অর্ণব আইচ: নাশকতার জন্য গাড়ির তলায় লাগানো থাকতে পারে বিস্ফোরক। যা রুখতে এবার বিশেষ পদক্ষেপ করল লালাবাজার। মাটির তলায় বসানো হল স্ক্যানার ক্যামেরা। আর তাতেই উঠছে গাড়ির তলার অংশের প্রত্যেকটি ইঞ্চির ছবি। নবান্নের সুরক্ষায় এবার মাটির নিচে বসল ‘আন্ডার ভেহিক্যাল স্ক্যানার’। ক্রমে কলকাতার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেও বসানো হতে পারে এই ‘আন্ডার ভেহিক্যাল স্ক্যানার সিস্টেম’বা ইউভিএসএস।
লালবাজারের সূত্রে খবর, বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও কয়েকটি বৈঠকের পরই বাড়ানো হয়েছে নবান্নের নিরাপত্তা। যেমন নজরদারি রাখা হচ্ছে নবান্নে আসা গাড়িগুলোর উপর, তেমনই দর্শনার্থীদের উপর রাখা হচ্ছে বিশেষ নজর। নজরদারির জন্য প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেখে নেওয়া হয়, আগে বসানো সিসিটিভির ক্যামেরায় কোন অঞ্চলগুলোর দৃশ্য ধরা পড়ছে। যে অংশগুলোর দৃশ্য ধরা পড়ছিল না, সেই অংশগুলোতে বসানো হয় আধুনিক সিসিটিভির ক্যামেরা। এরকম প্রায় ২৫টি জায়গায় সিসিটিভির ক্যামেরা বসানো হয়েছে, যেগুলোর ফুটেজ আরও স্পষ্ট ও ব্যক্তি, গাড়ি শনাক্তকরণ আরও সহজ। এ ছাড়াও নিরাপত্তার কারণে বসানো হয়েছে বুম ব্যারিয়ার। নবান্নের আশপাশেও যাতে ইচ্ছামতো কেউ ঘোরাঘুরি করতে না পারেন, তার জন্যই রয়েছে নজরদারি।
[আরও পড়ুন:অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগের জের, যাদবপুরে বন্ধ সেমিস্টারের পরীক্ষা!]
লালবাজারের এক কর্তা জানান, নবান্নের ভিতর নিরাপত্তার জন্য দর্শনার্থীদের উপরও রাখা হচ্ছে বিশেষ নজর। যে পুলিশ আধিকারিক বা পুলিশকর্মীরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কর্মীদেরও পরীক্ষা করতে। এ ছাড়াও প্রত্যেকটি তলার দর্শনার্থীর জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ‘ভিজিটার্স কার্ড’। দর্শনার্থীদের ওই কার্ড গলায় ঝোলানো আবশ্যিক। এছাড়াও ওই কার্ডে বড় করে লেখা কোন তলার দর্শনার্থী তিনি। সেই ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি তলায় থাকা পুলিশ আধিকারিক বা গোয়েন্দা দপ্তরের আধিকারিকরা দূর থেকে দেখে বুঝতে পারবেন যে, তিনি কোন তলায় আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তিনি যে তলায় কাজে এসেছেন, সেই তলায় কাজ সারার পর তাঁকে চলে যেতে হবে। তিনি যদি অন্য কোনও তলায় ঘোরাঘুরি করেন, তখনই তাঁকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। অন্য তলায় তিনি কেন এসেছেন, সেই জবাবদিহিও তাঁকে করতে হতে পারে।
জানা গিয়েছে, নিরাপত্তার কারণেই নবান্ন চত্বরে কোনও গাড়ি প্রবেশের আগে বসানো হয়েছে ‘বোলার্ড’। ধাতব থামের চেহারার এই ‘বোলার্ডে’র সামনেই থেমে যেতে হয় গাড়িকে। আর বোলার্ডের সামনেই মাটি খুঁড়ে বসানো হয়েছে ‘আন্ডার ভেহিক্যাল স্ক্যানার’। কলকাতা ও রাজ্যের গোয়েন্দা দপ্তরের কাছে গাড়ির তলা পরীক্ষার জন্য হাতে ব্যবহার করা যন্ত্র রয়েছে।
কিন্তু লালবাজারের মতে, অত্যাধুনিক এই ‘আন্ডার ভেহিক্যাল স্ক্যানার’-এর জুড়ি নেই। এই স্ক্যানারে যুক্ত ক্যামেরায় উঠছে গাড়ির তলার অংশের ছবি। মনিটরে সেই ছবিই পর্যবেক্ষণ করছেন গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিকরা। তাঁদের সবুজ সংকেত পেলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেমে যাচ্ছে ‘বোলার্ড’বা ধাতব থাম। এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। নবান্নে এই আধুনিক পদ্ধতিটি এখনও সফল। এবার কলকাতার অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এই পদ্ধতি চালু করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।