সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জায়গা খালি করার হুমকির পরই রাফায় হামলা শুরু করেছিল ইজরায়েলি ফৌজ। এবার দক্ষিণ গাজার এই শহরে ঢুকে পড়ল ইজরায়েলের ট্যাঙ্কবাহিনী! ইতিমধ্যে রাফা বর্ডার ক্রসিংয়ের প্যালেস্তিনীয় অংশ দখল করে নিয়েছে তারা। সেখানে হামাসের ঘাঁটি নিশানা করে চলছে হামলা। কিন্তু এই মুহূর্তে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন রাফার প্যালেস্তিনীয়রা? এটাই যে তাঁদের ‘শেষ আশ্রয়’। ফলে মৃত্যুভয়ে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন রাফার নিরীহ মানুষরা। এই 'নরকযন্ত্রণা' থেকে মুক্তি দিতে আরব বিশ্বের হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানাচ্ছেন তাঁরা।
মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল হামাস। কিন্তু প্রয়োজনীয় দাবি মানা হয়নি বলে সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয় ইজরায়েল। রবিবার রাফার দুটি অঞ্চলের বাসিন্দাদের এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছিল ইজরায়েলি ফৌজ। তার পরই সেখানে হামলা চালায় তেল আভিভ। এবার মঙ্গলবার রাফায় প্রবেশ করেছে ইজরায়েলের ট্যাঙ্কবাহিনী। এই বিষয়ে মঙ্গলবার সকালে ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছে, 'আইডিএফ এই মুহূর্তে দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে হামলা চালাচ্ছে। পূর্ব রাফায় হামাস ডেরাগুলো নিশানা করে আক্রমণ শানানো হচ্ছে।'
গত কয়েকদিন ধরেই আশঙ্কা ছিল। যে কোনও মুহূর্তে প্যালেস্তিনীয়দের ‘শেষ আশ্রয়’ রাফায় (Rafah) ঢুকে পড়বে ইজরায়েলি ফৌজ। হামাস জঙ্গিদের সমূলে বিনাশ করতে পুরোদমে হামলা শুরু করবেন জওয়ানরা। যার পরিণতি হবে ভয়ংকর। তাই রাফার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলোও। মিশর সীমান্তবর্তী এই শহরের নিরীহ মানুষদের কথা ভেবে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকার আর্জি জানিয়েছিল আমেরিকাও। কিন্তু কোনও কথাতেই কর্ণপাত করেননি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এবার এই আশঙ্কাই সত্যি হল। রাফায় ঢুকল ইজরায়েলি ট্যাঙ্কবাহিনী। চলছে হামলাও। ফলে ফের সাধারণ মানুষের প্রাণহানি নিয়েই এখন গভীর উদ্বেগে রয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। কারণ এই মুহূর্তে রাফায় প্রায় ১৫ লক্ষ প্যালেস্তিনীয়র বাস রয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই শরণার্থী।
রয়টার্স সূত্রে খবর, রবিবার রাফার আল-শুকা এবং আল-সালামেরের বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে ক্যাম্পে চলে যাওয়ার কথা বলেন ইজরায়েলের জওয়ানরা। তার পরই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পরিবার নিয়ে ছোটাছুটি শুর করেন সেখানকার বাসিন্দারা। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সোমবার ওই দুটি জায়গায় হামলা চালায় ইজরায়েল। কিন্তু এই গোলাগুলির মাঝেই ভারী বর্ষণ পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। প্রবল বৃষ্টিপাতে ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছেন রাফায় আশ্রয় নেওয়া লক্ষ লক্ষ শরণার্থীরাও। তেমনই একজন আবু রায়েড রয়টার্সকে জানিয়েছেন, “ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আমরা জানি না পরিবার নিয়ে কোথায় যাব।” রাফার ভয়ানক পরিস্থিতি নিয়ে আরব দুনিয়ার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন এক ঘরছাড়া প্যালেস্তিনীয় আমিনাহ আদওয়ান। তাঁর কাতর আর্জি, “এটা সবচেয়ে বড় গণহত্যা। সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। আমি গোটা আরব বিশ্বের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিছু করুন। এই নরকযন্ত্রণা থেকে আমাদের মুক্তির ব্যবস্থা করুন।”
এদিকে, রাফায় ইজরায়েলি সেনার অভিযান নিয়ে নেতানিয়াহুর প্রশাসনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে মিশর। কায়রো সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রাফায় হামলা শুরু হলে কোনও প্যালেস্তিনীয়কে সীমান্ত পেরিয়ে মিশরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, ইজরায়েলের এই অভিযানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। প্রাণ হারাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ। রাফাকে সম্পূর্ণ ধবংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তেল আভিভ। এর ফল ভুগতে হবে ইজরায়লকে।