সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৪০ দিন ধরে জঙ্গলবন্দি। কার্যত মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কোনওমতে জীবন ফিরে পেলেন মার্কিন মহিলা। জানা যাচ্ছে, গভীর জঙ্গলের মধ্যে গাছের গায়ে শিকলে বেঁধে ফেলে গিয়েছিল তাঁর স্বামী। দিনের পর ওই অবস্থায় থেকে বাঁচার আশা কার্যত ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুর প্রমাদ গুনছিলেন ললিতা কায়ি কুমার এস নামের ওই মহিলা। ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর সামনে দেবদূতের মতো হাজির হল এক পুলিশ। মহিলাকে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা চলছে তাঁর।
হলিউডের অ্যাডভেঞ্চার সিনেমাকে হার মানানোর মতো এমনই ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে মহারাষ্ট্রের সিন্ধুদূর্গ জেলায়। জানা গিয়েছে, শনিবার সনুরলি গ্রামের কাছে জঙ্গলে ঢুকেছিলেন স্থানীয় এক শেপার্ড। হঠাৎ গভীর জঙ্গলের ভিতর থেকে এক কান্নার আওয়াজ শুনতে পান তিনি। সেই শব্দ লক্ষ্য করে জঙ্গলের মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে তিনি দেখেন, গাছের সঙ্গে শিকলে বাঁধা এক মহিলা ক্ষীণ স্বরে কোনওমতে সাহায্যের আর্তি জানাচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের খবর দেন ওই ব্যক্তি। পুলিশ এসে শনিবার সন্ধ্যে নাগাদ উদ্ধার করে ওই মহিলাকে। মহিলার শারীরিক অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিল খাওয়া দাওয়া তো দূর কথাই বলতে পারছিলেন না তিনি। জঙ্গলের মধ্যেই প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ৩ পড়ুয়ার মৃত্যুতে ‘বুলডোজার অ্যাকশন’ দিল্লিতে, গুঁড়িয়ে দেওয়া হল অবৈধ নির্মাণ]
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, আমেরিকার বাসিন্দা হলেও গত ১০ বছর ধরে তামিলনাড়ুতে ছিলেন বছর পঞ্চাশের ললিতা। যদিও এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে থেকে ওই মহিলা এতটাই মানসিক ধাক্কা পেয়েছেন যে বর্তমানে কথা বলার মতো অবস্থায় তিনি নেই। কাগজে লিখে তাঁর সঙ্গে কোনওমতে কথাবার্তা চালানো হচ্ছে। সেই ভাবেই জানা গিয়েছে, গত ৪০ দিন ধরে শিকল বাঁধা জঙ্গলে বন্দি ছিলেন তিনি। কে বা কারা তাঁকে জঙ্গলে শিকলে বেঁধে রেখে গিয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, সাংসারিক বিবাদের জেরে তাঁর স্বামীই এভাবে তাঁকে জঙ্গলে বেঁধে রেখে চলে যায়।
গত ৪০ দিন ধরে জঙ্গলে শিকলের বৃত্তের মধ্যে অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে কোনওমতে বেঁচেছিলেন মহিলা। অতঃপর নিতান্ত সৌভাগ্যবশত ওই শেপার্ডের দৌলতে উদ্ধার পেলেন তিনি। এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মহিলা কিছুটা ধাতস্ত হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোটা বিষয়টি জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আপাতত মহিলার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া পাসপোর্ট-সহ অন্যান্য নথি খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে ভারতে আসার পর ওই মহিলার ভিসার মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পরও বেআইনিভাবে ভারতে ছিলেন তিনি। এখানে তাঁর কোনও আত্মীয় রয়েছে কিনা তাও জানার চেষ্টা চলছে।