সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফ্রান্স সফরে গিয়ে সাভারকর স্মরণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। বুধবার ফ্রান্সের মার্সেইতে গিয়ে সাভারকরের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীকে। একইসঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই মার্সেইয়ের ভূমিকা মনে করালেন তিনি। মনে করালেন, কীভাবে ইংরেজদের হাত থেকে পালিয়ে এই বন্দর শহরে উঠেছিলেন সাভারকর। ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে যাকে 'দ্য গ্রেট এস্কেপ' বলে দাবি করেন অনেকে।
বুধবার প্যারিসের কর্মসূচির পর দক্ষিণ ফ্রান্সের বিখ্যাত মার্সেই যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। মার্সেই-এর মাটিতে পা রেখে এক্স হ্যান্ডেলে বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি লেখেন, 'ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মার্সেইর গুরুত্ব অপরিসীম। এই শহর থেকেই বীর সাভারকর মুক্তির সাহসী পদক্ষেপ করেছিলেন। আমি সেই সমস্ত ফরাসি নাগরিক এবং মার্সেই শহরকে ধন্যবাদ জানাই সেই সময় সাভারকরের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। বীর সাভারকরের সাহসিকতা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে।'
কী এই 'দ্য গ্রেট এস্কেপ'?
১৯১০ সালে নাসিক ষড়যন্ত্র মামলায় লন্ডন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে। ব্রিটিশ জাহাজ এইচএমএস মোরিয়ায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ভারতে। মাঝপথেই জাহাজের পোর্টহোল দিয়ে পালিয়ে মার্সেই শহরে পৌঁছে যান সাভারকর। তাঁকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে তীব্র কূটনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয় প্যারিস ও লন্ডনের মধ্যে। অবশেষে চাপের মুখে সাভারকরকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেয় ফ্রান্স।
ফ্রান্সের মাটিতে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ নজরে আসার পর মোদির প্রশংসা করেছে শিব সেনা (উদ্ধব)। দলের সাংসদ সঞ্জয় রাউত লেখেন, 'বীর সাভারকারকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা কোনওভাবেই উচিত নয়। যদি প্রধানমন্ত্রী ওখানে গিয়ে থাকেন তবে তা প্রশংসনীয় এতে কোনও ভুল নেই। আমাদের জন্য এটা গর্বের। বীর সাভারকর ছিলেন নির্ভীক। ওঁর বিচারধারা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে ঠিকই, উনি যে বড় মাপের স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন তাতে কোনও ভুল নেই।'
তবে প্রধানমন্ত্রী সাভারকরের প্রশংসা করলেও ভারতের ইতিহাসে সাভারকরকে নিয়ে বিতর্ক কম নেই। ভারতের মাটিতে তাঁকে হিন্দুত্বের রাজনীতির জনক বলে মনে করা হয়। আন্দামান থেকে ফিরে মহারাষ্ট্রর রত্নগিরি জেলে বসে ‘হিন্দুত্ব’ নামে একটি বই লেখেন সাভারকর- হিন্দু জাতীয়তাবাদের আকর গ্রন্থ ধরা হয় এটিকে। সাভারকরের তত্ত্ব থেকেই জন্ম নেয় ‘হিন্দুরাষ্ট্র’-র ধারণা। রাজনৈতিক মহলের দাবি, মুচলেকা দিয়ে সাভারকরের আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে চলে আসার বিতর্ক দূরে সরিয়ে রাখলেও তাঁর ‘রাজনৈতিক হিন্দুত্ব’-র জনক পরিচিতি কখনও অস্বীকার করা যায় না। তিনি যে বিজেপি-আরএসএসের তাত্ত্বিক গুরু, তা নিয়েও বিতর্কের অবকাশ নেই। কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক দলের নেতারা বারবার তোপ দেগেছেন সাভারকরের বিরুদ্ধে। এহেন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই পদক্ষেপ স্বাভাবিকভাবেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
