সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। পরবর্তী নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ঘোষণাও করেছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এবার ট্রুডোর উত্তরসুরি কে হবে? এই তালিকায় এবার নাম লেখালেন সেদেশের ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাংসদ চন্দ্র আর্য। আজ শনিবার পার্লামেন্টে কন্নড় ভাষায় বক্তৃতার পর প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। গত বছর কানাডার হিন্দু মন্দিরে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে 'শিখস ফর জাস্টিসে'র প্রধান গুরুপতবন্ত সিং পান্নুনের রোষের মুখে পড়েন চন্দ্র। ভারতে ফিরে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে।
কর্নাটকের টুমকুরে জন্ম চন্দ্রের। সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। এরপর ধারওয়াড় থেকে এমবিএ করার পরে ভারতে চাকরিও করেছেন তিনি। ২০০৬ সালে পাকাপাকি ভাবে চলে যান কানাডায়। তারপর লিবারেল পার্টিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে নাম লেখান তিনি। কিন্তু 'ট্রুডো-বিরোধী' হিসাবেই কানাডার রাজনীতিতে পরিচিতি রয়েছে চন্দ্রের। কারণ ট্রুডোর খলিস্তানপ্রীতি কারও অজানা নয়। ২০২৩ সালে কানাডার মাটিতে খুন হন কুখ্যাত খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর। এই হত্যার ঘটনায় ভারতের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তোলেন তিনি। তারপর থেকেই দুদেশের সম্পর্ক তলানি ঠেকে।
কিন্তু ট্রুডোর দলের সাংসদ হয়েও বরাবর কানাডার মাটিতে হলুদ পতাকাধারীদের বাড়বাড়ন্তের বিরোধিতা করেছেন চন্দ্র আর্য। একাধিকবার চাঁচাছোলা ভাষায় খলিস্তানিদের আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ২০২৩ সালে কানাডার ব্রাম্পটনের রাস্তায় ট্যাবলো বের করে খলিস্তানিরা। দেহরক্ষীদের গুলিতে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর খুনের ঘটনা নিয়ে ট্যাবলোটি তৈরি করা হয়েছিল। যার কড়া নিন্দা জানান এই সাংসদ। এছাড়া গত বছর নিজ্জরের মৃত্যুবার্ষিকীতে সংসদে নীরবতা পালন করে ট্রুডো সরকার । যাতে আরও স্পষ্ট হয়ে যায় কানাডার খলিস্তান প্রেম। সেসময়ও সংসদ কক্ষে দাঁড়িয়েই ১৯৮৫ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার কণিষ্ক বিমানে জঙ্গি হামলা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বলেন, কানাডার মাটিতে ফের সেই অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত, খলিস্তান জঙ্গিদের সেই হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ৩২৯ জনের যাঁদের অধিকাংশই কানাডার বাসিন্দা ছিলেন।
পাশাপাশি গত বছর একের পর হিন্দু মন্দিরে হামলার ঘটনায় খলিস্তানিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন চন্দ্র আর্য। সাফ জানিয়েছিলেন, ভারতবিরোধিতা বরদাস্ত করবেন না। এবার তিনিই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে শামিল হয়েছেন। আজ মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, 'আমরা জাতিগতভাবে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। যা সমাধানের জন্য কঠিন পদক্ষেপের প্রয়োজন। আমাদের সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের সমৃদ্ধি সুরক্ষিত করার জন্য অবশ্যই সাহসী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য লড়াইয়ে নামছি।' ফলে বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী পদে চন্দ্রের মনোনয়ন জমা দেওয়া মোটেই ভালোভাবে নেয়নি খলিস্তানিরা। কারণ কোনওভাবে যদি চন্দ্র নির্বাচনে জিতে যান তাহলে তাদের দাপাদাপি কড়া হাতে দমন করবেন চন্দ্র। একথা ভালো জানে পান্নুনও। এদিকে, চন্দ্রের হাত ধরে ভারতের সঙ্গে কানাডার চিড় ধরা সম্পর্কও মেরামত হতে পারে।