shono
Advertisement
Ayodhya Tourism

৪৩ ডিগ্রির চোখরাঙানি, পর্যটক টানতে অযোধ্যা পাহাড়ে 'সামারকুল' চমক

দার্জিলিংয়ে তিলধারণের জায়গা নেই, এদিকে শুনশান অযোধ্যার পর্যটন ব্যবসায় ভাঁটা!
Posted: 09:35 PM May 01, 2024Updated: 09:35 PM May 01, 2024

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এক পাহাড়ে উপচে পড়া ভিড়। আরেক পাহাড় তখন খাঁ-খাঁ। এক পাহাড়ে মনোরম আবহাওয়ায় চরম স্বস্তি। তখন আরেক পাহাড়ে দহনজ্বালা। দার্জিলিংয়ে যখন শীতের আমেজ নিতে মোমো, স্যুপে চুমুক। তখন অযোধ্যায় তীব্র জলসঙ্কটে থমকে পর্যটন। তাই পুরুলিয়ার পাহাড়ে পর্যটক টানতে বেশ কয়েকটি রিসর্ট 'সামার মেনু' দিয়ে তাঁদের খানাপিনা সাজিয়েছে।

Advertisement

এক পাহাড় মনোরম দার্জিলিং। আরেক পাহাড় অযোধ্যা সবুজ থাকলেও ধূ-ধূ ভূমি। রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রের একেবারে প্রথম দিকে থাকা দুই পাহাড়ে ভরা গ্রীষ্মে দুরকম চিত্র। স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হয়ে যাওয়ায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অভিভাবকরা দার্জিলিং যাচ্ছেন। কিন্তু আরেক পাহাড় অযোধ্যা থেকে মুখ ফিরিয়েছেন তারা। অথচ মার্চের শেষ পর্যন্ত যখন লাল পলাশে ঘেরা ছিল পুরুলিয়া। নাকে আসছিলো মহুয়ার সুবাস, কুসুমের কচি কচি লাল পাতায় ছিল বসন্তের রূপ। এই পাহাড়ও উপচে পড়েছিল ভিড়ে। দোল-হোলিতে থাকার জায়গা পর্যন্ত ছিল না। একটা খাটিয়ায় রাত কাটানোর জন্য হাপিত্যেশ করে গিয়েছেন পর্যটকরা। সেই পাহাড়ে যে প্রকৃতির এখন অন্য রূপ। ঝাড়খণ্ডের পাথুরে অঞ্চল লাগোয়া এই পাহাড় এখন যেন ঝলসে যাচ্ছে। পুরুলিয়ায় তাপমাত্রা পরিমাপ করা কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বুধবার এই জেলার সর্বোচ্চ ছিল ৪৩.৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। যা এই মরশুমের সর্বোচ্চ। এখানে আরেক পাহাড় দার্জিলিং-এ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সর্বনিম্ন ১২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ফলে গায়ে হালকা শীত বস্ত্র চাপিয়ে একেবারে মনোরম।

পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়তলির একটি বেসরকারি পর্যটন সংস্থার কর্ণধার সুজিতচন্দ্র কুমার বলেন, "গত বছরেও এমন পর্যটকশূন্য ছিল না এই পাহাড়। ফি বছর পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে দাবদাহ চলে। তবুও পর্যটক থাকে কয়েক বছর ধরেই। আসলে পাহাড়ের চরিত্রটা একটু অন্যরকম। আগে দিনের বেলায় ঝলসে গেলেও সন্ধের পর থেকে আবহাওয়াটা মনোরম হতে থাকে। পর্যটকরা দিনের বেলায় ইনডোরে থাকলেও সন্ধের পর আউটডোরে নানান মজা করেন। কিন্তু এবার ছবিটা বদলে গিয়েছে। সন্ধের পরও যেন শীতল হচ্ছে না এই পাহাড়। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাতেই এমন অবস্থা। ফলে এপ্রিল থেকেই মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। গত তিন সপ্তাহ ধরে একেবারে শুনশান পাহাড়।" ফলে পর্যটন ব্যবসা মার খাচ্ছে অযোধ্যা পাহাড়ে। শুধুমাত্র জলসংকটের কারণে বহু হোম স্টে, বেসরকারি পর্যটন সংস্থা এমনকি রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের আওতায় থাকা সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অযোধ্যা পাহাড় প্রকল্পের অতিথি আবাসের দরজাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জল না থাকায় অনলাইন বুকিং বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে অযোধ্যা পাহাড়তলির মাঠা ও হিলটপে চারতারা হোটেল কর্তৃপক্ষ গুলি পর্যটক টানতে স্পেশাল মেনু করেছে।

[আরও পড়ুন: সস্তায় পুষ্টিকর! দেশের এই পাঁচ জায়গায় কম খরচেই বেড়াতে পারবেন]

মাঠায় ইকো রিসোর্টে ড্রিংকসে রয়েছে, পুদিনা ঠান্ডাই, আমপোড়া শরবত, লাউকি সবজা। মেইন কোর্স-এ রয়েছে বড়ি ভাতে, কাঁচা মিঠা আম কাসুন্দি স্যালাড, লাউ কাচকলা ভাজা, কচি বেগুন পেঁয়াজ পোস্ত, কুমড়ো ভাপা জেলি, আম আচারি রুই। অযোধ্যা পাহাড়ের কচুরিরাখার কুশল পল্লীতে ড্রিংকসে আছে সুইট ইমলি পানি, গন্ধরাজ দইয়ের ঘোল, পুদিনা তরমুজ সিকাঞ্জি। মেইন কোর্স-এ কন্টাই লাউ বড়ি কাচকলা ভাজা , পোড়া টমেটোর পেঁয়াজ সরষে মাখা, ঢাকাই সেকা কুমড়ো ভর্তা, সিম চচ্চড়ি, কলাপাতা দিয়ে চারা পোনা ভাপা, মুর্শিদাবাদি নবাবি মোরগ, আমের টক জল। ওই চারতারা হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার সুদীপ্ত কুমার বলেন, "পর্যটক টানতেই আমাদের এই সামার মেনু। এছাড়া নজর কাড়া ড্রিঙ্কস রয়েছে। ফলে আমরা কিছুটা হলেও পর্যটক পাচ্ছি।" কিন্তু দার্জিলিং পাহাড়ের ছবিটা একেবারে আলাদা। থিকথিকে ভিড়। শুধু বাংলা নয় দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষজন ছুটি কাটাচ্ছেন দার্জিলিংয়ে। ফলে কার্শিয়াং, কালিম্পং-এও হোটেল, গেস্ট হাউস, হোম স্টে একেবারে ভিড়ে ঠাসা। জমজমাট পর্যটনে আয় বাড়ছে সেখানে।

তবে অযোধ্যা পাহাড় এলাকায় পর্যটক শূন্য থাকলেও দীঘা, মন্দারমনিতে ভিড় নেই এমন নয়। দিনের বেলায় হোটেলে শুয়ে, বসে গল্প করে কাটিয়ে সন্ধ্যার পরেই বেরিয়ে পড়ছেন পর্যটকরা। তবে অন্যান্যবার গ্রীষ্মে দিঘা, মন্দারমনিতে যে পরিমাণ ভিড় থাকে এবার কিন্তু তা নেই। যেমনটা অযোধ্যা পাহাড়ে। প্রকৃতির হাত ধরে দুই ছবি দুই পাহাড়ে।

[আরও পড়ুন: বৈশাখের দহনজ্বালার সঙ্গে দোসর ভোট, জোড়া ফলায় বিদ্ধ পুরুলিয়ার পর্যটন]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • পুরুলিয়ার পাহাড়ে পর্যটক টানতে বেশ কয়েকটি রিসর্ট 'সামার মেনু' দিয়ে তাঁদের খানাপিনা সাজিয়েছে।
  • মাঠায় ইকো রিসোর্টে ড্রিংকসে রয়েছে, পুদিনা ঠান্ডাই, আমপোড়া শরবত, লাউকি সবজা।
  • মেইন কোর্স-এ রয়েছে বড়ি ভাতে, কাঁচা মিঠা আম কাসুন্দি স্যালাড, লাউ কাচকলা ভাজা, কচি বেগুন পেঁয়াজ পোস্ত, কুমড়ো ভাপা জেলি, আম আচারি রুই।
Advertisement