পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কের পুজোর প্রস্তুতি৷
শুভময় মণ্ডল: সে ছিল একদিন। আমাদের গ্রাম্য ছোটবেলার দিন। নদী-নালা-পুকুরঘেরা জীবনের মাঝে ছিল চড়ক আর রথের মেলা। নাগরদোলা, পাপড়ভাজার পাশাপাশি ছিল তালপাতার সিপাই আর পুতুলনাচের আসর। এই পুতুলনাচের ইতিহাস তো বহু পুরনো। সারা ভারতবর্ষে নানান লোকশিল্পে উঠে এসেছে পুতুলনাচ। ভিন্ন আঙ্গিকে সেই পুতুলনাচ ভারতের সনাতন সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। একটু যদি ফিরে তাকাই, দ্বাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। সাবেক সীমান্ধ্রের অনন্তপুর জেলার ধর্মাভারাম গ্রামের নির্মলাকুনটা এলাকার অন্যতম আকর্ষণ ছিল লেদার পাপেট ক্রাফট। সেই বিলুপ্তপ্রায় লোকশিল্পকেই এবার মণ্ডপসজ্জায় ফুটিয়ে তুলতে কোমর বেঁধেছে দক্ষিণের হেভিওয়েট পুজো সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক দুর্গোৎসব কমিটি। বিভিন্ন পশুর আলোকভেদী স্বচ্ছ পাতলা চামড়ার উপর বিচিত্র রঙে রাঙানো তুলির টানে আর বাঁশকাঠির অনবদ্য কারসাজি। লোকশিল্পীদের নিপুণ হাতযশে প্রাণ পায় সেই পুতুলনাচ। বিনোদনে ঠাসা ঐতিহ্যপূর্ণ সেই লোকশিল্পই এবার সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কের পুজোমণ্ডপে। শহরের পুজোর ইতিহাসে প্রথমবার এমন থিম যার সৃজনে শিল্পী সঞ্জীব সাহা।
[স্টেডিয়ামে বসে পুজো উপভোগ করতে চান? গন্তব্য হোক শহরের এই মণ্ডপ]
এই ইতিহাসের আগেও আরেক ইতিহাস আছে। আনুমানিক দেড় থেকে দু’হাজার বছর আগে চিনে প্রথম এই পুতুলনাচের জন্ম। তার পর তা ক্রমশ ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ফিলিপিন্স ছাড়াও অন্যান্য দেশে প্রচলন শুরু হয়। ক্রমশ তা ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে ‘টোলুবোম্মালাট্টা’ নামে বিখ্যাত হয়। তবে কালের নিয়মে এই লোকশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। পুতুলনাচের প্রদর্শনী ছেড়ে এখন ওই লোকশিল্পীরা অনেকেই আজ ঘর সাজানোর উপকরণ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এবছর লুপ্তপ্রায় শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা করছেন শিল্পী সঞ্জীব সাহা। তাঁকে সহযোগিতা করছেন লোকশিল্পী ডি রামানা এবং তাঁর সঙ্গীরা। যাঁরা সুদূর নির্মলাকুনটা গ্রাম থেকে এসেছেন কলকাতায়। মণ্ডপে বিভিন্ন শিল্পকলার পাশাপাশি একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল এই লেদার পাপেট শো। মণ্ডপে ঢুকলেই দেখা যাবে, মণ্ডপের গায়ে সাদা কাপড়ের ওপারে আলোর বিপরীতে সেই পুতুলনাচ প্রদর্শন করবেন। মণ্ডপসজ্জাতেও অভিনবত্বের ছোঁয়া রাখছেন শিল্পী।
[ইট দিয়ে এমন শিল্পও সম্ভব? শহরের এ মণ্ডপে গেলে বিস্মিত হবেনই]
থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রতিমা গড়ছেন শিল্পী সৌমেন পাল। আলোক নির্দেশনায় শিল্পী দেবব্রত মাইতি। গতবছর পুজোয় দর্শনার্থীদের স্বপ্নলোকে বিচরণের বন্দোবস্ত করেছিল সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক। শিল্পী প্রশান্ত পালের সৃজনে পুজোমণঅডপ ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছিল পুজোপ্রেমীদের। এবার পুজোর শহরে প্রথমবার লেদার পাপেট শো কতটা দর্শনার্থীদের মন কাড়ে এখন সেটাই দেখার। এবছর sangbadpratidin.in -এ সন্তোষপুরের এই কুলীন পুজোর যাবতীয় হালহকিকত জানতে পারবেন। ছবি, ভিডিওর জন্য চোখ রাখতেই হবে এখানে।
[শুধু দৃষ্টিতে নয়, সমাজসেবী সংঘে এবার অনুভবেরও পুজো]
The post বিলুপ্তপ্রায় পুতুলনাচের সাক্ষী হতে চান? পুজোয় গন্তব্য হোক সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক appeared first on Sangbad Pratidin.
