এবছর করোনা আবহেই পুজো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ কলকাতার বাছাই করা কিছু সেরা পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন বাদামতলা আষাঢ় সংঘ, ৬৬ পল্লি এবং কালীঘাট নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিট ক্লাবের পুজোর প্রস্তুতি৷
সুলয়া সিংহ: চলতি বছর করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে ‘ড্রাইভ ইন দর্শন’-এর উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতার তিনটি হেভিওয়েট পুজো কমিটি। এখবর মহানগর-রাজ্য ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় গোটা দেশে। কীভাবে একই সুতোয় নিজেদের বেঁধেছে তিন ক্লাব, তাও ইতিমধ্যেই জেনে ফেলেছেন পুজোপ্রেমীরা। থিম শিল্পী ও ক্লাবের সভ্যবৃন্দের হাত ধরে দুর্গাপুজোয় শহরে ‘সত্যযুগ’ কীভাবে ফিরছে, এবার সেটাই হল প্রশ্ন। প্রতিবেদনের নিচে প্রস্তুতির ভিডিও দেখে নিঃসন্দেহে এ পুজো দেখার খিদে বাড়বেই।
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। ‘সত্যযুগ’ বলতে আসলে প্রথিতযশা পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কথাই হচ্ছে। এবছর তাঁর জন্ম শতবার্ষিকী। আর অস্কারজয়ী বাঙালির গর্বের পরিচালককে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিতে শ্রেষ্ঠ উৎসবকেই বেছে নিয়েছে বাদামতলা আষাঢ় সংঘ, ৬৬ পল্লি এবং কালীঘাট নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিট ক্লাব। পুরো বিষয়টির উদ্যোগ নিয়েছে IFSD (International Foundation for Sustainable Development) এবং মৃদুল পাঠক। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা অবলম্বনে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সত্যজিতের ‘অপু ট্রিলজি’ই এবার এই তিন মণ্ডপের থিম। প্রতিটি মণ্ডপই কিন্তু সাজছে আলাদা থিম শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে একসুতোয় গাঁথা হচ্ছে সত্যজিতের পথের পাঁচালি, অপরাজিত ও অপুর সংসার।
[আরও পড়ুন: দুঃসময় কাটিয়ে ‘আগামী’র পথে এগিয়ে চলা, দেবী বরণের প্রস্তুতি চোরবাগান সর্বজনীনের]
পুজোটি দেখা শুরু করতে পারেন বাদামতলা আষাঢ় সংঘ থেকে। যেখানে শিল্পী স্নেহাশিস মাইতির শৈল্পিক ভাবনায় ফুটে উঠছে ‘পথের পাঁচালি’র অপু-দুর্গার সেই ছোটবেলার কাহিনি। সেই রেলগাড়ির কু-ঝিকঝিক শব্দ থেকে কাশফুলে ভরা মাঠ, রুপোলি পর্দায় দেখা সবকিছুই বাস্তবায়িত হচ্ছে এখানে। আর দুর্গাই এখানে দেবী দুর্গার রূপ নিয়েছেন। প্রতিমা সাজিয়ে তুলছেন শিল্পী পূর্ণেন্দু দে। এরপর খানিকটা হেঁটে কিংবা গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চলুন ৬৬ পল্লির দিকে। এক মুহূর্তের জন্য বারাণসী পৌঁছে গিয়েছেন বলে ভুল হতে পারে। কারণ চাকরি সূত্রে অপু বারাণসী পৌঁছেছিল বলে এখানে সেই বারাণসীর বিখ্যাত গঙ্গার ঘাটের ছবি তুলে ধরেছেন থিম কারিগর ঈষিকা চন্দ্র ও দীপ দাস। ‘অপরাজিত’ ছবিটির কথা মনে থাকলেই দেখবেন সব দৃশ্য যেন হুবহু মিলে যাচ্ছে। মণ্ডপের শেষে আবার মা সর্বজয়ার সঙ্গে অপুর দেখা করতে যাওয়ার দৃশ্যও বাদ দেননি শিল্পী। দীস দাস বলছিলেন, “থিম এক হলেই প্রত্যেক শিল্পীই কিন্তু নিজস্ব ভাবনা দিয়ে সত্যজিতের কাহিনি ফুটিয়ে তুলছেন। এই মহৎ উদ্যেশ্যের অংশ হতে পারাটাও তো বড় ব্যাপার।”
এবার আপনাকে আরও খানিকটা এগিয়ে গিয়ে সরু গলি ধরে ঢুকে পড়তে হবে অপুর সংসারে। কালীঘাট নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিট ক্লাবের সভ্যবৃন্দরাই সেই সংসার সাজাচ্ছেন। ফিল্ম রিলের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে ছবির কাহিনি। আর প্রতিবারের মতো এবারও মণ্ডপ উদ্বোধন করা হবে প্রতিবন্ধী শিশুদের হাত দিয়ে। করোনা আবহে দুর্গাপুজোয় নিঃসন্দেহে দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে অপুর ট্রিলজির ‘ড্রাইভ ইন দর্শন’।
