সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পেজার বিস্ফোরণে রক্তাক্ত হয় লেবানন। উচ্চপদস্থ আধিকারিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলের পকেটেই দুমদাম ফাটে এই ডিভাইস। সেদেশের জঙ্গি সংগঠন হেজবোল্লাকে টার্গেট করেই এই হামলা চালানো হয়েছে। যার নেপথ্যে ছিল ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ। এবার ওই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনেই হামাস-হেজবোল্লাকে ভয়ানক প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়ে তারা জানিয়েছে, 'আমাদের সঙ্গে লাগতে এসো না'।
গত ১৭ সেপ্টেবর পেজার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে লেবানন। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই পরের দিন নানা প্রান্তে দুমদাম ফাটতে থাকে ওয়াকি-টকি, টেলিফোন- সহ একাধিক ইলেকট্রনিক ডিভাইস। হেজবোল্লার সদস্য-সহ প্রাণ যায় ৩৯ জনের। আহতের সংখ্যা পেরিয়ে যায় ৪ হাজার। প্রথম থেকেই এই ঘটনায় মোসাদের দিকে আঙুল তুলছিল লেবানন, ইরান। তারপর ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়ে দেন, তাঁর নির্দেশেই তৈরি করা হয়েছিল পেজার বিস্ফোরণের নকশা। এর পরই লেবাননে হেজবোল্লার সঙ্গে রক্তক্ষয়ী লড়াই শুরু হয় ইজয়ারেলি ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ)। সোমবার এনিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেন মোসাদের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত দুই এজেন্ট। জানা গিয়েছে, তাঁরা ছিলেন এই অভিযানের মাথা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে সাক্ষাৎকারে মোসাদের প্রাক্তন এজেন্ট মাইকেল (নাম পরিবর্তিত) জানান, "গত কয়েক দশক ধরে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য হেজবোল্লাকে ওয়াকি-টকির জোগান দেওয়া হচ্ছিল। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশে হামলা করা হয়। ওয়াকি-টকি বুলেট, ক্ষেপণাস্ত্র বা মর্টারের মতো অস্ত্র। আমরা চাইছিলাম হেজবোল্লা দুর্বল বোধ করুক। কারণ বাস্তবে তো ওরা দুর্বলই। হেজবোল্লা ১৬ হাজার বিস্ফোরক ডিভাইস কিনেছিল। যা ওরা সেপ্টেম্বর মাসেই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করত।"
ডিভাইসগুলোয় বিস্ফোরক ভরে দেওয়ার বিষয়ে মাইকেল জানান, "ওয়াকি-টকি বিক্রেতাদের কাছে আমরা পরিচয় গোপন করেছিলাম। আমরা চড়া দামেই সেগুলো কিনেছিলাম যাতে হেজবোল্লার কোনও সন্দেহ না হয়। ওরা ওদের কাজের উচিত মূল্য পেয়েছে।" বলে রাখা ভালো, আলাস্কা থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মোসাদের জাল। কোথায় তারা নিঃশব্দে অভিযান চালাচ্ছে তা বোঝা যায় না। এদিন সেকথাই মেনে নিয়ে মাইকেল বলেন, "গোটা পৃথিবীই আমাদের রঙ্গমঞ্চ। যেখানে আমরা স্ক্রিপ্ট লিখি। আমরাই পরিচালক, আমরা অভিনেতা।" প্রসঙ্গত, হামাসের প্রাক্তন প্রধান ইসমাইল হানিয়েহর মৃত্যুর ৫ মাস পর দায় স্বীকার করেছে ইজরায়েল। ইরানের মাটিতে সেই গুপ্তহত্যার কথা স্বীকার করে তেল আভিভের হুঁশিয়ারি, যারাই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে মাথা তুলবে তাঁদের মাথা কেটে নেওয়া হবে।