অটোরিকশা থেকে নেমে সোয়েটার, স্কার্ফ পরে বিদ্যা বালন কাহানি ২-এর প্রচারে এসে বললেন– বিদ্যা বাগচী থেকে দুর্গা রানি সিং-এর চরিত্রে পৌঁছনোর মাঝখানে ছিল পরিচালক সুজয় ঘোষের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি, দূরত্ব এবং সেটা কাটিয়ে ওঠার গল্প৷ শুনলেন তপন বকসি
সংবাদ প্রতিদিন: এই যে আপনার বাড়ি থেকে এতটা রাস্তা অটোরিকশায় এলেন, রিকশাচালক কিংবা পথ-চলতি মানুষ আপনাকে চিনতে পেরেছেন?
বিদ্যা বালন: (হেসে) খুব আশ্চর্যজনকভাবে, না৷ রিকশায় উঠে আমি রিকশাচালককে বললাম আমি জুহু পিভিআর যাব৷ উনি আমাকে সোজা নিয়ে চলে এলেন৷ চিনতে পারেননি আমাকে৷ এমনকী, এখানে এসে আমি রিকশা থেকে নেমে সোজা অডিটোরিয়ামে ঢুকে পড়ছিলাম ভাড়া না দিয়েই৷ কেননা ভাড়াটা আমাদের ইউনিট থেকে দিয়ে দেওয়ার কথা৷ আমি মনে মনে ভাবছিলাম এই বোধহয় রিকশাচালক আমাকে দৌড়ে এসে ধরবেন ভাড়ার জন্য৷ তা হয়নি৷ আমি হলে ঢুকে যেতে পেরেছি৷
সংবাদ প্রতিদিন: আপনাকে না চিনতে পারার একটা বড় কারণ বোঝাই যাচ্ছে৷ আপনার এই ‘দুর্গা রানি’-র পোশাক৷ চুল বাঁধার স্টাইল৷ একেবারে কোনও সাধারণ চাকরি করা মেয়ের লুক৷ তাই না?
বিদ্যা বালন: আমারও প্রথম ধাক্কায় সেটাই মনে হচ্ছে৷ তার উপর সঙ্গে লেদারের এই ঢাউস ব্যাগ৷ শিল্পীরা ঠিক এভাবে বেশিরভাগ সময়ে রাস্তায় বেরোন না৷ তার উপর সোয়েটার, পায়ে স্পোর্টস শু, সালোয়ার৷ সব মিলিয়েই হয়েছে ব্যাপারটা৷
সংবাদ প্রতিদিন: ‘কাহানি’-র এতবড় সাফল্যের পর সিকুয়েল খুব স্বাভাবিকভাবেই সবাই আশা করেছিলেন৷ অথচ ‘কাহানি’ থেকে সিকুয়েল তৈরি হওয়ার মাঝপর্বে যা ঘটে গেল, তা দিয়েই ‘কাহানি’-র অন্য আর একটা সিকুয়েল হয়ে যায়৷ কেন হল এটা?
বিদ্যা বালন: মানছি কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছিল৷ যার জন্য কিছু ঘটনা যা সময়ের মধ্যে ঘটা উচিত ছিল, তা ঘটেনি৷ এই সময়টা অনেকটা সময়৷ সবই মানছি৷ আসলে সুজয় ‘কাহানি ২’-এর জন্য যখন প্রথম আমাকে বলল, তখন আমার একটা হেলথ ইস্যু চলছিল৷ পরে সেটা সেখানেই থেমে থাকল না৷ হয়তো দু’পক্ষ থেকেই কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল৷ কিন্তু যখন আবার আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হল, তারপর আমি সুজয়ের দু’দুটো প্রোডাকশনে কাজ করলাম৷ অত অল্প সময়ের মধ্যে৷ তার মানে বোঝাপড়া না থাকলে এটা হয় না৷ যে ভুল বোঝাবুঝিটা হয়েছিল সেটা সাময়িক৷ এই ধোঁয়াশাটা কেটে যাওয়ার পর আমার সঙ্গে সুজয়ের আবার কাজের জগতে ফিরে আসায় কোনও অসুবিধা হয়নি৷ আমি সুজয়ের প্রোডাকশনে ‘তিন’-এ কাজ করলাম৷ ‘তিন’-এর শুটিং শেষ হতে না হতেই ‘কাহানি ২’-র শুটিং শুরু করে দিলাম৷
সংবাদ প্রতিদিন: ‘কাহানি ২’-এর ট্রেলার দেখতে দেখতে বোঝা গেল এই ছবিতে আপনার দুটো নাম৷ একটা ‘বিদ্যা’৷ অন্যটা ‘দুর্গা রানি সিং’৷ আগের ‘কাহানি’ থেকে গল্পটা তার মানে এভাবেই এগোচ্ছে?
বিদ্যা বালন: ‘কাহানি ২’-এ আমার দুটো নাম৷ ‘বিদ্যা’ আর ‘দুর্গা রানি’৷ ঠিক৷ এর বেশি আর কিছু বলতে পারব না৷
সংবাদ প্রতিদিন: ‘কাহানি ২’-এ কি আপনি আবারও সেই ‘র’-এর এজেন্ট হিসাবেই কাজ করছেন?
বিদ্যা বালন: প্রশ্নটা আমি শুনতে পেলাম না৷ (হাসি) এ জন্য আপনাদের ছবিটা দেখতে হবে৷
সংবাদ প্রতিদিন: ‘কাহানি ২’-র মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিতে একটা নতুন টেকনিক দেখা গেল৷ যেখানে পোস্টারে আপনার মুখের ছবি৷ মাথার ওপর লেখা ওয়ান্টেড৷ গায়ের রং, পরিষ্কার৷ উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, নাম… দুর্গা রানি সিং৷ কেউ খোঁজ পেলে ‘কাহানি ২’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জানাবেন৷
বিদ্যা বালন: এই মার্কেটিং টেকনিক নিয়ে কয়েকটা কথা বলি৷ নিখোঁজের ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপনটা কয়েকটা খবরের কাগজেও বেরিয়েছে৷ আসলে এটা ছবির ক্যাম্পেন৷ আমার বাড়িতে যে কাজের মেয়েটা আছে, ও আমার বাড়িতে অনেকদিনের লোক৷ আমাকে খুব ভাল করে জানে, চেনে৷ কাগজে এরকম একটা নিরুদ্দেশ মেয়ের ছবি দেখে আমার ছবি বলে ভুল করছে৷ তাই কাজে এসে আমাকে জিজ্ঞেসই করে বসল, তোমার কি সত্যিই কোনও সমস্যা হয়েছে? আমি প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি৷ পরে যখন ও ওই বিজ্ঞাপনের কথাগুলোই একটা একটা করে বলতে শুরু করল, আমি বুঝতে পারলাম এটা ‘কাহানি ২’ বিজ্ঞাপনের ফল৷ তারপর আমি অনেকক্ষণ ধরে এত হেসেছি যে বলার নয়৷ তারপর আমি আমার ছবির প্রযোজক, পরিচালক থেকে শুরু করে ইউনিট মেম্বারদের সবাইকে জনে জনে ফোন করে বলেছি ঘটনাটি৷ আরেকটি ঘটনা হল– আমার ফোনে আমি একটা মেসেজ দেখলাম৷ কোনও এক ভদ্রমহিলা বলতে চাইছেন যে তাঁর ছোট মেয়ে স্কুলেই যেতে চাইছে না৷ ভয় পাচ্ছে যদি ‘দুর্গা রানি সিং’ এসে তাকে ধরে নিয়ে চলে যায়৷ আমি জানি না সেই মেয়েটার এটা স্কুল না যাওয়ার একটা বাহানা না কি সত্যিই আমাদের ‘কাহানি ২’-র ‘দুর্গা রানি সিং’-এর মাহাত্ম্য৷ আমি তো মনে মনে চাইছিলাম আমার মুখের ছবি দেওয়া সব বিজ্ঞাপনের নিচে ‘দুর্গা রানি সিং’ নামটা কেটে দিয়ে ‘বিদ্যা বালন’ লিখে দিই৷ কেন না ছবিটা আমার আর সেই ছবি দেখে সবাই আমাকেই ‘দুর্গা রানি’র সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে মিশিয়ে ফেলছেন৷
The post দুর্গা রানি সিংয়ের ভয়ে স্কুলে যেতে চাইছে না বাচ্চারা: বিদ্যা বালন appeared first on Sangbad Pratidin.