সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাহসা আমিনির খুনের পর থেকেই আগুন জ্বলছে ইরানে। ‘নীতি পুলিশে’র বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন তরুণীরা। হিজাব পুড়িয়ে, চুল কেটে ইসলামের নামে মহিলাদের শিকলবন্দি করার প্রতিবাদ করছেন তাঁরা। প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন পুরুষরাও। এহেন সময়ে ইরান সরকারের আজব দাবি, ‘পুলিশের মারে নয়, রোগে মৃত্যু হয়েছে মাহসা আমিনির’।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির প্রশাসন দাবি করেছে, রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মাহসা আমিনির। এর সঙ্গে পুলিশি অত্যাচারের কোনও সম্পর্ক। শুক্রবার ওই কুর্দ তরুণীর মৃত্যু নিয়ে এক বিবৃতি জারি করেছে ইরানের (Iran) ফরেনসিক বিভাগ। সেখানে বলা হয়, “মাথায় বা শরীরের কোনও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাতের ফলে মাহসা আমিনির মৃত্যু হয়নি। আট বছর বয়সে ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার জন্য তাঁর একটি অস্ত্রোপচার হয়। সেই সংক্রান্ত অসুস্থতার দরুনই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: গোপনে পরমাণু পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিমের কোরিয়া! আশঙ্কা আমেরিকার]
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, মাহসার মৃত্যুর পর হিজাব বিরোধী আন্দোলনে বেশ কয়েকজন তরুণী নিহত হয়েছেন। সরকারি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু নিহতদের পরিবারকে জোর করে মিথ্যা বলতে বাধ্য করছে প্রশাসন। এভাবেই নিজের দায় ঝেড়ে ফেলছে সরকার। রয়টার্স সূত্রে খবর, সরকারি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে ১৬ বছরের কিশোরী নিকা শাহকারামি। তার মা নাসরিন শাহকারামির বলেন, “নিকাকে খুন করেছে সরকারি বাহিনী। আমি তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখেছি।” সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখ তেহরানে হিজাব বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় নিকা।
উল্লেখ্য, ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নীতি পুলিশীর মারে মৃত্যু হয় তরুণী মাহসা আমিনির। তারপর থেকেই দেশজুড়ে চলছে প্রতিবাদী মিছিল। স্বৈরশাসকের বিরোধিতায় ইটালির বুকে তৈরি হওয়া ‘বেলা চাও’ গানটি গেয়ে ইরানের (Iran) রাস্তায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন আরব দুনিয়ার মেয়েরা। হিজাব বিরোধী (Anti-Hijab) সেই আন্দোলনে শামিল পুরুষদের একাংশও। তাঁদের কণ্ঠেও ‘বেলা চাও’। এহেন প্রতিবাদের ভিডিও নিয়ে এখন নেটদুনিয়ায় জোর চর্চা।
এদিকে, বেকায়দায় পড়লেও কিন্তু অবস্থান বদলে নারাজ ইরানের সরকার। তেহরানের দাবি, এই বিক্ষোভে আসলে ষড়যন্ত্র এতে হাত রয়েছে আমেরিকার। একইসঙ্গে সরকারের আরও দাবি, এই আন্দোলনকে মদত দিচ্ছে ‘কোমলা’ বলে ইরানের একটি বামপন্থী সংগঠন এবং বেশ কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী। ইতিমধ্যেই ইরানের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশ থেকে একাধিক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর।