অর্ণব আইচ: কলকাতার কোন এলাকায় পপুলার ফ্রন্টের (PFI) কতজন সদস্য রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আবার কতজন নেতা, তার তালিকা তৈরি শুরু করলেন গোয়েন্দারা। এই ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরের পক্ষে থানাগুলিকেও সতর্ক করে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। গোয়েন্দাদের কাছে খবর, নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পরও ভোল পালটে চাঁদা তুলছে পপুলার ফ্রন্ট। বজায় রাখছে বিভিন্ন কার্যকলাপও। একাধিক ছোট সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন বা এনজিওর নামে চলছে এই কার্যকলাপ। তাই রাজ্যের পিএফআই নেতাদের উপর নতুন করে শুরু হয়েছে গোয়েন্দাদের নজরদারি। পিএফআইয়ের হিট স্কোয়াড যাতে কলকাতা বা রাজ্যের কোনও জেলায় সক্রিয় না হয়, সেদিকেও নজর রাখছেন গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে যাতে দেওয়ালির উৎসবের আগে শহরে কোনওরকম নাশকতা না হয়, সেই ব্যাপারেও কলকাতার থানাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে ভিনরাজ্যের পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও সতর্ক করছেন এই রাজ্যের পুলিশকে। একইসঙ্গে এই নিষিদ্ধ সংগঠনের তহবিল সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও (ED)। কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গায় চলছে গোয়েন্দাদের নজরদারি।
[আরও পড়ুন: ‘কোনওদিনই মানুষের লড়াইয়ে ছিল না’, SSC চাকরীপ্রার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে কৌশিককে কটাক্ষ সৌগতর]
নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়ার আগে পূর্ব কলকাতার তিলজলায় পিএফআইয়ের মূল অফিসে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ (NIA)। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, তল্লাশির সময় তিলজলার একটি অফিস থেকে পপুলার ফ্রন্টের একটি খাম উদ্ধার হয়। তার ভিতর থেকে পাওয়া যায় নগদ ৩৫ হাজার টাকা। এ ছাড়াও একটি নথি এনআইএ আধিকারিকরা উদ্ধার করেন। সেই নথিতে লেখা ছিল পিএফআইয়ের তহবিলের কত টাকা কাদের কাছে পৌঁছেছে। সেই সূত্র ধরেও গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেন।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়ার আগে পপুলার ফ্রন্ট তাদের অন্য একটি সংগঠন ‘রিহ্যাব ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’এর মাধ্যমে দেশ ও বিদেশ থেকে প্রচুর তহবিলের টাকা জোগাড় করেছে। ওই টাকার একটি বড় অংশ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাওলার মাধ্যমে এই দেশে পৌঁছেছে। সিএএ-সহ বিভিন্ন আন্দোলনের ক্ষেত্রে ওই টাকা তহবিল হিসাবে আন্দোলনকারীদের হাতে পাঠানো হয়েছে, অভিযোগ এমনই।
[আরও পড়ুন: উত্তপ্ত মোমিনপুর: সুকান্তকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মিছিল বিজেপির, লালবাজারে শুভেন্দু]
এই ব্যাপারে তদন্ত করতে গিয়ে ইডি তিনটি বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের একাধিক অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকার সন্ধান পায়। আবার পপুলার ফ্রন্ট ও রিহ্যাব ইন্ডিয়ার ১৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক কোটিরও বেশি টাকা পায় ইডি। গত বছর উত্তরপ্রদেশের এসটিএফের হাতে গ্রেপ্তার হন পিএফআইয়ের হিট স্কোয়াডের সদস্য আনসাদ বদরুদ্দিন, যিনি তহবিলের তিন লাখ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। কলকাতার অফিস থেকে যে পিএফআই টাকার লেনদেন করত, সেই ব্যাপারে প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের মতে, নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পর পপুলার ফ্রন্ট বা পিএফআই ও সংযুক্ত কয়েকটি সংস্থা নিজেদের কার্যকলাপ বন্ধ করে দিলেও ভোল পাল্টে অন্য কয়েকটি সংস্থা, এমনকী, এনজিওর মাধ্যমেও চাঁদা তোলার চেষ্টা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। এ ছাড়াও পরোক্ষভাবে পিএফআই বা নিষিদ্ধ সংগঠনগুলির নেতাদের কার্যকলাপও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, সেই কারণেই কলকাতার গোয়েন্দা দপ্তর তৈরি করছে পিএফআইয়ের নেতা ও কর্মীদের তালিকা। সেই তালিকা তৈরির পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।