shono
Advertisement

মানসিক যন্ত্রণা থেকে আরাম দেবে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’

'ডিয়ার জিন্দেগি' না দেখলে ভবিষ্যত-জীবনে কী কী সমস্যা হতে পারে? The post মানসিক যন্ত্রণা থেকে আরাম দেবে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:56 PM Nov 25, 2016Updated: 04:26 PM Nov 25, 2016

অনির্বাণ চৌধুরী: আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫ জন মানুষের নাম বলুন তো! খুব একটা না ভেবে-চিন্তে। চোখ বুজলেই যাদের মনে পড়ছে আর কী!
দেখবেন, প্রথম তিন বা চারজনের নাম মনে করার পরে আপনাকে একটু হলেও হোঁচট খেতে হচ্ছে। নিজেকেই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে- যে নামটা বলতে ইচ্ছে করছে, সে আদৌ আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ তো?

Advertisement


এই আজ কারও গুরুত্বপূর্ণ থাকা আর কাল গুরুত্বহীন হয়ে যাওয়ার সমস্যা শুধু কায়রার একার নয়। কায়রা মানে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র আলিয়া ভাট। সে যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে, তা কোথাও একটা গিয়ে আমরা সবাই খুঁজছি। আমরা সবাই জানতে চাইছি, কেন আজ যে খুব দরকারি, তার কাল হঠাৎ করেই আর দরকার পড়ছে না! জানতে চাইছি, আমরা নিজেরাই বা কেন মাঝে মাঝে কারও জীবনে আছি থেকে নেই হয়ে যাই! ছবিতে কায়রা এই উত্তরটা খুঁজে পেয়েছে।
আমরাও পাব! কেন না, আখেরে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র মধ্যে দিয়ে দর্শক আর ছবির মুখ্য চরিত্র- দু’য়েরই মনোস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন পরিচালক গৌরী শিন্ডে। তাই নেহাত এক ফুরফুরে ছবি দেখার আনন্দ ‘ডিয়ার জিন্দেগি’তে পাওয়া যাবে না। কিন্তু, স্বস্তি পাওয়া যাবে। খুঁজে পাওয়া যাবে অনেকগুলো উত্তর যা হাতের সামনে কেউ গৌরীর মতো করে সাজিয়ে দেয়নি।


শুধু একটু মন দিয়ে সেই উত্তরগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। কেন না, এই ছবিতে সেভাবে গল্প বলে কিছু নেই। যা আছে, তা হল প্রশ্ন আর উত্তরের মধ্যে দিয়ে নিজেকে খুঁজে চলা। তাই এই ছবি ভীষণভাবেই সংলাপ-সর্বস্ব। ফলে, একটা সংলাপও উপেক্ষা করার মতো নয়। বরং, খুব বেশি করে মন দিয়ে শোনার। যে ভাবে সাইকোলজিস্টের সান্ত্বনাবাক্য শোনে রোগী, সেরকমটাই!
ছবির শুরু থেকেই দেখবেন, আপনি কায়রার সমস্যার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারছেন। সম্পর্ক ভাঙলে কীরকম অস্থির লাগে, তা আপনার জানা! কিন্তু, সেই জানা ছবি কোনও দিন আয়নায় কেউ দেখেছি কি? ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ এখানে সেই আয়না! যা চোখের সামনে খারাপ থাকাটা কতটা খারাপ, তা দেখিয়ে দিচ্ছে। ঠিক যে কাজটা ছবিতে করেন সাইকোলজিস্ট ডা. জাহাঙ্গির খান। ফলে, আমাদের সম্বিৎ ফিরছে। আমরা বুঝতে পারছি, খারাপ থাকতে কেউ চাই না! কিন্তু, সেই খারাপ লাগাটার হাত থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তাটা কোথায়?


বলাই বাহুল্য- আত্মবিশ্বাসে। এখন সমস্যা হল আত্মবিশ্বাস সবারই থাকে, কিন্তু অনেকেই তা ঠিকমতো ব্যবহার করতে জানেন না। এই খেই ধরিয়ে দেওয়ার কাজটা করবে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’। ডা. জাহাঙ্গির খান ওরফে শাহরুখ খানের কায়রাকে আত্মবিশ্বাস জোগানোর পর্যায় আপনাকেও কোথাও একটা গিয়ে জোর দেবে। সেই জায়গায় জিতে গিয়েছে গৌরী শিন্ডের এই দুই নম্বর ছবি।
এই ছবি দিয়ে দর্শককে জীবনের জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসার পথটা দেখিয়ে দিতে চান পরিচালক। তাই ভীষণ ভাবে তিনি জোর দেন ক্লোজ-আপ শটের উপরে। বড় পর্দায় ক্রমাগত কায়রার অভিব্যক্তি, জাহাঙ্গির খানের নির্লিপ্তি দেখতে দেখতে চোখ যখন ক্লান্ত হবে, ঠিক তখনই কাজ করতে শুরু করবে মাথা। এ মনস্তত্ত্বের পুরনো ছক। এক জায়গায় নিজেকে এমন ভাবে আটকে ফেলা যাতে সারা সত্বা হাঁফ ছাড়তে চায়! ফলে, একটা সময় গিয়ে কায়রা আর দর্শক- দুইয়ে মিলে একটা যৌথ সত্বা একসঙ্গে হাঁফ ছাড়ে। নিজেকে চিনতে পারে। এই চেনার জন্য, কোথাও আটকে না থাকার জন্য ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ দেখা জরুরি!


আরও একটা কারণে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ দেখা দরকার। কায়রা যেরকম জীবনের নতুন দিকটাকে চিনতে পারল ছবিতে, আমরাও সেইরকম ভাবেই চিনব এক নতুন শাহরুখ খানকে। এই শাহরুখও কোথায় একটা গিয়ে ছবির মুখ্য চরিত্র কায়রার মতোই ক্লান্ত। বা আমাদের সবার মতো যারা একই বৃত্তে ঘুরপাক খেতে খেতে হাঁফিয়ে উঠেছে। তাই শাহরুখ এবার বেরিয়ে আসতে চাইছেন নিজের চেনা ছক ভেঙে। যে ছক ভাঙার গল্প প্রথম বলিউডকে দেখাল ‘ডিয়ার জিন্দেগি’।
তা বলে শাহরুখ খান যে পুরোপুরি ডা. জাহাঙ্গির খান হয়ে উঠতে পেরেছেন, এমনটাও নয়। নায়কোচিত কিছু হাবভাব তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। খুব ভাল অভিনয়ের পরেও মাথায় থেকে যাবে, আমরা শাহরুখ খানকে পর্দায় দেখছি। সেই বৃত্তটা থেকে শাহরুখ বেরিয়ে আসতে পারেননি। আগাগোড়া চরিত্র আর স্টারডমের মধ্যে খুব ভাল ব্যালান্স করে গেলেও। ছবির একটি দৃশ্যে অভিনেতার এই টানাপোড়েনকেও বুঝিয়ে দিয়েছেন গৌরী। দেখা যায়, ডা. জাহাঙ্গির খানের বাড়িতে একটা চেয়ার আছে। কায়রা সেটায় বসতে গেলেই তা ক্যাঁচ করে আওয়াজ করে ওঠে। শুধু জাহাঙ্গির ভারসাম্য বজায় রেখে বসতে পারে সেই চেয়ারে। ছবির শেষে গিয়ে দেখা যায়, জাহাঙ্গির বসলেও সেই চেয়ার শব্দ করে উঠল! শাহরুখও ছবিতে তেমনটাই! মাঝে মাঝে তাঁর স্টারডম শব্দ করে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছে।


কিন্তু, আলিয়া অপ্রতিরোধ্য! তিনি একান্তভাবেই এই ছবির কায়রা। তাঁকে দেখলে অন্য কোনও কিছুর কথা মাথাতেই আসবে না। সম্পর্ক ভাঙার অস্থিরতা, খিটখিট করা, উপেক্ষার ভয়, ছেড়ে যাওয়ার অপমান- এই সব কিছু নিয়ে তিনি নায়িকা কখনই নন, সব সময়েই দর্শকের অল্টার-ইগো। কায়রার মধ্যে দিয়ে আলিয়া আমাদের সবার একজন হয়ে উঠতে পেরেছেন। তাই জীবনের সবচেয়ে বড় ভয় কী, সেটা জানতে চাইলে কায়রার হাত ধরে দেখতে হবে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’। সেই ভয় থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও দেখতে হবে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’। তবে, ছবি দেখার পরে আর কায়রার দরকার পড়বে না। দরকার পড়ব না ডা. জাহাঙ্গির খানেরও। কেন না, তখন অনেক কিছুর মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবেন আপনি।


গৌরীর ছবি এভাবে ক্রমাগত এক সাইকোলজিক্যাল টেক্সট হিসেবে কাজ করে চলে। যার নমুনা ভারতীয় ছবিতে খুব বেশি নেই। এবার আপনি বলতে পারেন, এতটাও হিসেব মিলিয়ে দেওয়া কি উচিত হচ্ছে? ভারতে এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁদের কাছে সম্পর্ক ভাঙার কষ্ট নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। তাঁদের কাছে কোনও ভাবে বেঁচে থাকাটাই সব চেয়ে বড় সমস্যা। ভেবে দেখুন, ছবিটা দেখুন, বুঝতে পারবেন- কায়রার সমস্যাও তাই! শুধু একটু ভাল ভাবে বেঁচে থাকা! আমরা যারা রোজ ঠিকঠাক ভাবে খেতে পাই, দিনের শেষে পাই মাথার উপরে ছাদ- তাদের জীবনে আর কি কষ্ট থাকতে পারে? এই উপেক্ষিত হয়ে যাওয়া আর উপেক্ষিত করে তোলা ছাড়া? এই সমস্যা বাড়ছে বলেই তো শহরে সাইকোলজিস্টের চেম্বারে ভিড় বাড়ছে। সেটাই যদি টেক্সট হিসেবে ছবিতে দেখা যায় মন্দ কী!


আসলে, সিনেমার কাছে আমাদের শেষ প্রত্যাশা তো এটাই- ভাল থাকার রসদটুকু জড়ো করে নেওয়া! খুব ঝকঝকে সিনেম্যাটোগ্রাফিতে, একটু গুরুগম্ভীর ভাবে হলেও প্রচুর সংলাপ আর অভিব্যক্তির মুহূর্ত দিয়ে সেই রসদটা কিন্তু হাতে তুলে দিচ্ছে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’। তাকে গ্রহণ করা বা না করা- পুরোটাই আপনার ইচ্ছা!

ছবি: ডিয়ার জিন্দেগি
কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: গৌরী শিন্ডে
প্রযোজনা: গৌরী খান, করণ জোহর, গৌরী শিন্ডে
অভিনয়: আলিয়া ভাট, শাহরুখ খান

৩/৫

The post মানসিক যন্ত্রণা থেকে আরাম দেবে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement