ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: এক ব্যক্তির একই অসুস্থতার চিকিৎসা খরচ মেটাতে একাধিক সরকারি স্বাস্থ্যবিমা কার্ড পেশ। আবার একই বিভিন্ন সদস্যের চিকিৎসাতেও বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যবিমা কার্ডের দৌলতে ব্যয়সংস্থান। সরকারি কোষাগারে চাপ তো বটেই, পদে পদে জটিলতাও। হাসপাতালে হাসপাতালে এই পরিস্থিতির অবসানে এবার কোমর বাঁধল রাজ্য। স্বাস্থ্য দপ্তরের সিদ্ধান্ত, পরিবারপিছু যে কোনও একটি স্বাস্থ্যবিমা থাকবে। তা দিয়েই পরিবারের নথিভুক্ত সমস্ত সদস্যের হাসপাতালে ভরতি ও চিকিৎসার খরচ বহনের ব্যবস্থা হবে।
একাধিক স্বাস্থ্যবিমা থাকলে একটি রেখে অন্যগুলো সরকারের ঘরে জমা দিতে হবে। স্বাস্থ্য ও অর্থ দপ্তরের পর্যবেক্ষণ, একই সঙ্গে অথবা একই অর্থবর্ষে একই ব্যক্তি বা পরিবারের তরফে একাধিক সরকারি স্বাস্থ্যবিমা ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে রাজ্যের কোষাগার থেকে দেদার অর্থ খরচ হচ্ছে। এই অস্বাস্থ্যকর প্রবণতায় লাগাম পরানোর লক্ষ্যে সম্প্রতি রাজ্যের নয়া মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদী স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। নবান্নের আলোচনায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোনও পরিবার একাধিক স্বাস্থ্যবিমার অধিকারী হলে এখন থেকে যে কোনও একটা থেকেই সুবিধা পাবেন। বাকিগুলো ফেরত দিতে হবে। সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)।
সরকারি পদক্ষেপ প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী বলেন, “পরিবারপিছু একটিমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যবিমা থাকবে। তা থেকেই পরিবারের সব সদস্যের চিকিৎসা হবে। সিদ্ধান্তটি খুব দ্রুত কার্যকর হবে।” স্বাস্থ্যসাথীর পর্যালোচনাকে কেন্দ্র করে উদ্যোগের সূত্রপাত। নবান্নে স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় মুখ্যসচিব স্বাস্থ্যসাথীকে আরও দ্রুত রাজ্যের সব নাগরিকের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে নির্দেশ দেন।
[আরও পড়ুন: অনলাইনে খাবার অর্ডার করে প্রতারণার ফাঁদে দমদমের তরুণী, খোয়ালেন ২৫ হাজার টাকা!]
রাজ্যের প্রায় সাড়ে সাত কোটি পরিবারের হাতে স্বাস্থ্যসাথী বিমার কার্ড পৌঁছে গেছে। বিধানসভা ভোটের পর এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু পথ বের করতে নির্দেশ দেন মুখ্য সচিব। সেই সময় দুই দপ্তরের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণ সামনে আসে। দেখা যায় এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা একইসঙ্গে দু’টি বা তার বেশি সরকারি স্বাস্থ্যবিমা থেকে পরিষেবা নিচ্ছে। দপ্তরের এক কর্তার কথায়, ধরা যাক বাড়িতে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড রয়েছে। আবার রাজ্য সরকারের কর্মচারী হওয়ার সুবাদে ESI বা অন্য সরকারি স্বাস্থ্যবিমার কার্ডও আছে। দেখা যাচ্ছে, একই অর্থবর্ষে ওই পরিবার বিভিন্ন সময়ে একাধিক সরকারি স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাচ্ছে। ফলে একটি পরিবারের বিভিন্ন সরকারি বিমা থেকে চিকিৎসা সুবিধা নেওয়ায় স্বাস্থ্যবিমার খাতে সরকারি কোষাগার থেকে বেলাগাম খরচ হচ্ছে।
এটা যেমন একটা দিক, তেমনই এইসব পরিবারের বিমা খরচ জানতে ব্যাপক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য বলছে, শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসাথী বিমা খাতে চলতি আর্থিক বছরে প্রায় ২ কোটি নাগরিক পরিষেবা পেয়েছেন। রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতাল তো বটেই, বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমকেও এই বিমার আওতায় আনা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর সুবিধার জন্য আলাদাভাবে হেল্প ডেস্ক চালু হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু পরিবার একাধিক সরকারি স্বাস্থ্যবিমা থেকে পরিষেবা নিচ্ছে।