সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কুখ্যাত খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের পর থেকে তলানিতে ঠেকেছে ভারত-কানাডা সম্পর্ক। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নানা মন্তব্য ও খলিস্তানপ্রীতির কারণে সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। এর মাঝেই কয়েকদিন আগে কানাডার এক মন্দিরে হিন্দু ভক্তদের উপর হামলা চালায় খলিস্তানি জঙ্গিরা। রীতিমত তাণ্ডব করে হলুদ পতাকাধারীরা। এই ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত হামলা’ বলে কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর পরই খলিস্তানিদের নিয়ে উলটো সুর শোনা গেল ট্রুডোর গলায়। কানাডায় ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে খলিস্তানিরা, সে কথা মেনে নিলেন তিনি।
বছরের নানা সময় কানাডায় শিখদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা যায় ট্রুডোকে। গত সোমবার তিনি গিয়েছিলেন কানাডা পার্লামেন্টে আয়োজিত দীপাবলি এবং শিখদের ‘বন্দি ছোড়’ উৎসবে। দীপাবলির শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ট্রুডোকে বলতে শোনা যায়, "এই দেশে হিংসা,অসহিষ্ণুতা,ভীতি প্রদর্শন ও বিভাজনের কোনও জায়গা নেই। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। আমরা সবসময় তাঁদের সংস্কৃতি মেনে চলতে উৎসাহিত করি। কানাডায় খলিস্তানিদের অনেক সমর্থক রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন না" তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গত রবিবার টরন্টোর কাছে ব্রাম্পটনের হিন্দু সভা মন্দিরে হামলা চালায় খলিস্তানিরা। যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঝড় ওঠে। এর ঠিক একদিনের মাথাতেই শিখদের অনুষ্ঠানে গিয়ে এই মন্তব্য করেন ট্রুডো।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মন্দিরে আসা পুণ্যার্থীদের বেধড়ক মারধর করছে হলুদ পতাকাধারী জঙ্গিরা। রেহাই পায়নি মহিলা ও শিশুরাও। মারধর করা হয় তাদেরও। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তারা হামলাকারীদের বাধা দেয়নি। মন্দির চত্বরে তাণ্ডব চালায় খলিস্তানি জঙ্গিরা। এই ঘটনায় কানাডার সরকারকে একহাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘কানাডার হিন্দু মন্দিরে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে আমি তার কড়া নিন্দা জানাচ্ছি। এই হামলার মাধ্যমে আমাদের কূটনীতিকদের ভয় দেখানো কাপুরুষোচিত পদক্ষেপ। এইভাবে ভারতের সংকল্পকে দুর্বল করে দেওয়া যাবে না। আমরা আশা করছি, দোষীদের শাস্তি দিতে কানাডার সরকার দ্রুত পদক্ষেপ করবে। আইনের শাসন কায়েম রাখবে।' কড়া নিন্দা জানান বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরও।
প্রসঙ্গত, আগামী বছর কানাডায় নির্বাচন। কিন্তু দুর্নীতি-সহ একাধিক কারণে ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টির উপর অসন্তুষ্ট সেদেশের নাগরিকরা। ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন ট্রুডো। মনে করা হচ্ছে, ভারত-বিদ্বেষী মনোভাবের জন্যই গদি হারানোর মতো বড় মূল্য চোকাতে হতে পারে তাঁকে। কারণ নিজ্জরের খুন নিয়ে ভারতকে একের পর এক তোপ দেগেছেন ট্রুডো। দেশ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় কূটনীতিকদের। কিন্তু সম্প্রতি ট্রুডো স্বীকার করে নেন, “আমাদের কাছে গোয়েন্দা সূত্রে খবর ছিল। ভারতের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত পোক্ত প্রমাণ আমরা পাইনি। সবটাই তদন্তের পর্যায় রয়েছে।” এর পরই কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচার নিয়ে সরব হয় দিল্লি। পালটা দিয়ে জানানো হয় যে, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন ট্রুডো। আর মিথ্যাচারই নির্বাচনের আগে বিপাকে ফেলছে তাঁকে। বিশ্লেষকদের মতে, হিন্দু মন্দিরে হামলার ঘটনায় বিতর্ক এড়াতে সুর নরম করেছেন ট্রুডো।