shono
Advertisement

পোকার হাত থেকে কীভাবে রক্ষা করবেন বেগুন? জেনে নিন পদ্ধতি

বেগুন পোকার হাত বাঁচানোই বড় চ্যালেঞ্জ।
Posted: 07:44 PM Dec 06, 2023Updated: 07:44 PM Dec 06, 2023

প্রায় সারাবছর বেগুনের চাষ হয়। বেগুন একদিকে যেমন পুষ্টিকর খাবার অন্যদিকে এটি চাষ করে খুব সহজেই লাভবান হওয়া যায়। তবে বেগুন চাষ করতে গিয়ে কিছু পোকার আক্রমণে চাষিদের সমস্যায় পড়তে হয়। প্রতিকার লিখেছেন ইফকো কিসান সুবিধা লিমিটেডের ফার্ম টেলি উপদেষ্টা আশরাফুল হক।

Advertisement

ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা আক্রান্ত বেগুন মানুষের খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অন্যদিকে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। এ পোকার আক্রমণের ফলে বেগুনের ফলন মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। তাছাড়া গাছ ও বেগুন সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সঠিক সময়ে প্রয়োগ না করা হলে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ বেগুন এই পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঋতুভেদে বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণের মাত্রার ভিন্নতা দেখা যায়। উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া এই পোকার বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গ্রীষ্মকালে এই পোকার ব্যাপক আক্রমণ দেখা যায়। অন্যদিকে শীতকালে এই পোকার আক্রমণের হার তুলনামূলক কম থাকে। তাই এই পোকা দমনের ব্যবস্থাপনাও ঋতুভেদে আলাদা হওয়া বাঞ্চনীয়। গ্রীষ্মকালে সপ্তাহে অন্তত একবার পোকা আক্রান্ত ডগা ও ফল বাছাই করে নষ্ট করতে হবে।

ক্ষতির লক্ষণ: স্ত্রী মথ একটি একটি করে অথবা একসাথে (২-৫টি) পাতার তলার দিকে, কচি ডগা, ফুলের কুঁড়ি বা বড় ফলের নিচের দিকে ডিম পারে। স্ত্রী মথ ২৫০ টি ডিম পাড়ে। প্রথম অবস্থায় ডিমগুলি দুধের মতো সাদা পরবর্তীকালে কীড়া বের হওয়ার সময় লালচে রংয়ের হয়। সদ্য নির্গত কীড়া বৃদ্ধির অংশে অথবা ফুলের কুড়ির মধ্যে ও ফলে ছিদ্র করতে থাকে। পোকার আক্রমণ ফসলের প্রাথমিক অবস্থায় দেখা দিলে নরম কচি ডগা ও পরে ফলে ছিদ্র করে ভিতরের নরম অংশ কুরে কুরে খায় এবং প্রবেশের ছিদ্রটি তাদের বিষ্টা দিয়ে বন্ধ করে দেয়। পরে ল্যাদা (Larva) কচি ডগা ও ফলের ভিতর প্রবেশ করে ভিতরের অংশ খেতে থাকে। ফলস্বরূপ কচি ডগা নেতিয়ে ঝুলে পড়ে শুকিয়ে যায়।

জৈবিক ও পরিচর্যামূলক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা:

কৃষক নিজে চারা তৈরি করলে মশারি ব্যবহার করা উচিত। বেগুন খেতের চারিপাশে ১২ ফুট উচ্চতা মশারির নেট দিয়ে ঘিরে দিলে বেগুনের কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ক্ষেতের চারধারে অড়হর ও বরবটি গাছ লাগাতে হবে। অন্তবর্তী ফসল হিসাবে বেগুনের (২ টি সারি) সাথে ধনে (Coriander -এক সারি) অথবা মৌরি (Fennel -এক সারি) লাগালে এই পোকার আক্রমণ কম হয়।গাছ লাগানোর ১৫-২০দিনের মধ্যে ফেরোমোন ফাঁদ (লিউসি লিওর) ৩-৪ টি বিঘা প্রতি ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত আক্রান্ত ডগা ও বেগুন গাছ থেকে তুলে ভিতরের পোকা নষ্ট করতে হবে এবং জমি পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হবে। নিম তেল ৫০০০ পিপিএম ২-৩ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

[আরও পড়ুন: সহায় ইজরায়েলি প্রযুক্তি, অসময়ের সবজি পাওয়ার পথ দেখাচ্ছে এই কৃষি পদ্ধতি]

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: বেগুনের কান্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা অর্থনৈতিক ক্ষতির চরমসীমা অতিক্রম (Economic Threshold Level) করলে তবেই রাসায়নিক কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।। বেগুনের কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নলিখিত কীটনাশকগুলির মধ্যে যে কোনও একটি জলে গুলে আঠা বা স্টিকার সহযোগে স্প্রে করতে হবে।
১) চারা লাগানোর ১০ দিন পর একবার এবং ২৫-৩০ দিন পর একবার দানাদার ওষুধ ক্লোরানট্রানিলিপ্রোল ০.৪% জি ৫২ কেজি। বিঘা বা গাছ প্রতি ২-৩গ্রাম অথবা কার্টাপ হাইড্রোক্লোরাইড ৪% জি @ ২.৫-৩ কেজি/ বিঘা বা গাছ প্রতি ৫ গ্রাম ব্যবহার করে হালকা করে জল দিতে হবে।


২) Novaluron (নোভালিউরন) ১০% ইসি @১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
৩) Cartap Hydrochloride (কার্টাপ হাইড্রোক্লোরাইড) ৫০% SP @ ১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
8) Chlorantraniliprole (ক্লোরানট্রানিলিপ্রোল) ১৮.৫ % এসসি @ ১ মিলি প্রতি ৩ লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
৫) Spinosad (স্পিনোস্যাড) ৪৫% SC @ ১ মিলি প্রতি ৫ লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
৬) Flubendiamide (ফলুবেনডিয়ামাইড) ৩৯.৩৫% SC @ ২ মিলি প্রতি ১০লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
৭) Novaluron (নোভালিউরন) ৫.২৫% ও Indoxacarb (ইনডক্সকার্ব) ৪.৫% এসসি @১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

[আরও পড়ুন: ক্রমশ বাড়ছে মাখনার জনপ্রিয়তা, জেনে নিন চাষের পদ্ধতি]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement