ইস্টবেঙ্গল: ৩ (ফাজিলা ২, শিল্কি)
নেপাল এপিএফ ক্লাব: ০
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বহু কাঙ্ক্ষিত ট্রফি এল কলকাতার লেসলি ক্লডিয়াস সরণির ক্লাবে। দেশের নাম উজ্জ্বল করল ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দল। নেপাল থেকে সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাবি মুকুট মাথায় দেশে ফিরবেন অ্যান্থনি অ্যান্ড্রুজের দল। মহিলাদের সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সংস্করণের ফাইনালে নেপালের এপিএফ ক্লাবকে ৩-০ গোলে হারিয়ে প্রবল শীতেও যেন বসন্তের রং ছড়িয়ে দিলেন ফাজিলা, সুলঞ্জনা, জ্যোতি, শিল্কিরা। ইতিহাস গড়লেন তাঁরা।
ফাইনালযুদ্ধে নামার আগে বুধবার লিগ পর্বের ম্যাচে নেপালের এপিএফ ক্লাবের বিরুদ্ধে নেমেছিল লাল-হলুদ। ম্যাচটি ড্র হলেও প্রতিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা মেপে নিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। যা ফাইনালে কাজ লাগল। শনিবার ফাইনাল দেখতে কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ভিড় জমিয়েছিলেন অসংখ্য দর্শক। প্রতিপক্ষ দেশের মাটিতে নামলেও ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে হাজির ছিলেন ভারতীয় সমর্থকরাও। ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ এপিএফ এফসি যথেষ্ট শক্তিশালী। করাচি সিটি এফসি-কে ১-০ গোলে হারিয়ে সাফের ফাইনালে উঠেছিল তারা। ‘মশাল গার্লস’দের সঙ্গেও লড়াই জমিয়ে দিয়েছিল নেপালের দল।
তবে ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেন সোনালি বুটের দৌড়ে থাকা ফাজিলা ইকওয়াপুট। ২১ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ডেডলক ভাঙেন উগান্ডার স্ট্রাইকার। ব্যস, তারপর আর রোখা যায়নি মশাল গার্লসদের। ৩৫ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে আসা ক্রস থেকে মাথা ছুঁইয়ে অনন্য গোল করেন শিল্কি দেবী। বাকি সময়েও দাপট ছিল লাল-হলুদের। প্রথমার্ধ শেষ হয় ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে ২-০ অবস্থায়।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই দাপট বজায় রাখে ইস্টবেঙ্গল। খেলা শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই স্কোর লাইন ৩-০ করেন ফাজিলা। দূরপাল্লার শট নেন তিনি। তবে এক্ষেত্রে অবশ্য গোলকিপারের ভুলও দায়ী। এর ২ মিনিট পর ফের সুযোগ পেয়েছিল লাল-হলুদ। ৫৬ মিনিটে গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন ফাজিলা। এরপর বেশ কয়েকবার এপিএফ ক্লাব আক্রমণ চালালেও অতি সজাগ ছিল লাল-হলুদ রক্ষণ। শেষ পর্যন্ত ইতিহাস গড়ে ৩-০ গোলে জয় পায় ইস্টবেঙ্গল। তবে আরও বেশি ব্যবধানে জয় পেতে পারত তারা। ভারতের প্রথম ক্লাব হিসাবে পুরুষ ও মহিলা, দুই বিভাগেই আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের নজির গড়ল ইস্টবেঙ্গল। প্রতিযোগিতায় ৯ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতলেন ফাজিলা। প্রতিযোগিতায় কোনও গোল না খেয়ে দুর্ভেদ্য থাকল লাল-হলুদ রক্ষণ।
উল্লেখ্য, প্রথম ম্যাচে ভুটানের ক্লাব ট্রান্সপোর্ট ইউনাইটেড লেডিস এফসিকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। এরপর পাকিস্তানের করাচি সিটির বিরুদ্ধে ২-০ গোলে জেতে লাল-হলুদের মহিলা দল। রবিবার বাংলাদেশের নাসরিন স্পোর্টস অ্যাকাডেমিকে ৭-০ গোলে ছত্রভঙ্গ করে ফাইনালে উঠেছিলেন সুলঞ্জনা রাউল, ফাজিলা ইকওয়াপুটরা। বুধবার শেষ রাউন্ড-রবিন ম্যাচে নেপালের এপিএফ ক্লাবের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করেছিল ইস্টবেঙ্গল। এবার ফাইনালেও বাজিমাত করল তারা।
এই নিয়ে পঞ্চম আন্তর্জাতিক ট্রফি এল লাল-হলুদ ক্লাব তাঁবুতে। ১৯৮৫ সালে কোকা-কোলা কাপ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গলের পুরুষ দল। ১৯৯৩-এ নেপালে জেতে ওয়াই ওয়াই কাপ। ২০০৩ সালে আসিয়ান ক্লাব কাপ, ২০০৪ সালে সান মিগুয়েল কাপ এবং শনিবার সাফ মহিলা ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব জিতলেন ইস্টবেঙ্গলের মেয়েরা। জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে কলকাতা ফিরবেন লাল-হলুদের মেয়েরা। এদিকে ট্রফি জিতে উৎসবের মেজাজ ইস্টবেঙ্গল শিবিরে। ট্রফি জিতে পশুপতিনাথ মন্দিরে গেলেন অ্যান্থনি অ্যান্ড্রুস। টিম হোটেলে ফিরে স্মরণীয় জয়কে কেক কেটে আরও স্মরণীয় করে রাখলেন লাল-হলুদের মেয়েরা। আর সাফ জয়ের অন্যতম কাণ্ডারি ফাজিলা জানালেন, প্রতিযোগিতা থেকে প্রাপ্ত পুরস্কারমূল্য নিজের এনজিও-তে তুলে দেবেন।
