গৌতম ব্রহ্ম: ওষুধ ছাড়াই এইডস (AIDS)-মুক্তি! রূপকথার মতো শোনালেও এটাই সত্যি! শুধুমাত্র রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জোরেই মারণ রোগকে শরীর থেকে নিকেশ করে দিলেন এক এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি। যা নতুন আশার আলো দেখিয়েছে বিশ্বকে। অতিবিরল এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছে আমেরিকা। ‘অ্যানালস অফ ইন্টারনাল মেডিসিন’ পত্রিকায় ওই ঘটনাটি প্রকাশিত হয়েছে।
এইডস ভাইরাস অত্যন্ত চতুর। মানবদেহে প্রবেশের পর জিনোমে নিজের রিজার্ভার তৈরি করে ডালপালা মেলতে থাকে। অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এই রিজার্ভার ধ্বংস করা যায় না। ফলে বারবার অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল খেতে হয় রোগীকে। কিন্তু এক্ষেত্রে রোগী অসাধ্যসাধন করেছে।
[আরও পড়ুন: আরও ক্ষুধার্থ ‘ড্রাগন’, ডোকলামের কাছে ভুটানের জমি দখল করে গ্রাম বানিয়েছে চিন]
নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জোরেই দুর্ধর্ষ অনুজীবকে কুপোকাত করেছেন এক আর্জেন্টাইন মহিলা। জার্নাল উদ্ধৃত করে ভাইরোলজিস্টরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে আর্জেন্টিনার অ্যাসপারাঞ্জার ওই বাসিন্দার শরীরে এলাইজা ও সেরোলজি পরীক্ষায় এইচআইভির হদিশ মেলে। ধারাবাহিকভাবে ওই রোগীর জিনোম সিকোয়েন্সিং ও সেরোলজি পরীক্ষা করা হয়। জানা গিয়েছে, রোগ ধরা পড়ার প্রথম ছ’মাস ওই মহিলা ওষুধ খেয়েছিলেন। তারপর বন্ধ করে দেন। ২০১৭ সালে মহিলার রিপোর্ট দেখে চমকে যান প্যাথোলজিস্টরা। শরীর থেকে বেমালুম উধাও ভাইরাসের রিজার্ভার। প্রায় দেড় লক্ষ মিলিয়ন রক্তকোষ বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছন বিজ্ঞানীরা।
কলকাতার ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের পর্যবেক্ষণ, এই ঘটনায় প্রমাণিত, নিজস্ব শারীরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কেউ বেশ উন্নত ও বেনজির। এইডস ভাইরাস নিজেদের জিনোম লিম্ফোসাইট ও ম্যাক্রোফাজ কোষের জিনোমে প্রবেশ করিয়ে বংশবিস্তার করে চলে। এই আরএনএ ভাইরাসকে শায়েস্তা করা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাছে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।
[আরও পড়ুন: ফিলিপিন্সের নৌকায় হামলা চিনা উপকূলরক্ষী বাহিনীর, দক্ষিণ চিন সাগরে তুঙ্গে উত্তেজনা]
তবে টি-সাইটোটক্সিক কোষ ও ন্যাচারাল কিলার সেলকে হাতিয়ার করে এইডস ভাইরাসকে আক্রান্ত কোষ সমেত নিকেশ করতে পারে কারও কারও ইমিউন সিস্টেম। এই ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে থাকার সম্ভাবনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা। এই ব্যাপারে গবেষকরা নিশ্চিত হলে এইডস ভাইরাস চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত হবে। সেলথেরাপি করিয়ে রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে বধ করা যাবে এইডসকে। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিরেট্রোভাইরালের সঙ্গে কদর বাড়বে ইমিনোমডিউলেটরের।