সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: “ছেলে কোনওমতেই জঙ্গি হতে পারে না। ওকে ফাঁসানো হয়েছে”, বারবার ঘুরে ফিরে এই কথাগুলিই বললেন জঙ্গি সন্দেহে ধৃত সাদ্দামের বাবা আসগর খান। আল-কায়েদার শাখা সংগঠন কোয়াতুল হিন্দের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে শুক্রবার রাতে মুম্বই এটিএসের সহযোগিতায় মুম্বই থেকে ডায়মন্ড হারবারের পারুলিয়া কোস্টাল থানার দরিকৃষ্ণনগরের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন খানকে গ্রেপ্তার করেছে এসটিএফ। খবরে তা দেখা ইস্তক নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না তার পরিবারের সদস্যরা। বিশ্বাস হচ্ছে না প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীদেরও।
মাটি কাটার কাজ করেন দিনমজুর সাদ্দামের বাবা আসগর খান। দরিকৃষ্ণনগরে টালির চালের বাড়িতে বসেই তিনি স্পষ্ট বললেন, ‘‘আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। ওর কোনও জঙ্গিযোগ নেই, ও জঙ্গি নয়।” আসগরের পাঁচ ছেলের মধ্যে সাদ্দাম মেজো। ছোট থেকেই আবদালপুরের ফকিরপাড়ায় মামারবাড়িতে মানুষ। দরিকৃষ্ণনগরের বাড়িতে নয়, বিয়ের পরও স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তানকে নিয়ে মামারবাড়িতেই থাকত সাদ্দাম। দর্জির কাজ করেই চলছিল সংসার। মাসদেড়েক আগে মুম্বই যায় সে। মা সফিনা বিবি ছেলের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
[আরও পড়ুন: ‘এখন প্রিন্সিপাল চড় মারলে বাড়ি ফিরতে পারবেন?’, বিধায়ক তাপস রায়ের মন্তব্যে ফের বিতর্ক]
মা বলেন, “একদিন ও বলল, দর্জির কাজে তেমন আয় হচ্ছে না। বাড়িটা করছি। টাকার দরকার। গ্রামের কয়েকজন ছেলে মুম্বইয়ে দর্জির কাজ করতে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে সে-ও যাচ্ছে। দেড়মাস আগে যায় সেখানে। তারপর শনিবার হঠাৎই টিভির খবরে জানতে পারি, জঙ্গি সন্দেহে ওকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্বাস করিনি। ছেলের মোবাইলে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাইনি। ফোন বন্ধই ছিল।” ধৃত সাদ্দামের স্ত্রী টুসি বিবি বলেন, “খবরটা সত্যি কিনা জানতে পারুলিয়া কোস্টাল থানায় যাই। পুলিশ জানায়, এব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানেন না। তাই এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।”
ডায়মন্ড হারবার থানার চাঁদনগর-দেউলপোতার বাসিন্দা বছর তিরিশের সামির হোসেন শেখের বাবা এবাদ আলি শেখ মারা গিয়েছেন বছর তেরো আগে। মা বছর সত্তরের মনুজান বেওয়া ছেলের গ্রেপ্তারির খবর শোনার পর থেকেই অসুস্থ। কথা বলতে পারছেন না। জঙ্গিযোগে স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, এখবর শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সামিরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রোজিফা বিবিও।