জ্যোতির্ময় কর্মকার: ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ায় আপাতত আশঙ্কার কোনও কারণ নেই ভারতীয় অর্থনীতির৷ রীতিমতো শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত৷ সরকারের প্রস্তাবিত আর্থিক সংস্কারকে দ্রুত বাস্তবায়িত করেই যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত ভারতীয় অর্থনীতি৷ শুক্রবার এই ভাষাতেই দেশের শিল্পপতিদের আশ্বস্ত করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর রঘুরাম রাজন৷ বিবৃতি দিয়ে জেটলি জানিয়ে দিলেন, “ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় যে কোনও ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আমরা৷ অন্তর্বর্তীকালীন ৮-৯ শতাংশ উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে দ্রুত জিএসটি-সহ সব সংস্কারের অ্যাজেন্ডাকেই বাস্তবায়িত করা হবে৷ দেশের আর্থিক ঘাটতি ক্রমশ কমছে৷ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত৷ বৈদেশিক ক্ষেত্রেও ভারতীয় অর্থনীতি যথেষ্ট নিরাপদ অবস্থায় রয়েছে৷” কার্যত একইসুরে রঘুরাম রাজনেরও দাবি, “শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারতীয় অর্থনীতি৷ আশঙ্কার কোনও কারণ নেই৷ বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ কমছে৷ কোষাগারে যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে৷”
যদিও দিনের শুরুতেই ব্রেক্সিট-এর খবর পেয়ে রীতিমতো হাড়ে কাঁপুনি ধরে যায় বাজারে৷ ধস নামে শেয়ার সূচকে৷ সেনসেক্স ১০৭৮ পয়েন্ট পড়ে যায়৷ নেমে যায় নিফটির সূচকও৷ এক ধাক্কায় পড়ে যায় টাকার দামও৷ ২০১৩-র আগস্টের মুদ্রা সংকটের আতঙ্কের কথা মনে করিয়ে দিয়ে একটা সময়ে ডলারের সাপেক্ষে ভারতীয় মুদ্রার দাম দাঁড়ায় ৬৮ টাকারও উপরে৷ স্বাভাবিকভাবেই রীতিমতো সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেন অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা৷ অবস্থা এতটাই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে রঘুরাম রাজন তড়িঘড়ি ঘোষণা করেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে টাকা এবং ডলারের জোগান বাড়াবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ সূত্রের খবর, নর্থ ব্লকের প্রাথমিক ধারণা ছিল, স্থিতাবস্থার পক্ষেই রায় দিতে পারে ব্রিটেন৷ স্বয়ং সরকারের অর্থনীতি বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস দিনকয়েক আগেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ট্রেন্ড বলছে বর্তমান সম্পর্কই বজায় রাখার পক্ষে রায় দিতে পারে ব্রিটেন৷ কিন্তু এদিন সকালে সম্পূর্ণ উল্টো ছবি স্পষ্ট হতে আক্ষরিক অর্থেই প্রথমে আকাশ ভেঙে পড়েছিল নর্থ ব্লকের কর্তাব্যক্তিদের মাথায়৷ যদিও প্রাথমিক ধাক্কা সামলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জয়ন্ত সিনহা বলেন, “বিশ্বজোড়া অস্থিরতার মধ্যেও এখনও সবচেয়ে স্থিতাবস্থায় রয়েছে ভারতীয় অর্থনীতিই৷ যদিও যে কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় তৈরি আমরা৷”
প্রসঙ্গত, ইংল্যান্ডের অর্থনীতিতে তৃতীয় বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী রাষ্ট্র ভারত৷ সামগ্রিকভাবে সারা ইউরোপে ভারত যে পরিমাণ বিনিয়োগ করে, তার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয় শুধু ইউকে-তেই৷ ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ভারতের ইউকে-তে ভারতের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২.৭৫ বিলিয়ন ডলার৷ অন্যদিকে, সারা ইউরোপে বিনিয়োগের গেটওয়ে হিসাবে বরাবরই ব্রিটেনকে ব্যবহার করে ভারত৷ স্বাধীনতার পর থেকেই ব্রিটেনের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ইতিবাচক কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করেছে নয়াদিল্লি৷ মূলত, ভাষাগত স্বাচ্ছন্দ্যের কারণেই ইংল্যান্ডকে সমগ্র ইউরোপে বিনিয়োগের প্রবেশদ্বার হিসাবে ব্যবহার করেছেন ভারতীয় শিল্পপতিরা৷ এদিকে ভারতের অর্থনীতিতেও তৃতীয় বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী রাষ্ট্র হল ব্রিটেন৷ সিঙ্গাপুর এবং মরিশাসের পর ভারতে সবচেয়ে বেশি এফডিআই আসে ব্রিটিশদের থেকেই৷ অর্থনীতিবিদদের হিসাব বলছে, ২০০০ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫-এর সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারতের বাজারে ২২.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ব্রিটেন৷ ইউনাইটেড কিংডমের মাটিতে শুধুমাত্র ভারতীয় মালিকানাতেই থাকা ব্যবসার সংখ্যা প্রায় ৮০০৷ প্রায় ১.১ লক্ষ মানুষের রুটিরুজির সংস্থান এই সংস্থাগুলিই৷ জাগুয়ার ল্যান্ডরোভার-সহ টাটা গোষ্ঠীর মালিকানায় থাকা ২টি অটোমোবাইল সংস্থা চলে ব্রিটেনের মাটি থেকে৷ ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়ার ফলে চলতি দশকে শেষে টাটার জাগুয়ার ল্যান্ডরোভারের বার্ষিক লাভ প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার কম হতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের৷ টাটা সন্স-এর তরফে একটি বিবৃতিতে এদিন বলা হয়েছে, ইউকে-তে টাটার ১৯টি সংস্থা রয়েছে৷ সেগুলির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসা৷ প্রতিটি সংস্থাই প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে নীতি ঠিক করে৷ সেটাই তারা করে চলবে৷ ‘সল্ট থেকে সফটওয়্যার’ সংস্থা টাটা সন্স ১৯০৭ সাল থেকে ব্রিটেনে ব্যবসা করছে৷
The post ব্রেক্সিটের প্রভাব বাজারে তবু বিপদ দেখছে না ভারত appeared first on Sangbad Pratidin.