সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইন্দোর টেস্ট তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল। আইসিসি ইন্দোরের বাইশ গজকে ‘পুওর’ আখ্যা দেয়। তা নিয়ে অনেক জল গড়ায়।
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের (Narendra Modi Stadium) পিচ নিয়েও জল্পনা ছিল। রবি শাস্ত্রীর (Ravi Shastri) মতো প্রাক্তন কোচ পর্যন্ত বলেছিলেন, এখানকার পিচেও বল ঘুরবে। কিন্তু ইন্দোরের মতো ভরাডুবি হয়নি নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। বরং পিচ বদলাতেই টেস্ট ম্যাচ ফিরল স্বমেজাজে। উইকেট হারাল অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয় বোলাররা রক্তের স্বাদ পেয়ে চেপে ধরার চেষ্টাও করল। কিন্তু বুকের উপরে চেপে বসা পাথরটা সরালেন অজি ব্যাটাররাই। টেস্ট ক্রিকেট তো এরকমই। এক সেশনে আঘাত তো পরের সেশনেই প্রত্যাঘাত।
[আরও পড়ুন: বিজেপির সঙ্গ বরদাস্ত নয়! নাগাল্যান্ডের রাজ্য কমিটি ভেঙে দিলেন নীতীশ, এখনও নীরব পওয়ার]
বৃহস্পতিবার টস জিতে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট নেয়। প্রথম দিনের শেষে অজিদের রান ৪ উইকেটে ২৫৫। ক্রিজে রয়েছেন উসমান খোয়াজা (অপরাজিত ১০৪) ও ক্যামেরন গ্রিন (অপরাজিত ৪৯)। একাধিক অজি ক্রিকেটার ফিরে গিয়েছেন দেশে। নেতৃত্ব হাতে পেয়ে স্মিথ ব্যবধান কমিয়েছেন ইন্দোরেই। চতুর্থ টেস্টেও স্মিথের হাতেই দলের অধিনায়কের রিমোট কন্ট্রোল। ওপেন করতে নামেন ট্রেভিস হেড ও খোয়াজা। ওপেনিং জুটিতে দু’ জনে ৬১ রান তোলেন। হেডকে ব্যক্তিগত ৩২ রানে ফেরান অশ্বিন। লাবুশানের (৩) উইকেট উপড়ে দেন শামি। ৭২ রানে ২ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু উসমান খোয়াজা ও স্টিভ স্মিথ অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস গোছানোর কাজ শুরু করেন তাঁরা। স্মিথ যখন ফেরেন তখন অস্ট্রেলিয়ার রান ৩ উইকেটে ১৫১ রান। ৭৯ রান জোড়েন তাঁরা দু’ জনে। পিটার হ্যান্ডসকম্বও বড় রান পাননি। মাত্র ১৭ রানে ফেরেন তিনি। স্কোর বোর্ড বলছিল, অস্ট্রেলিয়ার রান ৪ উইকেটে ১৭০। এই সময় থেকে ইনিংস গড়ার কাজ আবার শুরু করেন ক্যামেরন গ্রিন ও উসমান খোয়াজা। প্রথম দিনের খেলা শেষ হওয়ার কিছু আগে খোয়াজা সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেন গ্রিনও। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে মহম্মদ শামি ২টি উইকেট নেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা ১টি করে উইকেট নেন।
এদিকে বল গড়ানোর আগে থেকেই ‘সাজ সাজ’ রব ছিল নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামের বাইরে বড় বড় ব্যানার। কোথাও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি, তো কোথাও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজের (Anthony Albanese) ছবি। কোথাও আবার দু’জন একসঙ্গে। কোনও কোনও ব্যানারে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবিও আছে বটে, কিন্তু তাতে ক্রিকেটাররা গৌণ, প্রধানমন্ত্রীই মুখ্য। স্টেডিয়ামের বাইরের সজ্জা দেখেই বোঝা গিয়েছিল ম্যাচের আগে বড়সড় কোনও চমকপ্রদ অনুষ্ঠান হতে চলেছে। হলও তাই।
এদিন ম্যাচের ৪৫ মিনিট আগে স্টেডিয়ামে ঢুকলেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। শুরু হয়ে গেল ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটীয় বন্ধুত্বের ৭৫ বছরের উদযাপন। মাঠে তখন জনপ্রিয় গুজরাটি গায়িকা পারফর্ম করছেন। সেই সঙ্গে চলছে গুজরাটের সনাতনী নৃত্যানুষ্ঠান। এরপরই দেখা গেল দুই অধিনায়ক দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলেন। তাঁদের হাতে দুই দেশের ‘ক্যাপ’ তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রীরাই। তারপর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং অধিনায়ক হাতে হাত রেখে ফটো সেশনের জন্য ‘পোজ’ দিলেন। ততক্ষণে স্টেডিয়ামজুড়ে ‘মোদি-মোদি’ রব শুরু হয়ে গিয়েছে। ফটো সেশন সারার পর সুসজ্জিত গাড়িতে গোটা স্টেডিয়াম ঘুরলেন দুই প্রধানমন্ত্রী। তখনও বারবার মোদি-মোদি রব উঠেছে। পরে মাঠে নেমে সব ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন মোদি এবং অ্যালবানিজ। এর ফাঁকে আবার বোর্ড সচিব জয় শাহ দুই প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক বিশেষ উপহার দিয়েছেন। স্টেডিয়ামের ভিতরে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটীয় বন্ধুত্বের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেটাও ঘুরে দেখেন দুই প্রধানমন্ত্রী। আর খেলা শুরু হতেই ব্যাট ও বলের লড়াই দেখা গেল। উপভোগ্য হয়ে উঠল চতুর্থ টেস্টের প্রথম দিন।