ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: প্রসূতির কানের খোলই বলে দেবে তাঁর বুকের দুধ বাচ্চার পক্ষে কতটা উপকারী! শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়। ভারতের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমীক্ষা করে এই তথ্য হাতেকলমে প্রমাণ করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ব বিভাগ। সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘হিউম্যান বায়োলজি রিভিউ’ নামের আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Calcutta) দুই অধ্যাপক অরূপরতন বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপ্তেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের ওই গবেষণা আদৃত হয়েছে চিকিৎসক মহলেও।
সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর কানে খোল তৈরি হয় প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে। মানুষের কানের খোলের মধ্যে থাকে ‘সেরুমেন’ জাতীয় এক রাসায়নিক। মোমের মতো বস্তুটি বাইরের ধুলোময়লাকে আটকে দেয়। দুই বাঙালি গবেষক প্রমাণ করেছেন, মানুষের কানের খোলে থাকা সেরুমেন আর মাতৃদুগ্ধে থাকা ‘কোলোস্ট্রামে’র উৎস মানবদেহের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। তাঁদের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, যে সব গভর্বতী মায়ের কানের খোল ভিজে, তাঁদের বুকের দুধে ‘কোলোস্ট্রাম’ যথেষ্ট পরিমাণে মজুত। যাঁদের কানের খোল শুকনো, তাঁদের তুলনামূলক ভাবে কম। অধ্যাপক অরূপরতন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মায়ের দুধ অমৃতসমান। তবে সদ্যোজাতর জীবনীশক্তি বাড়াতে মায়ের গাঢ় হলুদ রংয়ের কোলোস্ট্রামযুক্ত দুধের গুরুত্ব অপরিসীম।’’
[আরও পড়ুন: ইতিহাস তৈরি হল ফুটবল মাঠে, প্রথমবার সাদা কার্ড দেখালেন রেফারি]
কিন্তু ঘটনা হল, সন্তান জন্মের চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে হলুদ রংয়ের এই দুধ আর থাকে না। সহযোগী দীপ্তেন্দুবাবুর আক্ষেপ, ‘‘অজ্ঞতার কারণে এখনও অনেকে অত্যধিক অ্যান্টিবডি সম্পন্ন এই দুধ সদ্যোজাতকে খেতে দেন না। ভাবেন, তাতে ক্ষতি হবে। এই মিথ ভাঙতে গবেষকদের মতো চিকিৎসকদেরও ভূমিকা নেওয়া দরকার। ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।’’ ওঁদের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, একটি বিশেষ ধরনের জিনের সুবাদে কোলোস্ট্রামের তারতম্য হয়। কোলেস্টেরলের সঙ্গেও তার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক।
তাহলে কী করণীয়?
দুই গবেষকের প্রস্তাব, বিয়ের আগে অথবা গভর্বতী হওয়ার আগে মহিলারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কানের খোলের সেরুনেম পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করলেই ভাবী সন্তান যথেষ্ট পরিমাণে কোলোস্ট্রামযুক্ত মায়ের দুধ পাবে। খাস কলকাতা অথবা পাহাড়ের উপজাতি অথবা শুষ্ক জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জেলায় এই সমীক্ষা হয়েছে। সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশিত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সমীক্ষাপত্রে।