shono
Advertisement

ভোট না দিলে হবে? গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হতে চায় শহিদ সুদীপ বিশ্বাসের পরিবার

কর্তব্য পালন করবেন শহিদের পরিজনরা। The post ভোট না দিলে হবে? গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হতে চায় শহিদ সুদীপ বিশ্বাসের পরিবার appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:04 PM Apr 05, 2019Updated: 05:25 PM Apr 05, 2019

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: ঘরটায় ঢুকলেই ধক করে আসে ধূপ, ফুলের গন্ধ। পবিত্রতা, একটা ভাললাগার মাঝে ছ্যাঁক করে বুকে লাগবে দেওয়ালে টাঙানো একাধিক ফ্রেমবন্দি ছবি, ফেস্টুন। ও ঘরে কেউ থাকে না। সকাল, সন্ধ্যায় ধূপ-ধুনো, ফুল-মালা দেওয়া হয়। অন্য একটা ঘর আর বারান্দায় চারটে প্রাণী বসবাস করে। সমস্যা হয়। তবু ওই ঘরে কেউ থাকে না। ফাঁকা পড়ে থাকে। ওই ঘর, ছবি যে সে কারওর নয়! দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে শহিদ হওয়া সকলের প্রিয় সুদীপের ঘর।

Advertisement

পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় সুদীপ বিশ্বাস নিহত হওয়ার পর কেটে গিয়েছে দেড় মাস। মাঝে ভারত-পাকিস্তান দু’দেশের সীমান্তে ঘটে গিয়েছে একাধিক ঘটনা। মারা গিয়েছেন আরও জওয়ান। কমেনি রণংদেহি মনোভাবও। তার মধ্যেই শিয়রে নাড়া দিচ্ছে গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসব ভোট। ভোট বালাইয়ের উত্তেজনায় কেঁপে যাওয়া ভূ-ভারতের আঁচ পড়েছে পলাশিপাড়া থানার হাঁসপুকুরিয়ার তিলিপাড়ার শহিদ সুদীপ বিশ্বাসের বাড়ির আশপাশেও। দেওয়াল লিখনে তৃণমূলের আধিপত্য দেখা গেলেও বিজেপি সিপিএমেরও প্রচার রয়েছে। কাছে পিঠে পার্টি অফিস বার্ণিয়াতে ভোটের তাপ প্রবল। তুলনায় এই এলাকায় কম। তবে ভোট নিয়ে যে এলাকার মানুষ সচেতন সে কথা বলছেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা তেহট্ট দুই ব্লকের তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘এই হাঁসপুকুরিয়া পঞ্চায়েত দীর্ঘদিন সিপিএমের দখলে ছিল। কিন্তু আমাদের গ্রামটায় সে অর্থে ঝুট ঝামেলা ছিল না। এখানকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। ভোটের আঁচ আছে। কিন্তু তা নিয়ে রাজনৈতিক গন্ডগোল নেই। ফলে কারওর প্রচারে সমস্যা নেই।’

[আরও পড়ুন: ভোট দেবে কিনা ঠিক করেনি শহিদ বাবলু সাঁতরার পরিবার]

সুদীপের বাড়িতে দুটো ঘর। কয়েক শতকের ছোট্ট বাড়িটার উঠোনেই রয়েছে ইটের স্তূপ, লোহা-লক্কর, বালি, সিমেন্ট। সুদীপের শহিদ হওয়ার পর গ্রামের মানুষ তার ছবি দেওয়া ফেস্টুন টাঙিয়ে ছিল। মিস্ত্রি কাজ করায় সেই ফেস্টুন ওঁর ঘরে জায়গা পেয়েছে। ও ঘরে কেউ থাকে না। পাছে মনে পড়ে যায়। তবু মন পিছু ছাড়ে না। বাড়িতে ওর হাত দেওয়া নির্মাণ কাজ এখনও চলছে। সুদীপ এই সময় স্নান করত, এই খাবার ভালবাসত, বিয়ে হওয়ার কথা চলছিল থেকে দুপুরে ফোন করত। সুদীপের বোনের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম সারাদিন সুদীপ অবয়বের হাজারো কথা মনে পড়া নিয়েই মমতাদেবী মাঝে মাঝেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন। প্রতিবেশীরা আসতেই দ্রুত চোখ মুছে ফেলেন। তারা অভয় দেন -‘দিদি শক্ত হতে হবে’। মায়ের মন মানে না। রান্না করতে করতে কাঁদে। কারওর গলা পেলেই আঁচল দিয়ে চোখ মোছে। কদিন ধরে শরীর ভাল নেই। জ্বর হয়েছে শহিদের মায়ের।

এবার ভোট দিতে যাবেন? ১১৮ নং বুথের জিএসএফ স্কুলের ভোটার কথাটা শুনে থমকে যান। জড়তা গলায় মমতাদেবী বলেন, ‘ভোট দিতে যাব। ভোট না দিলে হবে।’ ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ছেলেই আমার চলে গেল! আর কী?’ শহিদের বাবা বছর সাতান্নর সন্ন্যাসী বিশ্বাসের কাজে আর মন নেই। মাঠে আগের মতো যান না। তিনি বলেন, ‘ছেলেকে ফিরে পাব না। সবাই আমার সমান। সরকার যা করার করুক। আমরা ভোট দেব।’ মাকে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সুদীপের বোন ঝুম্পার চোখেও জল। পাশের গ্রাম চকবিহারীতে ওর শ্বশুরবাড়ি। ছোট্ট মেয়েকে, স্বামীকে নিয়ে মা বাবাকে দেখতে অনেকটা সময় বাপের বাড়িতে কাটায়। চকবিহারীর ভোটার ঝুম্পা বলেন, ‘প্রতিশোধ না নিক। আমাদের কর্তব্য করতেই হবে। দাদা দেশের সৈনিক হিসেবে কাজ করেছে। আমরাও কর্তব্য পালন করব। তাই ভোট দেব।’ চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে আসছে। ঝুম্পা মুছে নিয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, ‘পুলওয়ামার পর কত আক্রমণ হল। এরকম কী চলতেই থাকবে? এমন স্টেপ নিতে হবে যাতে জওয়ানদের দিকে শত্রুরা তাকাতে ভয় পায়।’ বাড়ি থেকে বেরনোর সময় শহিদের ঘর থেকে ধূপের মিষ্টি গন্ধটা ধক করে এল।

[আরও পড়ুন: কাঁটাতারের গেরোয় আটকে উন্নয়ন, ভোটে নিরুত্তাপ হিলি সীমান্ত]

The post ভোট না দিলে হবে? গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হতে চায় শহিদ সুদীপ বিশ্বাসের পরিবার appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement