অভিরূপ দাস: শুয়ে থাকা অবস্থায় দুধ খাওয়াতে গিয়ে বিপত্তি। একরত্তির শ্বাসনালিতে ঢুকে গিয়েছিল তরল। বেদম কাঁদছিল শিশুটি। ওয়ার্ডের আয়া ডাকতেও আসেন সিস্টারকে। তাঁর জবাব ছিল, “ও কিচ্ছু হয়নি। মুখ মুছিয়ে পাখা চালিয়ে দাও।” কিছুক্ষণ পরে এসে দেখা যায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে হৃদস্পন্দন। মৃত্যু হয়েছে সদ্যোজাতর। সন্তানের মৃত্যুর পর দীপঙ্কর বিশ্বাস এবং তাঁর স্ত্রী শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস অভিযোগ জানিয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে। অভিযোগ বারাসতের (Barasat) ওই হাসপাতালের গাফিলতির জেরেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির।
জানা গিয়েছে, গত ৪ নভেম্বর বারাসতের ইকো হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভরতি হয়েছিলেন শর্মিষ্ঠা। জন্মানোর পর থেকেই নানান সমস্যার জন্য শিশুটিকে নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট বা নিকু–তে রেখে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। অভিযোগ পাওয়ার পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠায় রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে হাসপাতাল। কিন্তু ওয়ার্ডের আয়ার লেখা বয়ান থেকে জানা যায়, অভিযোগ মিথ্যে নয়।
[আরও পড়ুন: ‘বাইরের সংস্থাকে ডেকে দলেরই ক্ষতি হয়েছে’, এবার হুগলির দাপুটে তৃণমূল নেতার নিশানায় পিকে]
ওয়ার্ডের আয়া তাঁর লিখিত বয়ানে জানিয়েছেন, শোয়ানো অবস্থায় বাচ্চাটিকে দুধ খাওয়ানো হচ্ছিল। আচমকাই গলায় দুধ আটকে যায়। চিৎকার করে কাঁদছিল শিশুটি। সিস্টারকে ডাকতে আসলে তিনি বলেন, “মুখ মুছিয়ে পাখা চালিয়ে শুইয়ে দিতে।” এমনকি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গিয়েছে শিশুটি যখন দম নিতে না পেরে ছটফট করছিল সে সময় বারবার সিস্টারকে ডাকা হলেও তিনি আসেননি। হাসপাতালের সিস্টারদের এই গাফিলতির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দু’লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে হাসপাতালকে।
[আরও পড়ুন: দুধের জন্য কান্না তিন সদ্যোজাতর, স্তন্যপান করিয়ে শান্ত করলেন চিকিৎসক]
এদিকে, জরিমানার টাকা শোধ না করে বেকায়দায় মার্সি হাসপাতাল। ২০১৮ সালে পার্কস্ট্রিটের এই হাসপাতালের শৌচালয়ে পরে থেকে মৃত্যু হয়েছিল সঙ্গীতা চৌধুরির। তাঁর স্বামী মনোজ চৌধুরির অভিযোগ, টানা আধঘণ্টা শৌচালয়ে পরে থাকলেও হাসপাতালের কোনও কর্মী বা নার্স সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। মেঝেতে পরে থেকেই মৃত্যু হয় সঙ্গীতার। এই ঘটনায় আট লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল মার্সি হাসপাতালের। কিন্তু এতদিনে এক টাকাও মনোজবাবু এক টাকাও পাননি। তাই ফের একবার স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হন তিনি।
অভিযোগ খতিয়ে দেখে কমিশন ঘোষণা করে, আটটি কিস্তিতে ওই টাকা শোধ দিতে হবে মার্সি হাসপাতালকে। ৩১ ডিসেম্বর থেকে প্রতি মাসের শেষ দিনে ১ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। যদি আট মাসের মধ্যে কোনও কিস্তির টাকা বাদ যায়, সেক্ষেত্রে পরের মাসে ১০ শতাংশ সুদ সমেত বাকি টাকা শোধ করতে হবে।