সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২৮ অক্টোবরের মধ্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে জাস্টিন ট্রুডোকে! এই 'ডেডলাইন' বেঁধে দিয়েছেন ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টির সাংসদরাই। মনে করা হচ্ছে, ভারত-বিদ্বেষী মনোভাবের জন্যই গদি হারানোর মতো বড় মূল্য চোকাতে হতে পারে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, আগামী চার দিনের মধ্যেই কি তাহলে রাজনৈতিক বদল ঘটতে চলেছে কানাডায়? গোটা ঘটনাপ্রবাহের উপর নজর রাখছে ভারতও।
আগামী বছর কানাডায় নির্বাচন। কিন্তু দুর্নীতি-সহ একাধিক কারণে ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টির উপর অসন্তুষ্ট সেদেশের নাগরিকরা। ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন ট্রুডো। গ্লোবাল নিউজের রিপোর্ট বলছে, বর্তমানে বিরোধী দলনেতা কনজারভেটিভ দলের পিয়ের পোয়লিভ্রকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাইছেন অধিকাংশ মানুষ। তাঁর পক্ষে রয়েছেন ৪০ শতাংশ মানুষ। রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে ট্রুডোকে সমর্থন করেন ৩০ শতাংশ। এছাড়াও বিভিন্ন ভোট সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ২৫ শতাংশ জনপ্রিয়তা হারিয়েছে লিবারেল পার্টি। তার মধ্যে ভারত বিরোধীতার সুর তুলে আরও বিপাকে পড়েছেন ট্রুডো। দিল্লির বিরুদ্ধে তাঁর মিথ্যাচার নিয়ে কানাডায় বিস্তর জলঘোলা হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা এপি সূত্রে খবর, বুধবার পার্লামেন্টের অধিবেশনের পর দলের সাংসদদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন ট্রুডো। সেখানেই তাঁকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদ ইস্তফা দিয়ে দেওয়ার জোর বলা হয়।
জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মোট ১৫৩ জন সাংসদ। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২৪ জনই সহমত হন যে, এবার লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত ট্রুডোর। পাশাপাশি আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকেও ইস্তফা দিয়ে দিতে বলেন তাঁরা। এনিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। বৈঠকের শেষে ম্লান হাসি হেসে বেরিয়ে আসেন ট্রুডো। এর পরই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, "লিবারেলরা সবসময়ই ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী।" প্রসঙ্গত, নির্বাচন জিতলে টানা চতুর্থবার কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কুরসিতে বসতেন। গত ১০০ বছরে কেউ টানা চারবার এই সাংবিধানিক পদে বসেননি। কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে এই রেকর্ড গড়ার দরজা বন্ধ হতে চলেছে ট্রুডোর কাছে।
উল্লেখ্য, খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের পর থেকে তলানিতে ঠেকেছে ভারত-কানাডা সম্পর্ক। নিজ্জরের খুন নিয়ে ভারতকে একের পর এক তোপ দেগেছেন ট্রুডো। দেশ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় কূটনীতিকদের। কিন্তু দিন কয়েক আগে ট্রুডো স্বীকার করে নেন, “আমাদের কাছে গোয়েন্দা সূত্রে খবর ছিল। ভারতের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত পোক্ত প্রমাণ আমরা পাইনি। সবটাই তদন্তের পর্যায় রয়েছে।” এর পরই কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচার নিয়ে সরব হয় দিল্লি। পালটা দিয়ে জানানো হয় যে, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন ট্রুডো।
এই আবহে ভারতের হয়ে মুখ খোলেন কানাডার এক সাংবাদিক ড্যানিয়েল বর্ডম্যান। ট্রুডোর মিথ্যাচারে ভারতেরই বড় জয় দেখছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি এও মনে করেন যে, এই ধরনের কাজকর্মেই নিজের পতন ডেকে আনছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। এবার বর্ডম্যানের এই কথাই যেন সত্যি হতে চলেছে। এছাড়া এই মুহূর্তে ট্রুডোর সরকার সংখ্যালঘু। সাংসদ জগমিত সিংয়ের নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গত সেপ্টেম্বর মাসে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। এর মধ্যে বেঁকে বসেছেন ট্রুডোর সাংসদরাই। ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবার ট্রুডো গদিচ্যুত হওয়া সময়ের অপেক্ষা।