shono
Advertisement

রংয়ের উৎসবে ঘুরে আসুন পলাশে রাঙানো পুরুলিয়ায়

লাগল যে দোল... The post রংয়ের উৎসবে ঘুরে আসুন পলাশে রাঙানো পুরুলিয়ায় appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 07:59 PM Mar 09, 2019Updated: 07:59 PM Mar 09, 2019

তাপসকুমার দত্ত: শীত আর বসন্তকাল এলেই পুরুলিয়ার কথা বারবার মনে পড়ে। এই সময় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এমন বর্ণময় ওঠে যে, একবার নয়, ফিরে ফিরে যেতে চাইবে মন। এমনই এক বসন্তের দিনে বেরিয়ে পড়েছিলাম পুরুলিয়াকে কাছ থেকে একটু দেখব বলে। রাত এগারোটা নাগাদ চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরেছিলাম। পরের দিন সকালবেলা আটটা নাগাদ সেই ট্রেন পুরুলিয়ার বরাভূম স্টেশনে এসে থামল। আমাদের যে বনকুটিরে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল, সেই বনকুটিরের অতিথি নিবাস থেকে একটা ম্যাজিক গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

সকাল ন’টার মধ্যে আমরা বনকুটিরে প্রবেশ করে গেলাম। এই বনকুটিরের অবস্থান হল- দিগারডি, মাঠা ফরেস্ট, বাগমুন্ডি। এখানে এসে স্নান ও জলখাবার খেয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কাছপিঠে জায়গাগুলোকে দেখার জন্য। আমাদের ম্যাজিক গাড়ি কালো পিচ-ঢালা রাস্তায় এগিয়ে চলল, চারদিকে সবুজ বনের সারি আর তার সঙ্গে দ্যাখা মিলল বসন্তের লাল রঙের পলাশ ফুলের। এই শীতের শেষে দোলের মুখে পুরুলিয়া সেজে উঠেছে লাল রঙের বসন্তের পলাশ ফুলে। আমাদের গাড়ি চলতে চলতে প্রথমে যেখানে এসে থামল, সেটা বাগমুন্ডির লহরিয়া শিবমন্দিরে। এখানেই লোয়ার ড্যাম অবস্থিত। প্রচুর লোকের সমাগম হয়েছে, তারা সবাই চড়ুইভাতি করতে এসেছে। কিছু পুরুষ ও মহিলাকে দেখলাম তারা ড্যামের জলে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে দণ্ডি কাটতে কাটতে লহরিয়া শিবমন্দিরের দিকে এগোচ্ছিল। এখান থেকে আপার ড্যাম ও অযোধ্যা পাহাড়ের আশপাশে ঘুরতে বেশ ভালই লাগছিল।

অন্যভাবে কাটান দোল, ছৌ-ঝুমুরের আবহে ঘুরে আসুন দোলাডাঙা ]

এরপর আমাদের গাড়ি দু’দিকের লাল পলাশের সারিকে ছাড়িয়ে এগিয়ে চলল বামনি ফলসের দিকে। পথ চলতে চলতে আমরা সবাই আবার সেই পলাশের শোভা উপভোগ করলাম। বামনি ফলসের জলধারা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কখন যে বেলা গড়িয়ে গিয়েছে, বুঝতেই পারিনি। এরপরের গন্তব্য চড়িদা গ্রাম। এই গ্রামে না এলে আমাদের হয়তো পুরুলিয়া ঘোরাটাই অসমাপ্ত থেকে যেত। আজ পৃথিবীর মানচিত্রে পুরুলিয়ার বাগমুন্ডির চরিদা গ্রাম বিখ্যাত হল ছৌ নাচ ও তার মুখোশ শিল্পের জন্য। এখানে যাঁরা মুখোশ তৈরি করেন, তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম।

এরপর সন্ধ্যা সাতটায় বনকুটিরের মালিক ভোলা ঘাটোয়ালের কাকা এসে আমাদের বনের পথে কিছুদূর নিয়ে গিয়েছিল, চাঁদের আলোতে বনের শোভা দেখতে কেমন লাগে, তা উপভোগ করানোর জন্য। চাঁদের আলোয় বনপথে চলতে ভালই লাগছিল। অচেনা-অজানা জায়গা বলে মনে মনে একটা ভয়ের সঞ্চারও হচ্ছিল। পরের দিন ঠিক সকাল ছ’টার সময় ভোলা ঘাটোয়ালের কাকার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম পাহাড় ও জঙ্গল ঘুরে দেখার জন্য। আমাদের বনকুটির পাখি পাহাড়ের কাছাকাছি দূরত্বেই ছিল। আমরা সবাই একসঙ্গে পাখি পাহাড়ের পথে পায়ে হেঁটে এগোতে লাগলাম। সকালবেলার পরিবেশ খুবই ভাল।

পাখি পাহাড় হল বদলে যাওয়া একটি নাম। বাগমুন্ডি থেকে বলরামপুর যাওয়ার পথে একটি পাহাড় দ্যাখা যাবে, যার আসল নাম হল মুররাবুরু পাহাড়। সেটাই আজ পাখি পাহাড় নামে পরিচিত হয়েছে। এর পিছনেও একটি কাহিনি আছে। মুররা কথাটির অর্থ হল, ন্যাড়া আর বুরু শব্দটির অর্থ পাহাড়। অর্থাৎ পুরো কথার মানে হল ন্যাড়া পাহাড়। কলকাতার আর্ট কলেজের চিত্ত দে মহাশয় এই ন্যাড়া পাহাড়ে গড়ে তুলেছেন একঝাঁক উড়ে যাওয়া পাখির ছবি। এই অঞ্চলের তরুণদের নিয়ে এবং তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতে পাহাড়ের ওপর পাথর কেটে এই অসম্ভব কাজকে তিনি সম্ভব করে তুলেছেন। এই পাহাড়ের অবস্থান হল পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের মাঠা রেঞ্জের শ্রীরামপুর গ্রামে।

এরপর পুরুলিয়ার গ্রামকে দেখতে দেখতে আমরা একটা সময় একটা লেকের কাছে এসে হাজির হলাম। আমাদের যিনি গাড়ির চালক ছিলেন, তাঁর কাছে এই লোকের নাম জানতে পারলাম পোপরাকোচা লেক। এই জায়গারর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বড়ই ভাল লেগেছিল। কখন যে দুপুর হয়ে গিয়েছে বুঝতে পারিনি। দুপুরের খাওয়াদাওয়া করে বনকুটিরের সামনে বনজঙ্গলে গিয়ে হাজির হলাম যদি কিছু পাখির ছবি পাওয়া যায় সেই আশাতে। ব্রাহ্মী স্টারলিং, টিয়া, ইন্ডিয়ান রবিন এরকম হরেক রকম পাখির দ্যাখা পেয়েছিলাম।

রাত্রিরের খাওয়াদাওয়া করে রাত দশটার সময় বেরিয়ে পড়লাম চান্ডিল স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরার জন্য। পুরুলিয়াকে বিদায় জানিয়ে বললাম আবার আসিব ফিরে…।  

ভ্রমণের নতুন ডেস্টিনেশন ডালিমফোর্ড, ঢেলে সাজাচ্ছে জিটিএ ]

কীভাবে যাবেন :

হাওড়া থেকে রাত এগারোটা নাগাদ চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার ধরে বরাভূম স্টেশনে নামতে হবে। যদি বন কুটিরে আগে বলা থাকে তবে ভোলা ঘাটোয়াল মহাশয় গাড়ি পাঠিয়ে দেবে, তাহলে বন কুটিরে আসতে আর কোনও অসুবিধাই হবে না।

কোথায় থাকবেন :

এখানে থাকতে গেলে ভোলা ঘাটোয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করে বন কুটির অতিথি নিবাসে থাকার ব্যবস্তা পাকাপাকি করে নিলে ভাল হয়। যোগাযোগ করার মোবাইল নাম্বার হল – ৮৯৭২১৮২১৭৯

কখন যাবেন :

শীতকাল ও বসন্তকালের সময় এখানে ঘুরতে এলে সব থেকে ভাল হয়। দোলের সময়ও বহুলোক এখানে ঘুরতে আসে। অন্য সময়ও আসা যেতে পারে, তবে খুব গরমের সময়টাকে বাদ দিয়ে এলে ভাল হয়।

The post রংয়ের উৎসবে ঘুরে আসুন পলাশে রাঙানো পুরুলিয়ায় appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement