শুভঙ্কর বসু: নারদ মামলা (Narada case) ভিনরাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যেতে কার্যত মরিয়া সিবিআই (CBI)। কলকাতা হাই কোর্টে সলিসিটর জেনারেল তথা সিবিআই আইনজীবী তুষার মেহতার কয়েকঘণ্টার জোরদার সওয়ালে সেটাই স্পষ্ট। মঙ্গলবার দু’দফায় ৫ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চের শুনানিতে তুষার মেহতা বারবার ‘প্রভাবশালী’, ‘রাজনৈতিক চাপ’-এর কথা বলেন। মামলাটি এ রাজ্যে চললে নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে না, একাধিক যুক্তি সাজিয়ে তা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। এদিন শুধু সিবিআইয়ের সওয়ালই শুনেছেন ৫ বিচারপতি। বুধবার ফের এই মামলার শুনানি।
মামলা অন্যত্র স্থানান্তরিত করা যাবে কিনা, সেই মামলা শোনার এক্তিয়ার নেই কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta HC) )। এই মর্মে সোমবার সওয়াল করেছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। তাঁর দাবি খারিজ করে ৫ বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, মামলার শুনানি এখানেই হবে। সেইমতো মঙ্গলবার শুনানির শুরুতে তুষার মেহতা সওয়াল করেন সিবিআইয়ের হয়ে। তিনি বলেন, ”এই মামলায় অভিযুক্ত ৪ হেভিওয়েট নেতার জামিনের বিরোধিতা করছি না। বলার বিষয়, ওই দিন তাঁদের গ্রেপ্তারি থেকে নিম্ন আদালতে রায়দান পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া হয়েছে, তাকে বাতিল করতে হবে। সিবিআই অফিসের সামনে দলীয় সমর্থকদের বিক্ষোভ, মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা কার্যত ধরনায় বসেন। যা ঘটেছে, তা রাজ্যে কেন, গোটা দেশেই নজিরবিহীন। একে ‘বিকৃত’ অ্যাখ্যা দিয়ে বাতিল করা হোক।” তাঁর দাবি, এই পদ্ধতিতে বিচার চললে, তার উপর মানুষ ভরসা হারাবেন।
[আরও পড়ুন: দিনেদুপুরে শহরের রাস্তায় গুলি, অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ব্যবসায়ী]
সলিসিটর জেনারেলের এই ব্যাখ্যা শুনে বিচারপতি সৌমেন সেন তাঁকে প্রশ্ন করেন, ”সেইদিন চার্জশিট কি আপনারা অনলাইনে জমা দিয়েছিলেন? এত ঝঞ্ঝাট হলে সেদিন নিম্ন আদালতেই কেন মামলাটি মুলতুবি করার আবেদন করেননি?” তাতে তুষার মেহতার উত্তর, ”সেদিন ওই পরিস্থিতিতে কী করা ঠিক হতো, তা বোঝা যায়নি।” বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, ”এই বিক্ষোভের সঙ্গে জামিনের কী সম্পর্ক?” তাতে সিবিআইয়ের আইনজীবীর ব্যাখ্যা, ”যাঁরা সেদিন সিবিআই অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, তাঁরা সাধারণ কেউ নন। প্রত্যেকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী। কেউ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে তাঁর সমর্থনে যদি এভাবে প্রভাবশালীরাই নেমে পড়েন, তাহলে সেই বিচারব্যবস্থা প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।” এছাড়া তিনি আগের দুটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন, যেখানে সিবিআইকে বেশ চাপে পড়তে হয়েছিল। তুষার মেহতার সওয়াল, এর আগে প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র এবং আইপিএস রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তারির সময়েও এ রাজ্যে হেনস্তা হতে হয়েছিল সিবিআই আধিকারিকদের। এসব ঘটনার উল্লেখ করে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা বজায় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তুষার মেহতা।
[আরও পড়ুন: কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে কেন ছিলেন না? আলাপনকে শোকজ কেন্দ্রের]
এসব শোনার পর বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, ”তাহলে এই মামলাগুলির বিচারও কি প্রভাবিত হয়েছিল?” বিচারপতি সৌমেন সেনের প্রশ্ন, ”নিরপেক্ষতা নিয়ে কীভাবে সংশয় তৈরি হচ্ছে? শুনানি রুদ্ধদ্বার কক্ষে হয়েছে। এখানে কীভাবে প্রভাব খাটাতে পারেন কেউ?” সিবিআই আইনজীবী তুষার মেহতার জবাব, ”কোনও হাইপ্রোফাইল, মন্ত্রী পদাধিকারীদের মদতে এ ধরনের বিক্ষোভের ছবি নিঃসন্দেহে নিম্ন আদালতের বিচারকের উপর চাপ তৈরি করে। তার দ্বারা যে রায় দেওয়া হচ্ছে, তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে।” এরপর শুনানি আজকের মতো শেষ হয়ে যায়। বুধবার ফের শুনানি।