জেনেও ২১৬ জন দলীয় বিধায়কের মধ্যে মাত্র ১৬৭ জন অধিবেশনে অংশ নেন।
[আরও পড়ুন: ‘জওয়ানি বের হবে থানায়’! সলমনের পোস্টার ছেড়ায় শাহরুখ-ভক্তদের শাস্তি পুলিশের]
গোটা ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিষদীয় নেতৃত্ব। কারণ, মাত্র পাঁচজন বিধায়ক অসুস্থ ও অন্যান্য কারণে আসতে পারবেন না জানালেও বাকি ৪২ জন পরিষদীয় দলকে কিছু না জানিয়েই বাংলা দিবসের ভোটাভুটিতে অনুপস্থিত ছিলেন। বস্তুত এই কারণে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে শোভনদেব বলেন, ‘‘ভোটাভুটির সময় অধিবেশনে না আসা অত্যন্ত অন্যায্য ও অন্যায় শুধু নয়, দলবিরোধী কাজ বলে মনে করি।’’ পরিষদীয় মন্ত্রীর যুক্তি অনুযায়ী, বাংলা দিবসের আলোচনার সময় উপস্থিত না থাকা ও ভোটাভুটিতে অংশ না নেওয়া ৪২ জন বিধায়ক কার্যত দলবিরোধী কাজ করেছেন। এদিন বৈঠকে হওয়া সিদ্ধান্ত বিদেশ থেকে ফিরলে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখিয়ে নিয়ে সমস্ত বিধায়কদের জানিয়ে দেবেন শোভনদেব।
[আরও পড়ুন: মার্কিন মুলুকেই মেয়েকে নিয়ে গণেশ পুজো প্রিয়াঙ্কার, ছোট্ট ‘গণু’কে জড়িয়ে আদুরে পোজ মালতির]
শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রথম বৈঠকে এদিন অরূপ ও ফিরহাদ একাধিক নজির নিয়ে আলোচনা করেন। পরে কমিটির দু’টি সিদ্ধান্ত জানিয়ে শোভনদেব বলেন,‘‘প্রথমত, অধিবেশন চলার সময় মন্ত্রীদের সবাইকে এসে পরিষদীয় মন্ত্রীর ঘরে রাখা খাতায় সই করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিধায়কদের সরকারি দলের মুখ্য সচেতকের ঘরে রাখা খাতায় হাজিরা দিতে হবে। সাতদিন পর পর ওই হাজিরা খাতা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব।’’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পরিষদীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটাররা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের পাঠান এলাকার সমস্যা ও সংকট অধিবেশনে তুলে ধরার জন্য। কিন্তু এলাকার বহু বিধায়ক শুধুমাত্র বিধানসভা ভবনে ঢুকেই হাজিরা খাতায় সই করে চলে যান। অধিবেশনে এলাকার প্রশ্ন বা সমস্যার কথা তুলে ধরেন না। এটা ওই কেন্দ্রের মানুষের সঙ্গে কার্যত বিশ্বাসঘাতকতা করা।’’