shono
Advertisement

রাজ্যে ফিরেছে শিল্পবান্ধব পরিবেশ, মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে রেখেই লগ্নি টানতে চায় শিল্পমহল

গত ১০ বছরে ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
Posted: 09:47 PM Feb 23, 2022Updated: 10:00 PM Feb 23, 2022

স্টাফ রিপোর্টার: শিল্পবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনায় রাজ্যে লগ্নি ও কর্মসংস্থানের পথ খুলেছে। সেই গতি যাতে অব্যাহত থাকে, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই এগোতে চায় বাংলার শিল্পমহল। দেশ ও বিদেশের শিল্পমহলের কাছে এই পরিবর্তিত শিল্প পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেই আরও বিনিয়োগ টানতে চান তাঁরা।

Advertisement

বুধবার নবান্নে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন বোর্ডের বৈঠকে রাজ্যের বণিকসভা ও শিল্পপতিদের সামনে রাজ্যের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরার পর শিল্পমহলের বক্তব্য, যা রয়েছে, তাকে আরও ভালভাবে তুলে ধরলেই বাকি কাজও হয়ে যাবে। আগ্রহী হবেন দেশ-বিদেশের লগ্নিকারীরা। কারণ, বঙ্গে কারখানা স্থাপন বা বিনিয়োগ করার প্রক্রিয়া সরকারি স্তরে যেমন এখন অনেক সহজ হয়েছে, তেমনই রাজ্যের বিপুল সম্ভাবনা নজরে আসছে শিল্পমহলের কাছেও।

[আরও পড়ুন: বেসরকারি বাসে বাড়তি ভাড়া রুখতে কড়া দাওয়াই পরিবহণ মন্ত্রীর, মানতে ‘নারাজ’ মালিকপক্ষ]

এপ্রিল মাসেই ফের হতে চলেছে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট বা বিজিবিএস(BGBS)। তার আগে থেকেই সলতে পাকানোর কাজ যে অনেকদূর এগিয়েছে, তা এদিনের বৈঠকেই স্পষ্ট সরকার ও শিল্পমহলের কথাবার্তায়। যেহেতু করোনার (Coronavirus) জেরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবার হয়তো শিল্পমহলের অংশ নেওয়ার পথে বাধা রয়েছে, তাই ঘরোয়া শিল্পকেই ‘ফোকাস’ করে এগিয়ে যাওয়ার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পমহলের কাছে তাঁর ব্যাখ্যা, “এবার ডোমেস্টিক ইন্ডাস্ট্রিকে আমরা অগ্রাধিকার দেব। বাংলা আগামিদিনের ইন্ডাস্ট্রির ডেস্টিনেশন। লগ্নি, পরিকাঠামো এবং কর্মসংস্থান তৈরি করাই আমার লক্ষ্য। সামাজিক বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ আমরা করেছি। ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে বাংলায়। তা সত্ত্বেও বাংলায় আরও ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হবে অর্থনীতিকে আরও ভাইব্র‌্যান্ট করার জন্য। আমরা দেখতে চায় বাংলায় সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান হবে।”

তবে রাজ্যেই বিরোধীরা শিল্প তৈরির পথেও অন্তরায় হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “ইন্ডাস্ট্রি যাতে না আসে, তার জন্য কেউ কেউ আবার পলিটিক্সও করবে। সেটাও নজর রাখতে হবে। যারা নিজেদের সময় কিছু করতে পারে না তারা অপরকে এসব কাজে বাধা দেয়। এসব মানা হবে না। স্ট্রিকলি এগুলোকে ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে। মানুষের সাথে কখনও কোনও অমানবিক কাজ যেমন আমরা করব না। সে রকম মনে রাখতে হবে যে কারও কোনও দুঃসহ অপশাসনের কাজও আমরা বরদাস্ত করব না। আমাকে দু’জন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট কমপ্লেন করেছিলেন। হলদিয়ার দু’জন তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) লিডার সম্পর্কে। আমি অ্যরেস্ট করিয়ে দিয়েছি।” আড্ডা, এসজেডিএ’র মতো অন্যান্য অথরিটিগুলিতে আলাদা আলাদা কর নেওয়া যাবে না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে তা সরকারি কোনও কর্পোরেশনের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর কথায়, “এসব রেখে লাভ কি? টাকা খাওয়ার জায়গা করে কি হবে?” কোনওভাবেই বিল্ডিং প্ল্যান বা ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জমি বা ট্রেড লাইসেন্স কোনও অছিলায় ফেলে রাখা যাবে না। দ্রুত তা আবেদনকারীকে দিতে হবে। মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদীকে (HK Dwivedi) মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, “ফায়ার ব্রিগেড বহুদিন ধরে কাজ ফেলে রেখে দেয় বলে শিল্পপতিদের অভিযোগ রয়েছে। ফেলে রাখছে তো ফেলেই রাখছে। কেন, কীসের জন্য? অনলাইন করে দিতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি করতে গেলে কতগুলি টাফ ডিশিসন নিতে হবে। কারও ক্ষতি করে তো আমরা কিছু করছি না। কর্মসংস্থান তৈরি করার জন্য ইন্ডাস্ট্রি যাতে আসে সেটা আমাদের দেখতে হবে।” প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিদের আরও বেশি সক্রিয় করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

[আরও পড়ুন:  ‘আনিস হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে ১৫ দিনের মধ্যেই’, তদন্তে সহযোগিতার আরজি ডিজির]

বেশকিছু শীর্ষ আধিকারিক তেমনভাবে সক্রিয় হচ্ছে না বলে এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিবকে বিষয়টি দেখারও নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, “প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিদের আরও সক্রিয় হতে হবে। সাত-আটজন কাজ করবে, আর বাকিরা ঘুরে বেড়াবে, তা হবে না। যে যে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি কাজ করবেন না, তাঁদের সেই দপ্তরে রেখে লাভ কী?” কোনও দপ্তর কাজ না করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি। বাইরে থেকেও বিশেষজ্ঞদের নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জৈানান, লগ্নি টানতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে শিল্প নিয়ে রোড শো, শিল্পপতি ও বণিকসভার ছোট ছোট দল যাবে বিভিন্ন রাজ্যের শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করতে। রাজ্যে হবে বিভিন্ন দপ্তর ও জেলার কাজ নিয়ে প্রদর্শনীও।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত ১০ বছরে ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। একাধিক বড় প্রকল্প প্রস্তুতি পর্বে রয়েছে। যেগুলি রাজ্যের শিল্প মানচিত্রকে পরিবর্তন করে দেবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাজপুরে টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। বিনিয়োগ হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। নন্দীগ্রাম, হলদিয়া, কন্টাই, খেজুরির স্থানীয়দের চাকরি হবে। জঙ্গলমহলে ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আসছে। ৪ হাজার একর জমি সরকার দিয়েছে। ডানকুনি-অমৃতসর ফ্রেট করিডরের মধ্যে এটা আসবে। ৬০০ একর জমি ইতিমধ্যেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ডব্লুবিআইডিসি ১৫০০ একর জমিতে প্রকল্পের প্রস্তাব পেয়েছে। ডানকুনি-রঘুনাথপুর, ডানকুনি-কল্যাণী এবং ডানকুনি-হলদিয়া, তিনটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অশোকনগরে তেল উত্তোলন, দু’টি গ্যাসের পাইপলাইনের কাজ চলছে দ্রুত। ২০২৩ শেষ হবে জগদীশপুর-হলদিয়া পাইপলাইনের কাজ। যাতে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় বাংলা। কলকাতায় গ্যাস সাপ্লাই করার জন্য দ্রুত কাজ করা হচ্ছে। দিঘায় হচ্ছে কেবল ল্যান্ডিং সেন্টার। এখন রাজ্যে ১৫০০ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা কাজ করছে। ১৮টি আইটি পার্ক হয়েছে। নিউটাউনে ২০০ একর জমিতে হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির কেন্দ্র। পাঁচ বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। ৫০ হাজার কর্মসংস্থান হবে। বানতলায় মেগা লেদার ক্লাস্টার করা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা দিয়ে, এছাড়াও ফুড পার্ক, ইথানল তৈরি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে রাজ্যে প্রায় ৫০ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের শিল্প তুলে ধরতে শিল্পের একটি ‘চ্যানেল’ করার কথাও শিল্পপতিদের জানান মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বাংলার আই ক্লাউড এবং ইন্টিগ্রেটেড পোর্টলের উদ্বোধনও করেন মুখ্যমন্ত্রী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement