সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের দক্ষিণ গাজার শহর রাফায় 'অগ্নিবর্ষণ' করল ইজরায়েল! এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৩ জন। সোমবার এমনটাই জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রক। তবে হামাসের দাবি মৃতের সংখ্যা ১৫ ছাড়িয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে প্যালেস্তিনীয়দের ‘শেষ আশ্রয়’ রাফায় ঢুকে পড়বে ইজরায়েলি ফৌজ। হামাস জঙ্গিদের সমূলে বিনাশ করতে পুরোদমে হামলা শুরু করবেন জওয়ানরা। যার পরিণতি হবে ভয়ংকর। এখন রাফার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার প্রহর গুনছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
রয়টার্স সূত্রে খবর, এদিন রাফার (Rafah) তিনটি বাড়িতে আছড়ে পড়েছিল ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর বোমা। অন্তত ১৩ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এদিকে, উত্তর গাজার দুটি বাড়িতেও আঘাত হানে ইজরায়েলের বিমানবাহিনী। গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের খবর অনুযায়ী, সেখানেও বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। গত মাস তিনেক ধরে মিশর সীমান্তবর্তী রাফায় আক্রমণ তীব্র করেছে তেল আভিভ। ঘনঘন সেখানে বোমাবর্ষণ করছে ইজরায়েলি ফৌজ।
উল্লেখ্য, সাত মাস পেরিয়ে গিয়েছে। হামাস নিধনে এখনও গাজায় আক্রমণ শানাচ্ছে ইজরায়েলি ফৌজ। আন্তর্জাতিক মহলের চাপ উপেক্ষা করে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। লক্ষ্য একটাই। হামাস জঙ্গিদের সমূলে নিধন। আর তার জন্য রাফায় ঢুকে অভিযান শুরু করতেই হবে ইজরায়েলকে। এবার নাকি তারই সময় এসে গিয়েছে। তাই রাফায় আক্রমণের ধার তীব্র করেছে ইজরায়েলি সেনা।
[আরও পড়ুন: ফের অগ্নিগর্ভ মধ্যপ্রাচ্য, গুলি করে মার্কিন ড্রোন ধ্বংস হাউথিদের]
দিন চারেক আগেই টাইমস অফ ইজরায়েলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, “আমরা সমস্ত জরুরি প্রস্তুতি সেরে ফেলেছি। সরকার আমাদের নির্দেশ দিলেই রাফায় ঢুকে হামলা শুরু করবে বাহিনী।” কিন্তু মিশর সীমান্তবর্তী এই শহরের নিরীহ প্যালেস্তিনীয়দের কী হবে? তেল আভিভের এই পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা। রাফার নিরীহ মানুষদের কথা ভেবে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকার আর্জি জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
জানা গিয়েছে, রাফার মানুষদের জন্য ৪০ হাজার তাঁবুর ব্যবস্থা করেছে ইজরায়েলের সরকার। এই প্যালেস্তিনীয়দের সরিয়ে নিয়ে যেতেও প্রস্তুতি নিচ্ছে সেনা। রয়টার্স সূত্রে খবর, এর জন্য ইজরায়েলের ওয়ার ক্যাবিনেটে জোরদার আলোচনা চলছে। অনুমোদন পেলেই আগামী এক মাসের মধ্যে তাঁদের সরিয়ে নেওয়া হবে। রাফায় ঢুকে অভিযান শুরু করা নিয়ে এর আগে বহুবার ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে আমেরিকা। গোটা রাফাজুড়ে হামলা না চালিয়ে অন্য পথে হামাস জঙ্গিদের নিকেশ করার পথ খুঁজতে বলেছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু কোনও কথাতেই কর্ণপাত করেননি নেতানিয়াহু।
এদিকে, রাফায় ইজরায়েলি সেনার অভিযান নিয়ে নেতানিয়াহুর প্রশাসনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে মিশর। কায়রো সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রাফায় হামলা শুরু হলে কোনও প্যালেস্তিনীয়কে সীমান্ত পেরিয়ে মিশরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, ইজরায়েলের এই অভিযানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। প্রাণ হারাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ। রাফাকে সম্পূর্ণ ধবংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তেল আভিভ। এর ফল ভুগতে হবে ইজরায়লকে। এই মুহূর্তে রাফায় প্রায় ১৫ লক্ষ প্যালেস্তিনীয়র বাস রয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই শরণার্থী। ইজরায়েলের অভিযোগ, এই রাফা শহরেই নতুন করে ঘাঁটি গাড়ছে জেহাদিরা। এখান থেকেই তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এখানে লুকিয়ে রয়েছে জঙ্গি সংগঠনটির মাথারাও। তাই হামাসকে পুরোপুরী শেষ করতে হলে এই শহরও তোলপাড় করতে হবে।