নব্যেন্দু হাজরা: শনিতে ভোট আর রবিতে ছুটি। কিন্তু দু’দিনের এই ছুটি মোটেও সুখের হবে না আম গেরস্তের। বরং কর্মক্ষেত্র বন্ধ থাকলেও বাড়িতেই ঘাম ঝড়াতে হবে কর্তা-গিন্নিকে।
আজ ভোটের প্রভাব পড়তে চলেছে অধিকাংশ গেরস্তের অন্দরে। বিশেষত কলকাতায়। শনি-রবিতে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই অঘোষিত ছুটি পরিচারিকাদের। রান্না করা থেকে ঘর মোছা, বাসন মাজার লোক কেউই এই দুদিন কাজে আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে ভোটের ছুটি শুধু খেয়ে-দেয়ে টিভি দেখে আর কাটানো হবে না অধিকাংশ দম্পতিরই। ঠেলতে হবে ঘরের হেঁসেল, মাজতে হবে বাসনও।
[আরও পড়ুন: এবার জগন্নাথের মাসির বাড়ি! শনি সকালে পুরীর গুণ্ডিচা মন্দিরে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড]
"ওসব লোকসভা, বিধানসভা বুঝি না। পঞ্চায়েতের নেতারা বলে গিয়েছে। ভোট দিতে হবে। তাই যেতেই হবে। সব কাজ তো পোধানই (প্রধান) করে। তাঁর কথা তো শুনতেই হবে। তাই শনি-রবি বউদি কাজে আসবনি।"–অন্তত এক সপ্তাহ আগেই সব বাড়ি-বাড়ি বলে রেখেছে মালতী। ক্যানিংয়ে দেশের বাড়ি যাবে ভোট দিতে। কিন্তু ভোট তো একদিন, দুদিন ছুটি কেন! "রবিবার গাড়ি-ঘোড়া চলবনি।" বউদির প্রশ্নের উত্তরে জানিয়ে দিয়েছে সে। তাঁর মতো অনেকেই। যারা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকাল ট্রেনে করে এই শহরে ভোর হতেই চলে আসে কাজে। অনেকে সারাদিন কাজ সেরে রাতে বাড়ি ফেরে। আবার অনেকে এই শহরেই খুঁজে নিয়েছে ছোট্ট একচিলতে ঘর। কেউ রান্নার কাজ, কেউ বাড়িতে বাচ্চা রাখার কাজ, আবার কেউ বয়স্ক বাবা-মায়ের দেখাশোনার কাজ করেন। তাঁরা এই ভোটের সময় বাড়ি যান। পঞ্চায়েত, লোকসভা, বিধানসভা তিন ভোটেই ফেরেন বাড়িতে। বহু বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধা-বৃদ্ধাদের দেখাশোনার জন্য আয়া সেন্টার থেকে লোকও নেওয়া হয়। শনি-রবিতে সেখানেও আয়ার ঘাটতি। আরজি কর হাসপাতালের কাছের আয়া সেন্টারের মালিক জানান, ভোটের দিন আর তার পরের দিন অনেকেই ছুটি নিয়ে রেখেছেন। ফলে কী করে যে বিভিন্ন জায়গায় লোক পাঠাব ভেবে পাচ্ছি না।
[আরও পড়ুন: শেষদফা ভোটের পরই ভাঙবে মোদির ধ্যান! যোগীর বার্তা, ‘সুফল পাবে দেশ’]
কর্মব্যস্ত এই শহরের বেশিরভাগ পরিবারেই এখন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চাকরিতে বেরন। বয়স্ক বাবা-মা বা বাচ্চাকে দেখাশোনা করেন কাজের লোকই। ফলে তাঁরাও এখন পরিবারের সদস্য। কিন্তু এই দুদিন সেই সদস্যের অনুপস্থিতি যে বেশ বেগ দেবে তা মালুম পাচ্ছেন ঘরের গিন্নিরা। "ভেবেছিলাম ছুটির দুদিন একটু রিল্যাক্স করব। কিন্তু তিনটে কাজের লোক সবাই ছুটি নেবে বলেছে ভোট উপলক্ষ। কী করে যে সামলাব! রান্না করা, ঘর মোছা-বাসন মাজা আবার বাচ্চাকেও তো দেখতে হবে।" –বলছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী রুমেলা সেনগুপ্ত। বাইপাসের ধারের বহুতল আবাসনের বাসিন্দা তিনি। তাঁর মতো অবস্থা অন্যান্য অনেক বাড়ির মহিলাদেরই। বাড়ি-বাড়ি পরিচারিকার কাজের জন্য প্রতিদিন শহরে অন্তত কয়েক হাজার লোক আসেন ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার, লক্ষ্মীকান্তপুর, নামখানা-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা থেকে। আরও দূরে যারা থাকেন, তাঁরা এই শহরেই থেকে যান। তবে ভোট তাঁদের কাছে উৎসবের মতো। তাই প্রত্যেকেই ছুটিতে। শুক্রবার রাতেই ফিরেছেন দেশের বাড়ি। তারপর ফিরবেন ভোট কাটিয়ে। ভোটের পরদিন রবিবার। কিন্তু বাস, অটো, টোটো ওইদিনও যে খুব একটা রাস্তায় পাওয়া যাবে না, তা বিলক্ষণ জানেন প্রত্যেকে। তাই ফেরা সোমবার। মানে দুদিন ছুটি। আর তাদের এই দু’দিনের অনুপস্থিতির কারণেই এখন ঘুম ছুটেছে বহু পরিবারে।