শেখর চন্দ্র, আসানসোল: অপসারিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর সাধন চক্রবর্তী। তাকে অপসারণ করেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সি ভি আনন্দ বোস। উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী দুর্নীতিগ্রস্ত, অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন একতরফাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল সমর্থিত অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার নেতৃত্বে শিক্ষক-অশিক্ষক এবং পড়ুয়ারাও লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। হাই কোর্টের নির্দেশে পুলিশের সাহায্য নিয়ে শেষ পর্যন্ত উপাচার্য ডক্টর সাধন চক্রবর্তীকে কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ করতে হয়।
কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। আন্দোলন চলতেই থাকে। সূত্রের খবর, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপালের শনিবার এক অনুষ্ঠান ছিল। সেখানেই কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য-সহ আন্দোলনকারীদের ডাকা হয়েছিল কথোপকথনের জন্য কিন্তু উপাচার্য আসেননি। আন্দোলনকারীরা এসেছিলেন তারা সমস্ত অভিযোগ করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আসেননি। এরপরেই বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে অপসারণ করা হয় এবং ই-মেল মারফত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন করের কাছে সেই বার্তা এসে পৌঁছয়।
গত ১৩ মার্চ থেকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধরনা অবস্থানে বসেন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অনুমোদিত অধ্যাপক ও শিক্ষাকর্মী সংগঠনের সদস্যরা। পরে সেই আন্দোলনে সামিল হয় পড়ুয়াদেরও একাংশ। এই আন্দোলনের মাঝে দু’বার উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এসে প্রশাসনিক ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের বাধায় দু’বারই তাঁকে ফিরে যেতে হয়। এই আন্দোলন তোলার আবেদন কর্ণপাত করেননি আন্দোলনকারীরা। তিনি আসানসোল উত্তর থানার পুলিশেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
[আরও পড়ুন: প্রচণ্ড গরমে বাড়ছে চাহিদা, এসি ও এয়ার কুলারকে টেক্কা তালপাতার হাতপাখার]
শেষ পর্যন্ত তিনি এপ্রিল মাসে গোটা পরিস্থিতির কথা বলে কলকাতা হাই কোর্টে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় হাই কোর্ট প্রশাসনিক ভবনের ৫০ মিটারের বাইরে পদ্ধতি মেনে আন্দোলন করার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি বলা হয়, তারা কোনও আধিকারিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। গোটা বিষয়টি পুলিশকে দেখতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই মতো প্রথমবার কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। তাকে দেখে ব্যাপক স্লোগান দেওয়া হয়। তিনি সেদিন ঘন্টাদুয়েকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। ওইদিন রাজ্যপালের বাঁকুড়া সফর ছিল। আসানসোল আসার কথা ছিল। রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয় আচার্যের আসার কথা ছিল কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি আসেননি। তাই উপাচার্যও দু’ঘণ্টা থেকে ফিরে যান।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ৩৪ জন উপাচার্যের নিয়োগ অবৈধভাবে হয়েছে এই নিয়ে হাই কোর্ট একটি মামলাও চলছিল। সেখানে ৩৪ নম্বরে এই উপাচার্য ডক্টর সাধন চক্রবর্তীর নামও ছিল। তাদেরকে রাজ্য সরকারের তরফে তিন মাসের এক্সটেনশনও দেওয়া হয়েছিল। তাই এই উপাচার্যর নিয়োগ অনৈতিক। এই দাবিতে আন্দোলন কিন্তু লাগাতার চলছিল। শেষ পর্যন্ত উপাচার্য অপসারিত হলেন।