সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বয়স বাড়ছে দেশের। তাই তিন সন্তান নীতিতে সিলমোহর দিয়েছে চিন (China)। এবার আর আইনের মুগুর নেমে আসার ভয় নেই। চাইলেই ‘হাম দো, হামারে তিন’ হতেই পারে। কিন্তু সরকারি ফরমান নিয়ে মোটেও আগ্রহ নেই চিনা মহিলাদের!
[আরও পড়ুন: লালফৌজের পাশে ‘যুদ্ধের দেবতা’, মার্কিন সেনাঘাঁটিতে অগ্নিবৃষ্টি সময়ের অপেক্ষা মাত্র!]
বেজিংয়ে সংবাদসংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বছর বাইশের স্নাতকোত্তর ছাত্রী ইয়ান জিয়াকি বলেন, “আমার পরিচিত বহু মহিলাই তৃতীয় সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা শুনলেই ক্ষেপে যাচ্ছেন। তাঁদের সামনে ভুলেও ওই কথা বলবেন না।” বেজিংয়ের বাসিন্দা তথা দুই সন্তানের বাবা ২৯ বছরের ইয়াং শেনগাই বলেন, “দেখুন আমাদের অত টাকা নেই। বাড়িতেও আরও একজনের জন্য বাড়তি জায়গা নেই। তাই আমরা তৃতীয় সন্তান চাই না। যখন আমাদের দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেয় তখন স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। একশো শতাংশের পরিবর্তে এখন দু’জনের মধ্যে সমস্ত কিছু পঞ্চাশ শতাংশ করে ভাগ করা হচ্ছে। তাই তৃতীয় সন্তান জন্ম দেওয়ার কোনও যুক্তি আমরা দেখছি না।” শি জিনপিং সরকারের তিন সন্তান নীতি নিয়ে ‘ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-ম্যাডিসন’-এর গবেষক ওয়াই ফুকশিয়ান বলেন, “দীর্ঘদিনের সরকারি নীতির ফলে একটি মাত্র সন্তান জন্ম দেওয়া বা নিঃসন্তান থাকায় চিনের সামাজিক প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” এছাড়া, ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিক্স’-এর মতে চিনা জনগণের মধ্যে প্রজননের হার প্রয়োজনের চাইতে কম।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই ‘সন্তান’ নীতি পরিবর্তনের কথা ভাবনাচিন্তা করছিল চিনের কমিউনিস্ট পার্টি। অবশেষে সোমবার চিনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো বৈঠকের পর ‘অচলায়তন’ ভাঙার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও। এদিনের বৈঠকে দেশে বাড়তে থাকা বার্ধক্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি এই সমস্যা মোকাবিলায় আরও একাধিক নীতি বদলেরও ইঙ্গিত মিলেছে। ১৯৭৯ সালে চিনে বিতর্কিত এক সন্তান নীতি চালু করা হয়। এর লক্ষ্য ছিল জন্মহার কমানো এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানো। দীর্ঘদিন ধরে কার্যত জোর করে এই নীতি মানতে বাধ্য করা হত। জোর করে গর্ভপাত-সহ একাধিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হত। অবশেষে ২০১৬ সালে এক সন্তান নীতি বাতিল করা হয়। বদলে দুই সন্তানের জন্মে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেই নীতিও পরিবর্তনের জন্য চাপ তৈরি হচ্ছিল। বিশেষ করে যেভাবে চিনের জনসংখ্যায় তরুণদের তুলনায় প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে তা নিয়ে বাড়ছিল চিন্তা।