তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: পুরনিগম ও মহকুমা পরিষদ হাতে থাকার পরেও ফের একবার শিলিগুড়িতে লোকসভায় ভরাডুবি তৃণমূলের (TMC)। লোকসভায় শাসক দলের এই পরিণতি দলের অন্দরে প্রশ্ন তুলেছে। মহকুমা পরিষদ এলাকাতে খানিকটা হলেও হারিয়ে যাওয়া ভোট ফের নিজেদের দিকে টানতে সক্ষম হলেও শিলিগুড়ি পুরনিগম এলাকায় একেবারে তলানিতে ঠেকেছে সমর্থন। প্রায় ৬৬ হাজার ভোটে শিলিগুড়ি পুরনিগমে পিছিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একমাত্র ৬ নম্বর ওয়ার্ল্ড ছাড়া পুরনিগমের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে শাসক দল পিছিয়ে। মেয়র এবং ডেপুটি মেয়র-সহ শিলিগুড়ি পুরনিগমের প্রত্যেকটি মেয়র পরিষদ সদস্যের নিজস্ব ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে দল। শাসকদলের নিচুতলার কর্মী থেকে শুরু করে জেলা নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে একাধিক জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে।
শুধুমাত্র পুরনিগম এলাকা নয়, শিলিগুড়ি (Siliguri) মহকুমা পরিষদের ফাঁসিদেওয়া, খড়িবাড়ি, মাটিগাড়া নকশালবাড়ি ব্লকেও বিজেপিকে টেক্কা দিতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। ফলাফল নিয়ে কাটাছেঁড়া হওয়ার আগে যদিও ২০১৯ থেকে ২০২৪ এ ব্যবধান কমিয়ে নিয়ে আসাকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নৈতিক জয় হয়েছে বলে অজুহাত দিচ্ছেন। দার্জিলিং (Darjeeling) জেলা সমতল তৃণমূলের চেয়ারম্যান অলোক চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমরা গতবারের তুলনায় অনেকটাই বেশি ব্যবধান কমিয়ে নিয়ে এসেছি। আমরা একত্রিত হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছিলাম। দলের প্রত্যেকটি স্তরের নেতারা কাজ করেছেন।’’ দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সমতলের সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ বলেন, ‘‘গতবার বিজেপি প্রার্থী প্রায় সাড়ে চার লক্ষ ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। এবছরের তার ব্যবধান দেড় লক্ষের মতো হয়েছে। কাজেই এটা আমাদের নৈতিক জয়।’’ ২০১৯ সালে কালিম্পং, দার্জিলিং,কার্শিয়াং, মাটগাড়া-নকশালবাড়ি,ফাঁসিদেওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী থেকে যথাক্রমে ৬২৫৭২, ৮৫৮২৪, ৮৭৫৯৭, ৯৮৯৯৮, ৫৩২৬১ ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি সাংসদ। একমাত্র চোপড়াতে প্রায় ৪৬ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী।
[আরও পড়ুন: জেলবন্দি অনুব্রত, কমল বুথের লিড, বীরভূম জিতলেও চিন্তার ভাঁজ ঘাসফুল শিবিরে]
অন্যদিকে শিলিগুড়ি পুরনিগম এলাকাতে ৬৫,৪৮৬ ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরো নিগম ও মহাকুমা পরিষদ শাসক দল দখল করা পরেও লোকসভা নির্বাচনে শিলিগুড়ি পুরোনিকভাবে মাত্র একটি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে ক্ষমতায় থেকেও প্রায় একই ব্যবধানে পুরনিগম এলাকাতে পিছিয়ে রয়েছে শাসকদল। নির্বাচনের আগে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গে প্রচারের সময়ে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব (Gautam Deb) কার্যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি দুটি আসনই তিনি 'দিদি'কে উপহার দেবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হল না। ফলে গৌতম দেবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।