সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রিয়াঙ্কা দেবী। এদেশের এক অজ পাড়াগাঁয়ের এই বাসিন্দা সন্তানসম্ভবা। ডাক্তার তাঁকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে দিনের বেলায় তিনি শুধু খান। রাতে মুখে কিছু তোলেন না। কারণ, প্রকৃতির ডাক এলে বধূ বেজায় সমস্যায় পড়েন। রাতের অন্ধকারেই তাঁকে শৌচকর্ম সারতে হয়। লজ্জার এই ছবি বিহারের গাজিপুর গ্রামে। যেখানে প্রিয়াঙ্কাদের মতো বহু বাসিন্দা দেখেননি শৌচাগার। নওদা জেলার এই গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ২ হাজার। শৌচালয় তৈরি নিয়ে এই গ্রামে কুসংস্কারের শেষ নেই। গ্রামে টয়লেট হলে নাকি বাচ্চারা মারা যাবে। এই অন্ধবিশ্বাসের ধাক্কায় দু দশকের বেশি সময়ে গাজিপুরে নো টয়লেট।
[সমুদ্র সৈকতে ভেসে উঠল চোখ-মুখহীন প্রাণীর মৃতদেহ]
দেশ জুড়ে চলছে স্বচ্ছ ভারত অভিযান। যা নিয়ে বলিউডে সিনেমাও তৈরি হয়েছে। অক্ষয় কুমারের ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’ আগস্টে মুক্তি পাচ্ছে। শৌচাগার তৈরি নিয়ে সিনেমা, সরকারি প্রচার থেকে বহু দূরে বিহারের গাজিপুর। যেখানে টয়লেট আক্ষরিক ভাবে অভিশপ্ত। বিষয়টি কীরকম। ২৩ বছর আগে সিদ্ধেশ্বর সিং নামে গ্রামের এক বাসিন্দার বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হচ্ছিল। এমন সময় ওই কৃষক পরিবারের এক সন্তান রহস্যজনকভাবে মারা যায়। সেই ঘটনায় ওই পরিবারের মনে হয়েছিল টয়লেট বানানোর জন্য নাকি অপমৃত্যু হয়েছে। ১৯৯৬ সালে গ্রামের আর এক বাসিন্দার বাড়িতেও একই ঘটনা ঘটে। এই অন্ধবিশ্বাসে প্রভাবিত হয়ে গোটা গ্রাম শৌচাগার বানানো বন্ধ করে দেয়। কয়েক বছর আগে ওই গ্রামের যুবক কুমার অরবিন্দ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দুর্ঘটনায় জখম হওয়ার পর থেকে সচেতনতার প্রচারের কাজে ভাঁটা পড়ে। মুন্দ্রিকা সিং নামে এক স্কুলছাত্রী গ্রামের স্কুলে টয়লেটে যাওয়ার পরেই নাকি মারা যায়। এরপর থেকে স্কুলের ওই শৌচাগার ব্যবহার বন্ধ করে দেয় পড়ুয়ারা। সম্প্রতি নওয়াদার বিডিও শৌচাগার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে গ্রামে গিয়েছিলেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার পরই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বিডিও। টয়লেট তৈরি এবং প্রচার নিয়ে এমন মিথ ঘোরে গাজিপুর গ্রামে।
[শাশুড়ির চড় খেয়ে অপমানে আত্মঘাতী জামাই]
গাজিপুরের স্বচ্ছলতার অভাব নেই। প্রত্যেকের বাড়িতে টিভি, ফ্রিজ, ইনভার্টার, এয়ার কুলারের মতো সামগ্রী রয়েছে। কিন্তু টয়লেট নেই। শৌচাগার জানতে চাইলে ফাঁকা মাঠ দেখিয়ে দেন বাসিন্দারা। আর সূর্যদেব অস্ত গেলে তবে শৌচকর্ম সারতে হয়। এই কারণে গ্রামের অনেকের বিয়ে বাতিল হয়েছে। তবে গাজিপুর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বিহারের ৩০ শতাংশ মানুষের ঘরে শৌচাগার নেই। স্বচ্ছ ভারত অভিযানে নীতীশ কুমারের রাজ্যে দেড় কোটি শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ এর মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও কাজের যা গতি তাতে ঢের পিছিয়ে বিহার। বিহারের গ্রামোন্নয়ন দপ্তর গাজিপুরের ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছে। টয়লেট এখানে ‘শেম’ কথা।
The post শৌচাগার বানালেই অপঘাত! অন্ধবিশ্বাসে বিহারের গ্রামে ‘নো টয়লেট’ appeared first on Sangbad Pratidin.