সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয় চারদিক। কিন্তু তালিবান শাসনে এই শিক্ষার আলো থেকেই বঞ্চিত আফগানিস্তানের হাজার হাজার পড়ুয়া। তবু জেহাদিদের বন্দুকের সামনে ভয় না পেয়ে অদম্য ইচ্ছার জোরে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সেদেশের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রতিনিয়তই তাদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিকূল পরিস্থিতির। এদিক ওদিক তাঁবু খাটিয়ে অস্থায়ীভাবে লেখাপড়া করতে হচ্ছে তাদের।
বছর দুয়েক আগে কাবুলিওয়ালার দেশের দখল নেয় তালিবানরা। সন্ত্রাসবাদীদের দখলদারির আগে থেকেই অবশ্য দারিদ্রে ডুবে ছিল আফগানিস্তান। সেখানকার মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের উপর মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন। যেখানে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সংস্থান করতেই নাজেহাল অবস্থা হয় আফগানদের সেখানে পড়াশোনার খরচ চালানো বিলাসিতার সমান। কিন্তু তালিবান নতুন করে আফগানভূমের দখল নেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এক রিপোর্ট মোতাবেক আফগানিস্তানের (Afghanistan) গজনি প্রদেশের আজরিস্তান জেলায় স্কুলের সংখ্যা ১৩। কিন্তু সেগুলি নামেই স্কুল। কোনও প্রতিষ্ঠানে নয়, তাঁবু খাটিয়ে অস্থায়ীভাবে শিক্ষাদান করা হয় পড়ুয়াদের।
[আরও পড়ুন: বেজিংয়ে জাপানের দূতাবাসে হামলা, ফুকুশিমার আঁচে ফুটছে চিন]
স্বাভাবিক ভাবেই এমন পরিস্থিতি মানতে নারাজ আজরিস্তানের এক স্কুলের প্রিন্সিপাল। তিনি বলেছেন, “স্কুলের কোনও পরিকাঠামোই নেই এখানে। অভাব রয়েছে বই, খাতাপত্রেরও। আমাদের স্কুলে ৬০০ জন পড়ুয়া রয়েছে। চার-পাঁচটা তাঁবুতে কষ্ট করে কোনওরকমে ক্লাস করে তারা। বর্ষায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। তখন আমাদের অন্য জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে ক্লাস করাতে হয়। কেউ সমস্যা সমাধানে কোনও পদক্ষেপ করেনি।”
কিন্তু এত হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। তাদের কথায়, “আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি আমাদের জন্য যেন পাকাপাকি কোনও জায়গার ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের পর্যাপ্ত বই, খাতা দেওয়া হয়। সব সমস্যা সমাধানে যেন পদক্ষেপ করা হয়।”
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় আমেরিকা। তারপর থেকেই তালিবানি শাসনে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে নিরীহ নাগরিকদের। জেহাদিদের জমানায় আরও তলানিতে ঠেকেছে আফগানিস্তানের জীবনযাত্রা। অথচ ক্ষমতা দখলের পর তারা আশ্বাস দিয়েছিল, এটা তালিবান ২.০। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই আশ্বাসের কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি। উলটে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে কর্মক্ষেত্র অরাজকতা বেড়েছে সর্বত্র। তবুও এই প্রতিকূলতার মধ্যেই তাঁবু খাটিয়েই শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন শিক্ষকরা।