সুমিত বিশ্বাস ও সুরজিৎ দেব: কোভিডের (COVID-19) বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে বিধিনিষেধ জারি হওয়ার আশঙ্কা ছিলই। আর সেই আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করেই রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলি সোমবার থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার নির্দেশিকা জারি হয়েছে। আর তার ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন নতুন বছরের ছুটিতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া মানুষজন। রবিবার বিকেলে বিধিনিষেধের কথা ঘোষণা হওয়ার পরই যেন বাড়ি ফেরার তাড়া শুরু হয়ে যায়। অযোধ্যা পাহাড় থেকে সুন্দরবন, দার্জিলিং থেকে দিঘা – সর্বত্র ছবিটা প্রায় একইরকম। এছাড়া রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলির হোটেল, লজ, কটেজ, রিসর্টে একের পর এক বুকিং বাতিল করতেও শুরু করেছেন পর্যটকরা।
পরিস্থিতি এমন যে পুরুলিয়ার (Purulia) অযোধ্যা পাহাড়, গড় পঞ্চকোটের কয়েকটি হোটেল, লজ, কটেজ, রিসর্ট বিকেলের পর থেকেই কার্যত পর্যটকশূন্য। অযোধ্যা হিলটপের কচুরিরাখার সরকারি পর্যটক আবাসের দেখভাল করা সংস্থার অধিকর্তা রাহুল আগরওয়াল বলেন, “এভাবে হঠাৎ করে পর্যটন কেন্দ্রগুলি বন্ধ হয়ে যাবে তা আমরা ভাবতেই পারিনি। রাজ্যের নির্দেশিকা জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুকিং বাতিল হতে শুরু করেছে। আপাতত চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ চললেও কবে আবার কোভিবিধি মেনে পর্যটন শিল্প ছন্দে ফিরবে তা বুঝতে পারছি না।”
[আরও পড়ুন: টাকিতে পিকনিক সেরে ফেরার পথে গাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ‘গণধর্ষণ’, গ্রেপ্তার ৬]
এদিন রাজ্যের বিধিনিষেধ জারি হতেই বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির ফোন নম্বর ব্যস্ত। বাড়ি ফেরার তাড়ায় বাস, ট্রেনে টিকিট কাটার জন্য ট্রাভেল এজেন্সিতে ডায়াল করতে থাকেন পর্যটকরা। সব মিলিয়ে নতুন বছরের শুরুতেই ধাক্কা খেল পর্যটন শিল্প। বড়দিনে সময় থেকে যেভাবে রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মাস্কবিহীন পর্যটকরা ঘোরাফেরা করছিলেন তাতে যে কোভিড ছড়িয়েছে তা পরিষ্কার বলেই মনে করছেন অনেকেই।
রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি, তা মানছেন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষজন। তাই হঠাৎ করেই আপাতত টুরিস্ট স্পট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হোটেল, লজ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আবার নতুন করে সমস্যায় পড়লেন গাইডরা। কারণ তাঁরা বাড়তি আয়ের জন্য এই পর্যটনের মরশুমের দিকেই তাকিয়ে থাকেন। সব মিলিয়ে হতাশ পর্যটক থেকে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সকলেই।
তবে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বকখালি ও মৌসুনি পর্যটনকেন্দ্র এদিন ছিল পর্যটকবোঝাই। করোনাকে থোড়াই কেয়ার করে মাস্ক ছাড়াই সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের অবাধ ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যটকদের সচেতন করতে শেষ পর্যন্ত পথে নামানো হল সুন্দরবনের বাঘকেই। হালুম হালুম শব্দে কখনও ‘বাঘু’র তাড়া মাস্কহীনদের, কখনও আবার চলল মৃদু ধমক। পর্যটকদের করোনা সচেতন করতে এদিন এমনই অভিনব উদ্যোগ নিতে দেখা যায় নামখানা ব্লক প্রশাসনকে।