shono
Advertisement

দুর্গাকে চামরের বাতাস করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ, রাসমণির পুজোর গল্প এখনও টানে ভক্তদের

প্রচলিত আছে এমন আরও কাহিনি। The post দুর্গাকে চামরের বাতাস করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ, রাসমণির পুজোর গল্প এখনও টানে ভক্তদের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 12:41 PM Oct 04, 2019Updated: 12:42 PM Oct 04, 2019

এই পুজোয় পদধূলি পড়েছিল স্বয়ং ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের। একবার এসেছিলেন স্ত্রীলোকের বেশে। এখনও এ বাড়ির দুর্গাপ্রতিমার মুখের রং তপ্ত কাঞ্চনবর্ণ। শোলার সাজে সজ্জিত। চালচিত্রে চণ্ডী ও পুরাণের বিভিন্ন কাহিনি। ঐতিহ‌্যশালী সেই পুজোর গল্প আজ। লিখলেন নব্যেন্দু হাজরা।

Advertisement

এ বাড়িতে মা দুর্গার পুজো শুরু হয় প্রতিপদ থেকে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, তিনদিনই কুমারীপুজো হয়। মাকে এখানে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। লুচি, মিষ্টি, বোঁদের ভোগ হয়। আজও পুরনো রীতি মেনে এ বাড়ির ঠাকুরদালানে বাড়ির মহিলারা প্রতিমার বাঁদিকে এবং পুরুষরা ডানদিকে দাঁড়ান। পুজোর বোধন হয় শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে। ইতিহাস থেকে জানা যায় জানবাজারের এই দুর্গাপুজোয় পায়ের ধুলো পড়েছিল ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের।

হ্যাঁ রানি রাসমণির বাড়ির পুজোর কথা হচ্ছে। কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো মানে সেই তালিকায় অবশ্যই থাকবে রানি রাসমণির বাড়ির পুজো। নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কয়েকশো বছরের ইতিহাস। জড়িয়ে আছে শ্রীরামকৃষ্ণের নানা স্মৃতি। আগে পুজোয় সাতটি পাঁঠা বলি হলেও ১৯৯২ সাল থেকে পশুবলি বন্ধ হয়। চালকুমড়ো, আখ বলি হয়। আগে সন্ধিপুজোয় বাড়ির সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হত।

[ আরও পড়ুন: পুজোর উপহার, যৌনকর্মীদের জন্য স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলার আশ্বাস মন্ত্রীর ]

এই পুজো রানি রাসমণির পুজো নামে পরিচিত হলেও ১৭৯৪ সালে পুজো শুরু করেছিলেন তাঁর শ্বশুর জমিদার এবং ব্যবসায়ী কৈবর্ত সম্প্রদায়ভুক্ত প্রীতিরাম মাড় (দাস)। জানবাজারের এই বাড়িটি ছাড়াও কলকাতার বেলেঘাটা, ভবানীপুর, ট্যাংরা অঞ্চলেও তাঁর অনেক বাড়ি ছিল, এ ছাড়াও সাবেক পূর্ববঙ্গে জমিদারিও ছিল। পরে পুজোটি আরও কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়। প্রীতিরামের মৃত্যুর পর জমিদারি ও পুজোর সব দায়িত্ব নেন তাঁর পুত্র রাজচন্দ্র দাস। স্বামীর মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সাল থেকে এই পুজো করেন রানি রাসমণি। সেই থেকে এই পুজো রানি রাসমণির বাড়ির পুজো নামেই প্রতিষ্ঠা পেয়ে এসেছে। রানির কোনও পুত্রসন্তান না থাকায় জামাইরাই এই বাড়িতে ছেলের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখন রানির পরিবারের ষষ্ঠ পুরুষ এই পুজোর আয়োজন করেন।
প্রীতিরাম নির্মিত ঠাকুরদালানে প্রতিটি ইট, কাঠ, পাথরে রয়েছে ইতিহাসের ছাপ। সেই সব ভঙ্গুর ইতিহাসের নমুনা আজও দেখা যায় ঠাকুরদালানের অন্দরমহলে। প্রীতিরাম মাড়ের পুজোটি হয় বর্তমান ১৩ রানি রাসমণি রোডের বাড়িতে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে প্রীতিরামের তৈরি পাঁচ খিলান ও দু’দালান বিশিষ্ট ঠাকুরদালানের বাইরের দালানের গায়ের নকশাগুলি এখনও দৃশ্যমান।

[ আরও পড়ুন: ঢাকে বোল ফুটিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন মন্তেশ্বরের দশভুজারা ]

একবার দুর্গাপুজোর সময় রাসমণির বাড়িতে রামকৃষ্ণ এসেছিলেন মহিলার বেশে। তাঁকে দেখে কেউ চিনতেই পারেননি বলে জানা যায়। সন্ধ্যারতির সময় ‘সখীবেশ’-এ দুর্গাপ্রতিমাকে চামর দিয়ে বাতাস করছিলেন স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ। শোনা যায় পুজোর দালানে মথুরবাবু দেখেছিলেন তাঁর স্ত্রী জগদম্বাদেবীর পাশে একজন স্ত্রীলোক মাতৃপ্রতিমাকে চামর দিয়ে বাতাস করছেন। তিনি চিনতে না পারলেও ভেবেছিলেন হয়তো নিমন্ত্রিত কোনও অতিথির স্ত্রী। পরে যখন তাঁর স্ত্রীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জগদম্বাদেবী বলেছিলেন যে, তাঁর পাশে চামর হাতে ভাবাবস্থায় ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ।

এই বাড়ির দুর্গাপ্রতিমার মুখের রং হয় তপ্ত কাঞ্চন বর্ণ। হাতে গোলা রং দিয়ে প্রতিমায় রং করা হয়। তাতে গ্রামবাংলার প্রাচীন শিল্পের প্রভাব লক্ষণীয়। বংশপরম্পরায় আহমেদপুর থেকে আসেন প্রতিমাশিল্পী। শোলার সাজে সজ্জিত প্রতিমা। সাজ আসে বর্ধমান থেকে। শহরে পুরনো পুজোগুলির মধ্যে এই পরিবারের প্রতিমা আজও নিজেকে চেনায় আলাদা করে। তবে দেবীর চালচিত্রে থাকে বৈচিত্র। আঁকা হয় চণ্ডী ও পুরাণের নানা কাহিনি। এ ছাড়াও থাকে শুম্ভ-নিশুম্ভ বধ, শ্রীকৃষ্ণের গোপিনীদের বস্ত্রহরণ, গোপিনীদের সঙ্গে জলকেলি এরকম নানান পৌরাণিক কাহিনি। ২২৬ বছর ধরে বীরভূমের চিত্রকররা এই কাজ করে আসছেন।

The post দুর্গাকে চামরের বাতাস করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ, রাসমণির পুজোর গল্প এখনও টানে ভক্তদের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup মহানগর toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার