সুকুমার সরকার, ঢাকা: ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে ফের কক্সবাজারের (Cox’s Bazar) রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ড। উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা (Rohingya) ক্যাম্পে দুষ্কৃতীরা কুপিয়ে, গুলি করে দু’জনকে খুন করেছে। বৃহস্পতিবার ভোররাতে কুতুপালং ১৭ নম্বর ক্যাম্পের সি ব্লকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। বুধবার উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্পে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ বা আরসা জঙ্গিদের গুলিতে মহম্মদ জসিম) নামের এক রোহিঙ্গা নেতা (হেড মাঝি) নিহত হয়েছেন। বুধবার ভোরে ক্যাম্প-১০ এর সিআইসি অফিসের সামনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। দিনের পর দিন শরণার্থী (Refugee Camp) শিবিরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়ে জঙ্গিদের হাতে খুন হচ্ছেন সাধারণ রোহিঙ্গা থেকে নেতা, সকলে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী হারুন রশিদ জানান, ১৫-২০ জনের একদল দুষ্কৃতী ১৭ নম্বর ক্যাম্পের সি ব্লকে হামলা চালায়। এই সময় সন্ত্রাসীরা সি ব্লকের বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহর পুত্র আয়াত উল্লাহ এবং মোহাম্মদ কাসিমের পুত্র ইয়াছিনকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে এসে দা দিয়ে কুপিয়ে (Stab) ও গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ইয়াছিনের মৃত্যু হয় এবং আয়াত উল্লাহকে এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শেখ মোহাম্মদ আলি জানিয়েছেন, আধিপত্য বিস্তারের জন্য সশস্ত্র রোহিঙ্গারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগে বুধবার ভোরে ১০ নম্বর ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক রোহিঙ্গা নিহত হন। চলতি মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দু’জন মাঝি, এক শিশু-সহ সাত রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
[আরও পডুন: নভেম্বরেই মুখোমুখি মোদি ও ঋষি! ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে আশাবাদী দিল্লি]
বিশ্ব মানচিত্রে ব্রাত্য রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ (Bangaldesh)। মায়ানমার থেকে আসা সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু শরণার্থী নামধারী কিছু জঙ্গি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। যা নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। প্রশ্ন বিদ্ধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারকে। গোয়েন্দা রিপোর্টে বেড়িয়ে এসেছে পাকিস্তানের আইএসআই উগ্র রোহিঙ্গাদের দিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড চালিয়ে বিশ্বের কাছে শেখ হাসিনা সরকারকে হেয় করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্রের খবর, উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্পে বুধবার ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ বা আরসা জঙ্গিদের গুলিতে মহম্মদ জসিম (২৫) নামের এক রোহিঙ্গা নেতা (হেড মাঝি) নিহত হন। জসিম ক্যাম্প ভিত্তিক সন্ত্রাসী বিরোধীদের পক্ষে স্বোচ্ছাসেবী ছিল।”
[আরও পডুন: ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি পোস্টের হুমকি, প্রেমিককে পুলিশের হাতে তুলে দিতে ফাঁদ পাতলেন তরুণী]
এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পে গত এক বছরে কমপক্ষে থেকে ১৫ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন সন্ত্রাসীদের হাতে। তাঁদের সবাই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মায়ানমারে ফিরে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ, বালুখালি মাদ্রাসায় ছয় রোহিঙ্গা হত্যা, বালুখালি ১৮ নম্বর ক্যাম্পের হেড মাঝি জাফর, একই ক্যাম্পের মাঝি আজিম উদ্দিন, ৭ নম্বর ক্যাম্পের মাঝি ইসমাইল ও কুতুপালং ক্যাম্প-৪’এর মাঝি এরশাদ হত্যা, ৯ নম্বর ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ হোসেন, থাইংখালি তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের আনোয়ার ও ইউনুস হত্যা এবং সর্বশেষ হোসেন হত্যার পেছনে আরসা-সহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি জড়িত। তারা রোহিঙ্গাদের সৎ নেতাদের হত্যা করে ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।
থাইংখালি তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বয়োবৃদ্ধ সলিম উল্লাহ বলেন, ”আমাদের হেড মাঝিরা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও ভাসানচরে স্থানান্তর বিষয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁর কারণে সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে সুযোগ পেত না। এই ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের অভিভাবকশূন্য করতে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে।” উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাধারণ বাসিন্দারা জানান, ”আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন সত্বেও একের এক খুন আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। মায়ানমার সেনাদের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে রাতের আধারে পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে এসেছি বাংলাদেশে। অথচ এখানে এসেও নিরাপদে জীবনধারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি, তাহলে যাব কোথায়?”