সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ফের একবার আমেরিকার মসনদে বসতে চলেছেন তিনি। মার্কিন আইনসভাতেও জয়জয়কার রিপাবলিকানদের। হাইভোল্টেজ এই ভোটে ট্রাম্পের কাছে ধরাশয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। নিজের পরাজয় মেনে নিয়েছেন তিনি। তবে লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে নারাজ ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নেত্রী।
৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত দিন ছিল। গতকাল সকাল থেকেই শুরু হয় ভোটগণনা। কমলাকে পিছনে ফেলে দৌড়াতে শুরু করে ট্রাম্পের বিজয়রথ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন এবারের মতো অধরাই রইল কমলার। পরাজয় স্বীকার করে ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা দেন তিনি। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বলেন, "আমি নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করছি। ভোটের ফলাফল মেনে নিচ্ছি। কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান ছাড়ব না। সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার জন্য, সুযোগের জন্য, মর্যাদার জন্য এই লড়াই জারি থাকবে। এই নির্বাচনে আমরা খুব ভালো লড়াই করেছি। জানি অনেকেই ভাবছেন যে আমরা অন্ধকারে ডুবে গিয়েছি। কিন্তু না। আমি এই বলেই শেষ করব, গভীর অন্ধকারের তারা জ্বলজ্বল করে।"
তবে হবু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি কমলা। ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি বলেন, "নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা। আমি আমার টিমকে নির্দেশ দিয়েছি, ক্ষমতার হস্তান্তর যেন সুষ্ঠুভাবে হয়। আগামী দিনে মানুষের স্বার্থে কাজ করতে ও সরকার চালাতে আমরা তাঁকে সব রকমভাবে সাহায্য করব। সব কিছু যেন শান্তিপূর্ণভাবে হয়।" ফলে কমলা বুঝিয়ে দেন জনতার রায় বা ভোটের ফলাফল মেনে নিলেও ঘুরে দাঁড়াবেন তিনি। ময়দান থেকে সরে আসবে না। নির্বাচনের চূড়ান্ত দিন আসার আগে নানা ভোটসমীক্ষায় ট্রাম্পের থেকে এগিয়ে ছিলেন কমলা। কিন্তু ভোটগণনা শুরু হতেই সমস্ত কিছু উলটে এগিয়ে যান ট্রাম্প। ৭টি সুইং স্টেটেও জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর মোতাবেক ৫৩৮ আসন সংখ্যার মধ্যে ট্রাম্পের ঝুলিতে পড়েছে ২৯৫টি ভোট। অর্থাৎ ২৭০-এর ম্যাজিক ফিগার পার করে ফেলেছেন তিনি। কমলা পেয়েছেন ২২৬টি ভোট। এখনও কয়েকটি আসনে ভোটগণনা চলছে। কিন্তু আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট যে ট্রাম্পই তা নিশ্চিত।
বিশ্লেষকদের মতে, কমলার হারের পিছনে মূলত তিনটি কারণ হয়েছে। অর্থনীতি, অভিবাসন নীতি ও ইজরায়েলের প্রতি সমর্থন। বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতিতে জেরবার আমেরিকা। যা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। তার উপর দুবছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে বিপুল অর্থের সাহায্য। এই নীতি নিয়েও ওয়াশিংটনের অন্দরে মতবিরোধ বাড়ছিল। পাশাপাশি গত কয়েকবছরে মার্কিন মুলুকে বিদেশিদের সংখ্যা রেকর্ড হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব অর্থনীতি থেকে কর্মক্ষেত্রেও পড়েছে। এই পরাজয়ের পিছনে আর একটি বড় কারণ গাজাযুদ্ধে ইজরায়েলকে সমর্থন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমেরিকার মুসলিম ভোটবাক্সে। এবার এই একই বিষয়ে ট্রাম্পের নীতি কী হয় সেদিকেই নজর থাকবে কূটনৈতিক মহলের।