রাত পোহালেই বাজেট। কী হবে, কী না হবে-জানতে কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। কিন্তু বিনিয়োগকারী হিসাবে কী আশা করতে পারেন এই বাজেট থেকে? করে কি কিছু বদল হবে? সাধারণের চাহিদা মেনে সরকার কি কিছু ‘রিলিফ’ দেবে? আর বাজারের হাল কেমন হতে পারে? বাজেট ২০২২-এর সম্ভাব্য ছবি ‘সঞ্চয়’-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরলেন প্রসূনজিৎ মুখার্জি
আর একদিন বাদেই বাজেট। আগামিকাল দুপুরের মধ্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় খবরাখবর আপনি পেয়েই যাবেন। তবে তার আগে এই সময়ে দাঁড়িয়ে যে কোনও বিনিয়োগকারীর মূল চিন্তা থাকবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, নির্মলা সীতারমণ পার্সোনাল ট্যাক্স সংক্রান্ত কোনও পরিবর্তন আনলেন কি না, তা নিয়ে। এছাড়াও, দামের কোন অদলবদল শীঘ্র হবে কি না, কোন পণ্যের দাম বাড়বে বা কমবে, সেটাও সাধারণ মানুষের জন্য অন্যতম জরুরি বিচার্য বিষয়।
অর্থমন্ত্রীর পক্ষে ‘রিলিফ’ দেওয়ার নতুন সম্ভাবনা বা সুযোগ আছে কি? এই মুহূর্তে, বাজেটের প্রাক্কালে, এই প্রশ্নটিই বারবার উঠছে। গত দু’বছর কোভিড-জনিত ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে, ‘স্টিমুলাস’ দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে, নানা সেক্টরে ক্ষতির নিরিখে, এর উত্তর পাওয়াটা খুব দরকারি। যা ‘রিলিফ’ অামরা অর্থাৎ সাধারণ নাগরিকগণ চাইছি, তা কি পাওয়া সম্ভব?
কয়েকটি ‘ইকোনমিক রিয়ালিটি’র দিকে চোখ ফেরানো যাক। গত কয়েকটি ত্রৈমাসিক যদি দেখেন, বুঝবেন সরকারি হিসাবমতো, প্রচুর রেভিনিউ এসেছে জিএসটি-র মারফৎ। মাসে এক লক্ষ কোটি টাকা ধারাবাহিকভাবে এসেছে। পেট্রোল-ডিজেল বিক্রি থেকেও সরকারের কম উপার্জন হয়নি। তবে আয় যেমনই হয়ে থাক, অর্থনীতির বিস্তৃত কিছু ক্ষেত্র এখনও ঘুরে দাঁড়ায়নি সেইভাবে। বরং, ক্রুড অয়েলের দাম এমনই উচ্চ হারে পৌঁছেছে, অনেক ব্যবসার উপরই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কারণ কঁাচামালের দাম বাড়ছে। আগামিদিনে, ক্রুড অয়েলের দাম কী হবে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পক্ষে এটা একটা বড় বিপত্তি হতে পারে।
[আরও পড়ুন: হোম লোনে পিএনবি-র নয়া চমক, গড়ে তুলুন স্বপ্নের ঘর]
এছাড়াও, মনে রাখবেন কয়েকটি ‘ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাক্টিভিটি’ ও মার খেয়েছে এই ডামাডোলে। কারণ চাহিদা কমেছে। তাই যতক্ষণ না অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ছে, এই ক্ষেত্রগুলি সংকুচিতই হয়ে থাকবে।
এতক্ষণ দুশ্চিন্তার কয়েকটি কারণ চর্চা করলেও, যে কথাটি না বলে পারছি না, তা কিন্তু শেষমেষ বেশ ইতিবাচক হতে পারে। আমি ট্যাক্স-বাঁচানোর ‘প্রভিশন’-এর কথাই বলছি। লগ্নিকারীদের স্বার্থে এই আয়কর ছাড়ের পরিসর বাড়ানোই শ্রেয়, অন্তত তিন লক্ষ টাকা যদি Section-80C-র আওতায় দেওয়া যায়, তাহলেই ভাল হয়।
আরও একটি প্রসঙ্গ এই সূত্রে উত্থাপন করি। সিকুইরিটিজ ট্রানজ্যাকশন ট্যাক্স (Securities Transaction Tax বা STT) এবং লং টার্ম ক্যাপিটাল গেনস ট্যাক্স (Long Term Capital Gains Tax বা LTCG)-এই দুটির সম্পর্কে বলতে চাই। এগুলি দিয়ে সরকার বিপুল হারে কোন রেভিনিউ পান না। অথচ সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য STT জাতীয় ট্যাক্স অস্বস্তির কারণ তো বটেই। এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনও সিদ্ধান্ত যদি সরকারি স্তরে থাকে, এবং বাজেটে প্রতিফলিত হয়, তাহলে সুবিধা হয়। LTCG-র সম্বন্ধেও একই কথা বলা যায়।
শেষ করার আগে আরও একটি দরকারি প্রসঙ্গ। অামাদের দেশে যেখানে মুদ্রাস্ফীতির হার ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে, সেখানে এখনই ‘ইনফ্লেশন-ইনডেক্সড বন্ড’ প্রয়োজন। বয়স্কদের জন্য বিশেষভাবে দরকার এই ধরনের একটি বিকল্প। যদি সরকারি গ্যারান্টি পাওয়া যায়, তাহলে বন্ড হোল্ডাররা উপকৃত হবেন। অামি নিশ্চিত যে, প্রচুর টাকা মার্কেটে নতুনভাবে ঢোকার অপেক্ষায় আছে। যদি দশ শতাংশ রিটায়ারমেন্টমুখী লগ্নিকারী এই বন্ড হাতের কাছে পেয়ে যান, তাহলে কী পরিমাণ অর্থ সরকার ‘মোবিলাইজ’ করতে পারবে তা সহজেই বোধগম্য।
(লেখক myplexus.com-এর চিফ অ্যানালিস্ট)