সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফুকুশিমা বিপর্যয়ের আতঙ্ক এখনও স্মৃতিতে গেঁথে রয়েছে। এখনও ১৪ বছর আগের সেই ঘটনার ভূত তাড়া করে বেড়ায় বহু জাপানবাসীকে! সেই আতঙ্কই আবার উসকে দিয়ে নিগাতার পরমাণু চুল্লি চালু করার সিদ্ধান্ত নিল জাপান সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন নিগাতার স্থানীয় বাসিন্দারা।
২০১১ সালের মার্চ। জাপানের তোহোকু এলাকার প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল থেকে বেশ কিছুটা দূরে তৈরি হওয়া ভূমিকম্পের কারণে সুনামি আছড়ে পড়েছিল ফুকুশিমায়। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল স্থানীয় তিনটি পরমাণু চুল্লি। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তেজস্ক্রিয় কণা। চের্নোবিল কাণ্ডের পর ফুকুশিমার ঘটনাই সবচেয়ে ভয়াবহ পরমাণু-বিপর্যয়। ওই ঘটনার পরেই সবক'টি অর্থাৎ ৫৪টি পরমাণু চুল্লিই বন্ধ করে দিয়েছিল জাপান সরকার। পরবর্তীকালে দেশে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে বেশ কয়েকটি চুল্লি চালুও করা হয়। এ বার চালু হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। মাস দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী পদে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন সানায়ে তাকাইচি। তারপরেই এই পরমাণু চুল্লিটি চালু করতে অনুমোদন দিল নিগাতার স্থানীয় প্রশাসন।
যদিও এই সিদ্ধান্তে সমর্থন নেই স্থানীয়দের। তাঁদের অভিযোগ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটসাঁট না করেই আবার চুল্লিটি চালু করা হচ্ছে। এর ফলে যে কোনও সময়েই বড়সড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। বছর বাহান্নোর আয়াকো ওগা বলছেন, "পরমাণু চুল্লিতে বিপর্যয় হল যে কী ঘটতে পারে, তা আমি নিজের চোখে দেখেছি। তাই আমরা মোটেই চাই না, এখানে আর পরমাণু চুল্লি চালু হোক।" আয়াকো ফুকুশিমারই বাসিন্দা ছিলেন। বিপর্যয়ের ঘটনার পর তিনি সপরিবার নিগাতায় চলে গিয়েছিলেন। এ বার সেখানেও পরমাণু চুল্লি চালু হতে চলেছে শুনে প্রৌঢ়ার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। তিনি বলেন, "ফুকুশিমার ঘটনার পর থেকেই নানা রকম মানসিক সমস্যায় ভুগছি! ফুকুশিমার ভূত এখনও তাড়া করে বেড়ায় আমাদের।"
গত অক্টোবরেই নিগাতায় একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, নিগাতার অন্তত ৬০ শতাংশ মানুষ চান না, সেখানে পরমাণু চুল্লি চালু হোক। শুধু তা-ই নয়, প্রায় ৭০ শতাংশ বাসিন্দা জানিয়েছেন, পরমাণু চুল্লিটি নতুন করে চালু করার দায়িত্ব যে সংস্থার হাতে, সেই টোকিও ইলেক্ট্রনিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো) কাজের প্রতি তাঁদের কোনও আস্থা নেই।
যদিও টেপকোর বক্তব্য, তারা ফুকুশিমার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছে। এ বার সব দিক খতিয়ে দেখে, সমস্ত যন্ত্রপাতির আধুনিকীকরণ ঘটিয়েই পরমাণু চুল্লিটি আবার খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সুনামির প্রভাব ঠেকাতে নতুন করে সমুদ্রপ্রাচীর বসানো হয়েছে। পরমাণু কেন্দ্রে যাতে কোনও ভাবে জল প্রবেশ করতে না পারে, তা মাথায় রেখে লাগানো হয়েছে আধুনিক দরজাও। পাশাপাশি কোনও পরিস্থিতিতেই যাতে তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য পরমাণুকেন্দ্রের ছাঁকনি ব্যবস্থাও উন্নত করা হয়েছে।
কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট সাতটি চুল্লি রয়েছে। তার মধ্যে আপাতত একটি চুল্লি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান সরকার। আগামী বছর ২০ জানুয়ারি থেকে তা চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত অক্টোবর মাসেই ওই চুল্লির নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে গিয়েছিল টেপকোর প্রতিনিধি দল। তারপরেই চুল্লিটি পুনরায় চালু করতে সবুজ সংকেত দিয়েছে ওই সংস্থা।
ফুকুশিমার ঘটনার পরেই জ্বালানি সংকট দেখা গিয়েছিল জাপানে। চাহিদা মেটাতে তার পর থেকে জ্বালানি কেনা শুরু সরকার। তার জন্য প্রতি বছর প্রচুর টাকা সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হয়। জ্বালানির ব্যয়ভার কমাতেই বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা পরমাণু চুল্লিগুলি একে একে চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে তাকাইচি প্রশাসন। পাশাপাশিই, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশে কার্বন নিঃসরণ পুরোপুরি কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। সে কারণেও আবার পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে চাইছে তারা।
