নির্বাচনের প্রাক্কালে মন্ত্রীরা তাঁদের কাজের মূল্যায়ণ করলেন নিজেরাই। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর পক্ষ থেকে পাঁচটি প্রশ্ন রাখা হয় তাঁদের কাছে। খোলামেলা উত্তর দিলেন কলকাতা বন্দর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)।
- দশ বছর দুই দপ্তরের মন্ত্রী, কাজের নিরিখে নিজেকে কত নম্বর দেবেন?
রাজ্যের ১১৮টি পুরসভা ও ৭টি কর্পোরেশনে শতাধিক জলপ্রকল্প, নিকাশি, রাস্তা, উড়ালপুল করেছি। কলকাতা থেকে শুরু করে পুরুলিয়ার মতো পুর এলাকায় চোখ রাখলেই বাস্তব চিত্র দেখতে পাবেন। তাই দপ্তরের কাজে, মানুষের সন্তুষ্টির বিচারে আমি নিজেকে অবশ্যই দশে দশ নম্বর দেব।
- কোনও প্রকল্প করতে গিয়ে বাধা পেয়ে সম্পূর্ণ না হওয়ায় অতৃপ্তি রয়েছে?
দেখুন, গত দশ বছরে মা ফ্লাইওভার, ইকো পার্ক, বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টার, গার্ডেনরিচ উড়ালপুল, দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক, খিদিরপুর মেটারনিটি হোমকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল করেছি। কিন্তু ১৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরপাড়ায় বৃহৎ জলপ্রকল্প জমির জটিলতায় সম্পূর্ণ করতে পারিনি। খিদিরপুরে ওয়াজেদ আলি শাহ হাসপাতালের জন্য জমি পেয়েও দখলদারির জন্য কাজ শুরু হয়নি। অতৃপ্তির কারণ, জেএনএনইউআরএম বন্ধ ও আমরুত স্কিমে মঞ্জুর করেও বাংলাকে নগরোন্নয়নের ৩০ হাজার কোটি টাকা দিল না। দ্বিতীয়ত, রাজ্য সরকারের নীতি উচ্ছেদ নয়। দখলদার সরানো নিয়ে বহু সময় নষ্ট হয়েছে, না হলে আরও অনেক প্রকল্প সম্পূর্ণ হত। যেমন মা ফ্লাইওভার নির্মাণে জবরদখলকারী ৩০০ পরিবারকে বুঝিয়ে ও পুনর্বাসন দিতে গিয়ে অতিরিক্ত প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে।
[আরও পড়ুন: করোনার কোপ এবার রেল পরিষেবায়, শিয়ালদহ শাখায় বাতিল বেশ কিছু লোকাল ট্রেন]
- কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে আপনার নাম ভাঙিয়ে পুলিশকে ভয় দেখালে পাল্টা শাস্তি চালু করেছেন কেন?
বাম জমানায় খিদিরপুর-গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে মাফিয়ারাজ, অন্ধকার সাম্রাজ্য করে রাখা হয়েছিল। সংখ্যালঘুরা যাতে পুলিশের শাসন না মানে, উল্টে ডি সি বিনোদ মেহতার মতো অফিসারকে গুলি করে মারে তার উস্কানি দেওয়া হত। রাস্তা সংকীর্ণ, ঘিঞ্জি করে কলকাতার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে রাখা হয়েছিল। গার্ডেনরিচ সার্কুলার রোড চওড়া করেছি, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, গার্ডেনরিচ উড়ালপুল বানিয়ে শহরের মূল স্রোতে বন্দরবাসীকে এনেছি। বাম নেতারা কুখ্যাত অপরাধীদের মদত দিতেন, বশংবদ করে রাখতেন। এখন ওসিদের বলে দিয়েছি, কেউ যদি থানায় গিয়ে আমার নাম ভাঙিয়ে পুলিশকে হুমকি দেয়, তবে তার পিছনে চার ডান্ডা অতিরিক্ত মারতেই হবে। যে ওসি প্রশ্রয় দেবেন তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যাবেন।
- সব দলের প্রার্থীরা প্রচারে নায়ক-নায়িকা নিয়ে যাচ্ছেন? আপনি প্রত্যাখ্যান করছেন কেন?
আমি জনপ্রতিনিধি হিসাবে বছরে ৩৬৫ দিন, ২৪ ঘণ্টা নিজের কেন্দ্রের মানুষকে পরিষেবা দিই। নিজের কেন্দ্রে দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টা বসি, মানুষের সমস্যার সুরাহা করি। মধ্যরাতেও সাধারণ মানুষের ফোন ধরি, হাসপাতালে রোগী ভরতি করি, শ্মশানে যাই। সারা বছর তো পড়াশোনা করি, শুধু পরীক্ষার জন্য যদি বই-খাতা নিয়ে বসতাম, তাহলে নায়িকাকে ডাকতাম। শুভানুধ্যায়ীরা র্যালিতে নায়িকা আনার প্রস্তাব দিয়েছেন, অভিনেত্রীরাও আসতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি। গত দশ বছর তো বন্দরের মানুষের সঙ্গে দিনে-রাতে ছিলাম, তাই নায়িকার ফ্রক ধরে ভোটে জেতার কথা স্বপ্নেও ভাবি না। কাজের বিনিময়ে, পরিষেবার পরিবর্তে গণদেবতার আশীর্বাদ চাইছি, ভালবাসা চাইছি।
[আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপের পথে রাজ্য? মুখ্যমন্ত্রীর টুইটে মিলল ইঙ্গিত]
- পরিবারকে সময় দেন কীভাবে?
পরিবারের প্রতি আমি দায়িত্বশীল। পদ আজকে আছে, কাল থাকবে না। কিন্তু যতদিন বাঁচব, পরিবার থাকবে। একমাত্র হৃদয় খুলে পরিবারের সঙ্গেই কথা বলতে পারি, সময় কাটাতে পারি। তাই মাঝে মধ্যে নাইট শোয়ে স্ত্রী-মেয়েদের নিয়ে যেমন সিনেমায় যাই, তেমনই ছুটির দিনে নিজে গাড়ি চালিয়ে নিউটাউনে গিয়ে নাতনিকে পশুপাখি চেনাই। কর্মক্লান্ত দিনের শেষে বাড়ি ফিরে নাতনিকে কোলে নিলেই ফের ‘ফুল চার্জড’ হয়ে যাই, নিজেকে ফ্রেশ লাগে।