বিশ্বদীপ দে: দেখতে দেখতে ৬ বছর। কলকাতা কমিক্স কার্নিভ্যাল ক্রমেই শীতের কলকাতার নতুন সংযোজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলছে। তবে এবার বদলেছে স্থান। 'ধন ধান্য' থেকে এবার কার্নিভ্যাল হাজির সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে। কিন্তু স্থানিক পরিবর্তনে আনন্দ-হুল্লোড়ের ছবিটা একটুও বদলায়নি। শনিবার দুপুর গড়িয়ে যত বিকেল হল তত বাড়ল ভিড়। মার্ভেল থেকে ডিসি, পুরনো ইন্দ্রজাল কমিক্স হাজির সব্বাই। বই থেকে আর্টওয়ার্ক, পোস্টার, স্টিকার… কী নেই? এমন মজার শরিক হতে বয়স কোনও বাধা হতে পারে না। একদিকে নস্ট্যালজিয়া, অন্যদিকে সাম্প্রতিক আর্টওয়ার্কের উপস্থিতি- একই ছাদের তলায় এক সুবিশাল কমিক্স ব্রহ্মাণ্ড!
কথা হচ্ছিল কলকাতা কমিক্স কার্নিভ্যালের মূল উদ্যোক্তা শুভময় কুণ্ডুর সঙ্গে। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানালেন, ''আগের বারের চেয়েও এবার বেশি লোক এসেছে। খুব ভালো লাগছে দেখে যে দিনে দিনে আমাদের দল ভারী হচ্ছে। আমাদের মূল টার্গেট নবীন প্রজন্ম। খানিকটা হলেও তাদের আমরা প্রভাবিত করতে পেরেছি। সেটা যোগদান থেকেই একেবারে পরিষ্কার।''
আনন্দ আয়োজন। ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু
এই বছর নারায়ণ দেবনাথের শতবার্ষিকী। কিংবদন্তি কমিক্স শিল্পীকে বিশেষ ভাবে সম্মানিত করা হচ্ছে কার্নিভ্যালে। ঢোকার মুখে প্রবেশদ্বারে সবচেয়ে উঁচুতে হাস্যরত শিল্পীকে দেখলে মন নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দেবেই। অন্যতম উদ্যোক্তা সুপর্ণ সরকারের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বললেন, ''কলকাতা কমিক্সের তরফ থেকে আমরা এবারের উৎসব উৎসর্গ করেছি ওঁকে। একটু আগেই নারায়ণ দেবনাথের শতবর্ষ নিয়ে একটা প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছে। সেখানে ওঁর কাজের বিভিন্ন দিকের কথা যেমন বলা হয়েছে, তেমনই উঠে এসেছে ওঁর জীবনের নানা কথাও।''
নারায়ণ দেবনাথকে নিয়ে সুপর্ণ সরকারের প্রেজেন্টেশন। ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু
বিকেল থেকে শুরু হয়ে গেল কস প্লে। ছোটবেলায় মিকি মাউস বা স্পাইডারম্যানের মুখোশ পরে ঘরের ভিতরে লম্ফঝম্ফ কে না করেছে। এখানে এলে তারই এক ঝকঝকে উপস্থাপনা দেখা যাবে। পিছনের জায়ান্ট স্ক্রিনে সেই চরিত্রটি ফুটে উঠছে। সামনে সেই চরিত্রটি সেজে তরুণ-তরুণীদের পারফরম্যান্স!
পুরনো কমিক্স থেকে আধুনিক গ্রাফিক নভেল- হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে যাবে কত কিছু। পোস্টার, ফ্রিজ-চুম্বক, কার্ড, পুতুল, মুখোশ, বে ব্লেড, কাফে মগ, টিশার্ট বলে শেষ করা মুশকিল। অথচ এনট্রি ফি নিতান্তই নগণ্য। তিরিশ টাকার টিকিট কিনলেই তিনদিনের প্রবেশাধিকার! নিশ্চিতভাবেই শহরের আট থেকে আশির এক অনিবার্য ডেস্টিনেশন হয়ে উঠতে পারে এই কার্নিভ্যাল।
কসপ্লেতে স্পাইডারম্যান হয়ে ওঠা। ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু
রবিবারই শেষদিন। সেদিন আরও ভিড় আশা করছেন উদ্যোক্তারা। ডিসি থেকে মার্ভেল, মাঙ্গা হয়ে সেই ইন্দ্রজাল কমিক্সের পসরা... সঙ্গে আমাদের বাংলার বাঁটুল-নন্টেফন্টে... সত্যজিৎ-সুকুমারদের আশ্চর্য দুনিয়া! একছাদের তলায় এত কিছু... ভাবা যায়! তবে একটাই আক্ষেপ। মাত্র তিনদিন কেন? সপ্তাহখানেক ধরে কি চালানো যায় কমিক্সের এই মহোৎসব?
